ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে সাক্ষাৎকার দিতে শুরু করেছেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক রয়টার্স ও দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট এবং ফ্রান্সভিত্তিক এএফপি-কে দেওয়া এসব ভার্চুয়াল সাক্ষাৎকারে তিনি জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চাইতে স্পষ্টভাবে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
২৯ অক্টোবর, বুধবার (বাংলাদেশ সময়) একযোগে প্রকাশিত এসব সাক্ষাৎকারে তিনি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন:
-
ক্ষমা চাওয়া প্রসঙ্গে: সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন যে জুলাই অভ্যুত্থানের রক্তপাতের জন্য তিনি দায়ী নন। তাঁর বিরুদ্ধে যে বিচার কার্যক্রম চলছে, তাকে তিনি ‘লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করেন এবং নিহতদের জন্য সহানুভূতিশীল হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে রাজি হননি। তাঁর দাবি, সরকার উৎখাতের জন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা অস্থিরতা তৈরি করে চক্রান্ত করেছিল।
-
দেশে ফেরা ও নির্বাচন: রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে যদি আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং যেই সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তিনি দেশে ফিরবেন না। তিনি মনে করেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা শুধু অন্যায্যই নয়, আত্মঘাতীও বটে। তাঁর ধারণা, আসন্ন নির্বাচনে বেশিরভাগ আওয়ামী লীগ সমর্থকই ভোট দেবেন না।
-
আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব: তিনি ইঙ্গিত দেন যে ভবিষ্যতে সরকারে কিংবা বিরোধী দলে শেখ পরিবারের নেতৃত্ব দেওয়া অপরিহার্য নয়।
বিচারের মুখে শেখ হাসিনা: রায় ঘোষণার অপেক্ষা
জুলাই গণহত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা চলমান রয়েছে এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন শেষ হয়েছে। আগামী ১৩ নভেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার তারিখ ঠিক হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ফাঁসির রায় দিলেও তিনি বিস্মিত হবেন না বলেও মন্তব্য করেন। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের হিসাবে, জুলাই মাসের বিক্ষোভে এক হাজার ৪০০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছেন।
নয়াদিল্লির ভূমিকা ও পুনর্বাসনের অভিযোগ
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভারত শুধু শেখ হাসিনার নিরাপদ আশ্রয়ই নিশ্চিত করেনি, বরং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অস্থিতিশীল করার বিভিন্ন কৌশল বাস্তবায়ন করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
-
আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন: দিল্লি ও কলকাতায় আওয়ামী লীগকে দলীয় কার্যালয় খোলার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, লিফলেট ছাপিয়ে সেমিনার করার সুযোগ এবং হাসিনার কাছাকাছি থাকা অন্তত তিনজন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাও ভারতে নিরাপদ আশ্রয় পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
-
অর্থনৈতিক পদক্ষেপ: সংখ্যালঘু নির্যাতনের কার্ড খেলা এবং বাণিজ্যক্ষেত্রে বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে ক্রমেই কঠিন করে তোলার জন্য নয়াদিল্লি নানা বিদ্বেষমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের প্রতিক্রিয়া
শেখ হাসিনার এসব সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বুধবার তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, হাসিনার সাক্ষাৎকার প্রচারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তাঁর খুনের বিষয়ে উপস্থাপিত তথ্য-প্রমাণ, জাতিসংঘ এবং আল-জাজিরার প্রতিবেদনে তাঁর গুম-খুনের যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলো মাথায় রাখতে হবে।
এই পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শেখ হাসিনার এমন স্পষ্ট ও অনমনীয় বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনা ও উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।