সরকার এবং ভোজ্যতেল উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কয়েক দফা দর-কষাকষির পর অবশেষে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৮৯ টাকা নির্ধারণ করেছে ব্যবসায়ীরা। পূর্বে এই দাম ছিল ১৭৫ টাকা। ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন রোববার (১৩ এপ্রিল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নতুন দামের ঘোষণা দেয় এবং জানিয়েছে যে, ঘোষণার পর থেকেই এই নতুন দাম কার্যকর হয়েছে।
নতুন দাম কীভাবে নির্ধারিত হলো?
প্রকাশিত ঘোষণায় বলা হয়েছে, পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম আগের ৮৫২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯২২ টাকা করা হয়েছে। পাশাপাশি খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম প্রতি লিটার ১৬৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগে ছিল ১৫৭ টাকা।
এর আগে ৯ ডিসেম্বর সর্বশেষ বার সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল, যখন প্রতি লিটারের দাম ছিল ১৭৫ টাকা। এরপর দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ীরা পুনরায় মূল্যবৃদ্ধির দাবি করে আসছিলেন।
দাম বৃদ্ধির পেছনের কারণ
জানা গেছে, চলতি বছরের ২৭ মার্চ ঈদের আগে মিল মালিকেরা নতুন করে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেন। তারা বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৮ টাকা ও খোলা তেলের দাম ১৩ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। কারণ হিসেবে তারা আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি এবং দেশে শুল্ক কর সুবিধার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা উল্লেখ করেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, ১ এপ্রিল থেকে কর সুবিধার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় আমদানি ব্যয় বেড়েছে। ফলে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার প্রভাব পড়ে বাজারমূল্যে। এরপরেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে বসেন তারা।
দীর্ঘ আলোচনা ও দর-কষাকষি
ঈদের ছুটি শেষে সরকার ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে রবি, মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার দফায় দফায় বৈঠক হয়। এই বৈঠকগুলোতে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৯০ টাকার বেশি হবে কিনা, তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়। যদিও প্রথমদিকে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি, অবশেষে ১৮৯ টাকায় সম্মত হয় উভয় পক্ষ।
শুল্ক সুবিধা বাড়াতে সুপারিশ
ট্যারিফ কমিশন ইতিমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) কে একটি চিঠি দিয়ে ভোজ্যতেলের আমদানি পর্যায়ে শুল্ক কর ছাড়ের মেয়াদ ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। তবে এখনও এনবিআর চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
এই দাম বৃদ্ধি মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য এক প্রকার ধাক্কা। তারা মনে করছেন, ঈদের পরপরই এমন দাম বাড়ানো জনসাধারণের কষ্ট আরও বাড়িয়ে তুলবে। সরকারের উচিত বাজার মনিটরিং আরও জোরদার করা এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ তেল সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রাখা।