২০২৫ সালে এসএসসি পরীক্ষার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেছে এবং অনুপস্থিতির হার বেড়েছে। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ভাওয়াল রাজবাড়ী উচ্চবিদ্যালয়ের মতো অনেক প্রতিষ্ঠানেই এ বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় কম। বিশেষ করে, করোনার প্রভাব, বাল্যবিবাহ, এবং সামাজিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না।
করোনার প্রভাব এবং শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া
২০২০ সালে যখন ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়েছিল, তখনই দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যায়। করোনার প্রভাবের কারণে বহু শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতে পারেনি এবং সেই সাথে অনেকেই অকালীনভাবে পরবর্তী শ্রেণিতে চলে গেছে। ফলে, এখন এসএসসি পরীক্ষায় অনেক শিক্ষার্থী প্রস্তুতি ছাড়াই অংশ নিতে সাহস পাচ্ছে না। এই পরিস্থিতি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে দীর্ঘমেয়াদীভাবে প্রভাবিত করেছে।
বাল্যবিবাহ এবং শিশুশ্রমের প্রভাব
অন্যদিকে, বাল্যবিবাহ এবং শিশুশ্রমের মতো সামাজিক সমস্যাও শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অনুপস্থিতির পেছনে অন্যতম কারণ। অনেক এলাকায়, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে, তরুণদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়ার পাশাপাশি অকাল বিবাহের জন্য তারা স্কুল ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। এসব সামাজিক সমস্যা মোকাবেলার জন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী নীতির এবং সরকারি উদ্যোগের।
শিক্ষকদের মতামত
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ভাওয়াল রাজবাড়ী উচ্চবিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, “গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই প্রথম পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। করোনার কারণে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত পড়াশোনা না করেই পরবর্তী শ্রেণিতে চলে গেছে, আর এখন পরীক্ষা দিতে তারা সাহস পাচ্ছে না।” তিনি আরও বলেন, “এছাড়া, অতিরিক্ত চাপ এবং প্রি-টেস্টে অখুশি হয়ে অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না।”
পরীক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি
এ বছর এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনেই ২৬ হাজার ৯২৮ পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল, এবং পরবর্তী দিনেও এই সংখ্যা বেড়েছে। গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় প্রথম দিনে ১৯ হাজার ৩৫৯ পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল, কিন্তু এ বছর অনুপস্থিতির হার প্রায় ২০% বেড়েছে। শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনার সময় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা কম হওয়ার পাশাপাশি পরীক্ষার প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়াও এই পরিস্থিতির অন্যতম কারণ।
পরীক্ষা বোর্ডের পরিসংখ্যান
২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় ৩৭১৫টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে বেশ কিছু কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার কম ছিল। শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার বলেছেন, “গতবার পাসের হার বেশি ছিল, যার কারণে এবারের পরীক্ষায় অনিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। তবে, অনুপস্থিতির সংখ্যা বাড়তে পারে, কারণ পরীক্ষা গ্রহণের নতুন বিধি এবং পরীক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি চাপ রয়েছে।”
সমাধানের দিকে
এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হলে, বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিত একটি সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া। গবেষণার মাধ্যমে প্রকৃত কারণ বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। একই সঙ্গে, শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করার জন্য সহায়ক নীতির গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে।