বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ আসছে, এবং এই দিনটি উদযাপনে ঢাকাসহ সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত শক্তিশালী করা হয়েছে। প্রতিবছরের মতো এবারও রাজধানী ঢাকা এবং সারা দেশে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। এদিকে, বিশাল এই আয়োজনকে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সজাগ নজরদারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ১৮ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, পহেলা বৈশাখের উৎসব সুষ্ঠুভাবে উদযাপনের জন্য ঢাকা মহানগরকে ২১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। এখানে নিরাপত্তার জন্য সাদা পোশাকসহ ইউনিফর্ম পরিহিত পুলিশ সদস্যরা মোতায়েন থাকবে। ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে, যেমন রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রবীন্দ্র সরোবর, এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পহেলা বৈশাখের আনন্দ শোভাযাত্রা ও অন্যান্য অনুষ্ঠানস্থলগুলোতে প্রবেশের আগে তল্লাশি ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া, অনুষ্ঠানস্থলে সিসি ক্যামেরাসহ স্থির এবং ভিডিও ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং করা হবে এবং ড্রোনের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারি চলবে।
প্রতিটি অনুষ্ঠানস্থলে নিরাপত্তা চেকপোস্ট
নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে, অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশের মুখে আর্চওয়ে এবং মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে তল্লাশি করা হবে। রমনা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো প্রধান এলাকাগুলোতে ব্যারিকেট থাকবে এবং ফুট পেট্রোলিং টিমগুলো সারা দিন নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যরা ইভটিজিং ও ছিনতাই রোধে কাজ করবে।
গোয়েন্দা নজরদারি ও সাইবার মনিটরিং
পুলিশ সদর দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, সারা দেশে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং সাইবার মনিটরিং চালু রাখা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো অপপ্রচার বা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা হলে তা দ্রুত রোধ করা হবে। এছাড়া, সাইবার পেট্রোলিংয়ের মাধ্যমে সাইবার ক্রাইম মোকাবিলা করা হবে এবং র্যাবও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছে।
র্যাবের টহল ও বিশেষ বাহিনীর প্রস্তুতি
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) জানায়, তাদের বাহিনী সারা দেশে মোটরসাইকেল পেট্রোল, গাড়ি পেট্রোল, চেকপোস্ট, অবজারভেশন টাওয়ার এবং গোয়েন্দা নজরদারি চালাবে। র্যাবের সদস্যরা ২৪৭টি পিকআপ টহল, ১২২টি মোটরসাইকেল টহলসহ মোট ৩৪৬টি টহল, এবং সাদা পোশাকে ৪১৩ জন সহ মোট ২,৪৪৯ জন সদস্য মোতায়েন করবে। র্যাবের স্পেশাল ফোর্সের কমান্ডো টিমও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকবে।
নিরাপত্তায় পূর্ণ প্রস্তুতি, ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, নববর্ষের উৎসব সুষ্ঠুভাবে উদযাপনের জন্য সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ১৮ হাজার পুলিশ সদস্য পহেলা বৈশাখে ঢাকা শহরজুড়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করবে। র্যাব, আর্মি ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা নিরাপত্তা কাজে সহযোগিতা করবে এবং যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক বিভাগও বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
পহেলা বৈশাখে দেশের শান্তিপূর্ণ উদযাপন আশা
এদিকে, ডিএমপি এবং র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা আশা করেন এবারের পহেলা বৈশাখ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্কতা, গোয়েন্দা নজরদারি, এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সকল নাগরিককে নিরাপদে উদযাপন করতে সহায়তা করা হবে।
পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষের উৎসব সবার জন্য আনন্দময় মুহূর্ত। তবে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৮ হাজার পুলিশ সদস্য, ড্রোন নজরদারি, এবং অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে যে, বাংলা বর্ষবরণ উৎসব সবাই নিরাপদভাবে উদযাপন করতে পারবেন।
এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার রোধে সাইবার পেট্রোলিংয়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে, যা ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। নিরাপত্তার এই ব্যাপক ব্যবস্থা সবার জন্য একটি আনন্দময় ও শান্তিপূর্ণ পহেলা বৈশাখের আশ্বাস দিচ্ছে।