জন্মসনদ এখন দোকানেই! মাত্র ৩ হাজার টাকায় মিলছে গুরুত্বপূর্ণ এই নথি

জন্মসনদ তৈরিতে দালালদের দৌরাত্ম্য এবং সিটি করপোরেশনের অনিয়ম
জন্মসনদ তৈরিতে দালালদের দৌরাত্ম্য এবং সিটি করপোরেশনের অনিয়ম

বাংলাদেশে জন্মসনদ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি, যা নাগরিকত্ব, শিক্ষা, পাসপোর্ট, ভাতা ও বিভিন্ন সরকারি সেবায় অপরিহার্য। অথচ এই মৌলিক নথি পেতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে পড়তে হচ্ছে ভয়ংকর দুর্নীতির ফাঁদে। সরকারি ফি মাত্র ৫০ টাকা হলেও বাস্তবে তা পেতে হচ্ছে ২,৫০০ থেকে ৩,০০০ টাকা পর্যন্ত, যা কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সিটি করপোরেশনের আশপাশে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী দালালচক্র। এই চক্রের সদস্যরা দোকানের নাম ব্যবহার করে প্রকাশ্যেই জন্মসনদ তৈরির নামে অর্থ আদায় করছে। অভিযোগ রয়েছে, করপোরেশনের কিছু অসাধু কর্মচারীও এই চক্রের সঙ্গে জড়িত, যারা "হাতে-হাতে" কাজ করার নামে মোটা অঙ্কের টাকা নিচ্ছে।

একজন দোকানদার ‘দিগন্ত বাংলা’ প্রতিনিধিকে জানান, “নতুন জন্মসনদের জন্য ২৫০০ টাকা দিতে হবে। কমানো যাবে না। সরকারি কর্মকর্তারা ফোনে কথা বলেন না, কারণ ফোনে প্রমাণ থেকে যায়। তারা সরাসরি কাজ করেন।

এই চক্রটি এতটাই সুসংগঠিত যে, আবেদনকারীর কাছে যদি টিকা কার্ড, হাসপাতালের ছাড়পত্র বা সঠিক জন্মস্থান সংক্রান্ত কাগজ না থাকে, তবুও তারা ম্যানেজ করে দিচ্ছে সবকিছু। এমনকি পছন্দের ঠিকানা ও জন্মস্থান পর্যন্ত লিখে দিচ্ছে সনদে। এসব কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে বেসরকারি কিছু হাসপাতালের নাম, যেগুলোর কোনো সম্পর্কই নেই এই ডকুমেন্টের সাথে। একটি হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, তাদের নাম ব্যবহার করে ভুয়া ছাড়পত্র তৈরি করা হচ্ছে।

অভিযোগের মুখে এক দোকানদার পরে ক্যামেরা দেখে পুরো ঘটনা অস্বীকার করেন। এটি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে—এই চক্রটি দায়িত্ব এড়াতে সব সময় প্রস্তুত থাকে।

ডিএসসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (অঞ্চল ১) মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, “যদি কোনো সেবা দেয়ার প্রয়োজন থাকে, আমরা সেটা করব। মিডিয়াতে বক্তব্য দেয়ার দায়িত্ব আমাদের পিআরও বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পালন করেন।”

তবে প্রশ্ন উঠছে—প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ কেন দালালের দ্বারস্থ হচ্ছে? উত্তর একটাই—সরকারি সেবা এখন সহজলভ্য নয়, এবং জনসেবার নামে হয়রানি বেড়েই চলেছে। ফলে নাগরিকেরা বাধ্য হয়ে অর্থ দিয়ে অবৈধ পথে সেবা নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, "সঠিক নিয়মে আবেদন করলেও অনেক সময় মাসের পর মাস কেটে যায়। কোনো খোঁজখবর থাকে না। আর দালালের মাধ্যমে করলে তিন দিনেই সনদ হাতে চলে আসে!"

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে সরকারিভাবে প্রচলিত সেবা ব্যবস্থার ওপর থেকে মানুষের আস্থা উঠে যাবে। তাই এখনই সময়—এই দুর্নীতিবাজ দালালচক্র ও তাদের পেছনে থাকা প্রশাসনিক সহযোগীদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের।