
সূদ হল এমন একটি অর্থনৈতিক ধারণা, যেখানে ঋণ প্রদানকারী ব্যক্তি ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেন। এটি এক ধরনের শোষণমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে পরিচিত এবং ইসলামে এটি হারাম (নিষিদ্ধ) হিসেবে বিবেচিত। সূদ যে শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি করে তা নয়, এটি সামাজিকভাবেও মানুষের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করে। ইসলামে অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের জন্য সূদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং এটি ইসলামী অর্থনীতি তথা সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সূদের হারাম হওয়ার কারণ
ইসলামে সূদ একটি অবিচার, শোষণ এবং অত্যাচারের প্রতীক। সূদের মাধ্যমে একজন ঋণদাতা ব্যক্তির হাতে অর্থের অতিরিক্ত পরিমাণ চলে আসে, যা পরবর্তীতে ঋণগ্রহীতার জীবনযাত্রার ওপর অশুভ প্রভাব ফেলে। অর্থনীতির এমন ব্যবস্থায় গরীব আরো গরীব হয়ে পড়ে এবং ধনী আরও ধনী হয়ে যায়। এটি একটি অবিচারপূর্ণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করে, যেখানে সাধারণ মানুষ শোষিত হয় এবং তাদের মৌলিক প্রয়োজন পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এতে কোনো ধরনের ন্যায়বিচার বা সামাজিক সমতা থাকে না।
কুরআনে সূদ সম্পর্কে নির্দেশনা
কুরআনে সূদের বিপক্ষে স্পষ্টভাবে বার্তা দেওয়া হয়েছে। সুরা আল-ব্যাকারাহর ২:২৭৫ আয়াতে বলা হয়েছে:
“যারা সূদ খায় তারা শুধু ওই ব্যক্তির মতো উঠবে, যে শয়তান দ্বারা পাগল হয়ে পড়েছে। এ কারণে যে তারা বলেছে, ‘যেহেতু ব্যবসা তো সূদের মতোই, তাই তা গ্রহণযোগ্য।’ অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সূদকে হারাম।”
এই আয়াতে সূদের খারাপ প্রভাব এবং এর সামাজিক ক্ষতির বিষয়ে সতর্কতা দেওয়া হয়েছে। ইসলামে ব্যবসার মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের মধ্যে সমতা এবং ন্যায়বিচার স্থাপন করা, যেখানে সূদের কোনো স্থান নেই।
সূদের সামাজিক প্রভাব
সূদের মাধ্যমে ঋণগ্রহীতার ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়, যা তার জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তোলে। এটি সামাজিক দিক থেকেও ক্ষতিকর, কারণ সূদগ্রস্ত ব্যক্তির জন্য তার পরিবার, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং অন্যান্য মৌলিক বিষয়গুলো নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। এর ফলে সমাজে আরও বেশি বৈষম্য তৈরি হয় এবং একদিকে গরীবরা আরও নিঃস্ব হয়ে পড়ে, অন্যদিকে ধনী আরো সমৃদ্ধি লাভ করে।
ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা: সূদের বিকল্প
ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সূদের সঙ্গে যুক্ত কোনো লেনদেন থেকে বিরত থাকে। ইসলামী অর্থনীতি অংশীদারি ভিত্তিক ব্যবস্থাকে সমর্থন করে, যেখানে দুটি পক্ষ লাভ এবং ক্ষতির ভিত্তিতে লেনদেন করে। এর মাধ্যমে শোষণ এবং একক মালিকানার প্রতিযোগিতা কমে আসে। ইসলামী ব্যাংকিং সিস্টেমেও মুদারাবা, মুশারাকা এবং ইjarah মত ব্যবস্থা রয়েছে, যা ব্যবসায়ীদের মধ্যে সহযোগিতা এবং পারস্পরিক লাভের পরিবেশ সৃষ্টি করে।
ইসলামী ব্যাংকিং এবং সূদের প্রতিস্থাপন
ইসলামী ব্যাংকিং সিস্টেম সুদমুক্ত ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এখানে কোনো ধরনের হারাম লেনদেন নেই, বরং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে লাভ-ক্ষতির ভাগাভাগি করা হয়। মুদারাবা এবং মুশারাকা মতো ব্যবস্থা ঋণগ্রহীতাকে এক ধরনের সহযোগিতা দেয়, যেখানে উভয় পক্ষ লাভবান হতে পারে এবং শোষণের কোনো সুযোগ থাকে না। এটি মানবাধিকার এবং সামাজিক ন্যায়ের সমর্থন করে।
ইসলামে সূদের বিরুদ্ধে স্পষ্টভাবে অবস্থান গ্রহণ করা হয়েছে। এটি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, বরং সামাজিক ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও বিপজ্জনক। ইসলামী অর্থনীতি প্রতিটি মুসলমানের জন্য একটি ন্যায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রস্তাব করে, যেখানে সূদের স্থান নেই এবং সেখানে সম্মানজনক, পারস্পরিক লাভজনক ব্যবসার মাধ্যমে সমাজে সমতা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।