বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কর্তৃক আয়োজিত শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রতি বছরই বিপুল সংখ্যক প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন। তবে প্রিলিমিনারি ধাপেই বেশিরভাগ প্রার্থীর স্বপ্ন ভেঙে যায়। শিক্ষক নিবন্ধন প্রত্যাশীরা পরীক্ষার প্রস্তুতিতে দিনরাত এক করলেও একটি সাধারণ এবং মারাত্মক ভুলের কারণে অনেকেই সফল হতে পারেন না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় সবচেয়ে বড় ভুল হলো—নেগেটিভ মার্কিং সম্পর্কে অসচেতনতা বা অতিরিক্ত ঝুঁকি নিয়ে উত্তর দেওয়া।
নেগেটিভ মার্কিং: সফলতার পথে প্রধান বাধা
এনটিআরসিএ প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় মোট ১০০ নম্বরের এমসিকিউ (MCQ) পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে পাস নম্বর ৪০ হলেও, প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা হয়।
পরীক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, অংশগ্রহণকারীরা যে ভুলটি বারবার করেন, তা হলো—কম নিশ্চিত হয়েও বহু সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দাগানো। নেগেটিভ মার্কিং-এর এই ফাঁদে পড়েই বহু প্রার্থীর প্রাপ্ত নম্বর ৪০-এর নিচে নেমে যায়।
এক শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "৪০ নম্বর তুলতে হবে ভেবে কম জানা প্রশ্নেও উত্তর দিয়েছিলাম। পরে দেখলাম, ভুল উত্তরের জন্য এত নম্বর কাটা গেছে যে পাস করতে পারিনি। এটা আমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিল।"
অন্যান্য সাধারণ ভুল যা এড়ানো জরুরি:
নেগেটিভ মার্কিং-এর পাশাপাশি শিক্ষক নিবন্ধন প্রত্যাশীরা আরও কয়েকটি গুরুতর ভুল করে থাকেন:
১. সময় ব্যবস্থাপনার অভাব: প্রিলিমিনারি বা লিখিত, উভয় পরীক্ষাতেই সময়মতো সব প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারা। বিশেষত লিখিত পরীক্ষার জন্য নিয়মিত লেখার অভ্যাস না থাকা। ২. আবেদনপত্রে তথ্যগত ভুল: নাম, জন্মতারিখ বা শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্য ফরমে ভুলভাবে পূরণ করা। এই ভুল পরবর্তীতে নিবন্ধন সনদ বাতিল হওয়া বা ভাইভা বোর্ডে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। ৩. সিলেবাস না বোঝা: অনেক প্রার্থী কেবল বাজারের গাইড বই নির্ভর হয়ে পড়েন, কিন্তু এনটিআরসিএ নির্ধারিত পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস ও মানবণ্টন সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখেন না। ৪. লিখিত পরীক্ষায় প্রাসঙ্গিকতা হারানো: লিখিত পরীক্ষায় সরাসরি মূল বিষয়ের বদলে অপ্রাসঙ্গিক তথ্য দিয়ে উত্তর বড় করা।
বিশেষজ্ঞ পরামর্শ: ভুল এড়িয়ে সফলতার কৌশল
বিশেষজ্ঞরা শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় সফল হওয়ার জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন:
-
নেগেটিভ মার্কিং এড়িয়ে চলুন: কেবলমাত্র যে উত্তরটি সম্পর্কে আপনি শতভাগ নিশ্চিত, সেটিই দাগান। আন্দাজে উত্তর দেওয়া পরিহার করুন।
-
লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি: নিয়মিত লেখার অনুশীলন করুন। সময় ধরে প্রশ্নের উত্তর লেখার অভ্যাস করুন যাতে পরীক্ষায় সব প্রশ্নের উত্তর শেষ করা যায়।
-
তথ্য যাচাই: আবেদনপত্র পূরণ ও প্রবেশপত্র যাচাইয়ের সময় নিজের সব ব্যক্তিগত ও শিক্ষাগত তথ্য একাধিকবার মিলিয়ে নিন।
এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ এবং পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোরও উচিত প্রশ্নপত্র বিতরণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা, যাতে পরীক্ষার্থীদের কোনো ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে না হয়। তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সময় নেগেটিভ মার্কিং-এর ব্যাপারে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করাই প্রার্থীর জন্য সফলতার প্রধান চাবিকাঠি।