গাজায় চলমান ইসরাইলি হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক ব্যতিক্রমধর্মী সাহিত্য আসর ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ লেখিকা সংসদ। শনিবার (১২ এপ্রিল) সকাল ১১টায় প্রেস ক্লাবের আকরাম খাঁ মিলনায়তনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বক্তারা একবাক্যে বলেছেন, “গাজাবাসীর ওপর চলমান জুলুম মানবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ।”
অনুষ্ঠানের সভাপতি কামরুন্নেছা মাকসুদা’র মানবিক আহ্বান
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন লেখিকা সংসদের আহ্বায়িকা ও সাংবাদিক কামরুন্নেছা মাকসুদা। তিনি বলেন,
“ইসরাইলের বর্বরোচিত হামলায় যে গণহত্যা চলছে, তা আর কোনোভাবেই সহ্যযোগ্য নয়। বিশ্ববিবেক এখন নীরব। আমাদের এই সাহিত্য আয়োজন তাদের দৃষ্টি ফেরাতে একটুকরো প্রচেষ্টা।”
তিনি নির্যাতিত গাজাবাসীর প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন এবং আন্তর্জাতিক মহলকে এই হত্যাকাণ্ড বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে গঠনমূলক পরামর্শ
বাংলাদেশ লেখিকা সংসদের উপদেষ্টা নাজমুন নাহার নীলু বলেন,
“আমরা শুধু প্রতিবাদ করেই বসে থাকবো না। বরং আমাদের সরকার ও সংগঠনগুলোর উচিত অবরুদ্ধ গাজার মানুষের পাশে দাঁড়ানো— খাদ্য, ওষুধ ও ত্রাণ পাঠিয়ে তাদের জীবন বাঁচানো।”
তিনি সরকারকে এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান এবং মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পরামর্শ দেন।
কবিতা, গান ও প্রতিবাদে একাত্মতা
সাহিত্য আসরে ছিলো আবৃত্তি ও জাগরণী সংগীত পরিবেশনা। বিশিষ্ট লেখিকা নুরুন্নাহার নীরুর সঞ্চালনায় স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন নাজমা ফেরদৌসী এবং শামীমা রহমান শান্তা। তাঁদের কণ্ঠে ফুটে ওঠে গাজার শিশুর কান্না, মায়ের আর্তনাদ, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে থাকা মানবতা।
পরে নাদিয়া বিনতে মাহতাব পরিবেশন করেন জাগরণী সংগীত, যা শ্রোতাদের হৃদয়ে গভীর রেখাপাত করে।
বিশ্ব সংহতির ডাক ও ইহুদি পণ্য বর্জনের আহ্বান
বিশিষ্ট লেখিকা সাবিনা মল্লিক তাঁর বক্তব্যে বলেন,
“বিশ্বজুড়ে যারা গাজাবাসীর জন্য প্রতিবাদ করছেন, আমরা তাঁদের পাশে আছি। লেখিকা সংসদ কেবল সাহিত্যচর্চা নয়, মানবিক দায়বদ্ধতাও পালন করে।”
অপরাজিতা বিডি’র প্রধান সম্পাদক আকলিমা আঁখি ফেরদৌসী আহ্বান জানান—
“সাধারণ মুসলমানদের উচিত ইহুদি পণ্য বর্জন করা। মুসলিম দেশগুলোকে আর নীরব থাকা চলবে না।”
সংবাদকর্মীর সাহসী মন্তব্য
আমার দেশ পত্রিকার সাংবাদিক লাবিন রহমান বলেন,
“গাজায় এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে শুধুই ধর্মীয় বিদ্বেষ নয়, বরং এতে রয়েছে ইসরাইল ও আমেরিকার রিয়েল এস্টেট বিজনেসের ষড়যন্ত্র।”
তিনি অভিযোগ করেন, গাজার ভূমি দখল করে সেখানে অর্থনৈতিক প্রকল্প বাস্তবায়নই ইসরাইলের মূল লক্ষ্য।
এই সাহিত্য আসর প্রমাণ করেছে, সাহিত্য শুধু অনুভূতির জায়গা নয়, বরং প্রতিবাদের শক্তিশালী মাধ্যমও। বাংলাদেশ লেখিকা সংসদের এ আয়োজন সমাজের প্রতিটি বিবেকবান মানুষকে গাজাবাসীর পাশে দাঁড়াতে আহ্বান জানিয়েছে।
এ ধরনের আয়োজন শুধু প্রতিবাদ নয়, বরং আন্তর্জাতিক মহলকে বার্তা দেয়— বাংলাদেশের মানুষ গণহত্যার বিরুদ্ধে, মানবতার পক্ষে।