সমবায় সমিতির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কঠোর সরকারী নির্দেশনা; অনিয়ম রোধে জোরদার হচ্ছে তদারকি

সমবায় সমিতির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কঠোর সরকারী নির্দেশনা
সমবায় সমিতির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কঠোর সরকারী নির্দেশনা

সাম্প্রতিককালে কিছু সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে বিপুল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে, সমবায় খাতকে সুশাসিত ও স্বচ্ছ রাখতে সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। সদস্যদের বিনিয়োগকৃত অর্থের সুরক্ষা এবং সমবায় সমিতির গণতান্ত্রিক কাঠামো বজায় রাখতে সমবায় অধিদপ্তর/নিবন্ধক অফিস থেকে পরিচালনাকারী কমিটিগুলোর প্রতি একাধিক কড়া সতর্কতা ও নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

মূল সতর্কতা ও সরকারী নির্দেশনা

সমবায় সমিতি পরিচালনার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত সরকারি সতর্কতা ও নির্দেশনাগুলো কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে:

  • আইন ও উপ-আইনের প্রতিপালন: সমিতির নিবন্ধন, গঠনতন্ত্র ও উপ-আইনের প্রতিটি ধারা মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করা বাধ্যতামূলক। কোনো সংগঠন নিবন্ধক বা সরকারি অনুমোদন ছাড়া 'সমবায়' বা 'কো-অপারেটিভ' শব্দ ব্যবহার করতে পারবে না।

  • বার্ষিক অডিট আবশ্যিক: সমিতির সকল হিসাব ও কার্যক্রম প্রতি বছর নিবন্ধক কর্তৃক মনোনীত নিরীক্ষক বা প্রতিষ্ঠান দ্বারা বিধিবদ্ধ অডিট (Statutory Audit) সম্পন্ন করতে হবে। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে কোনো গুরুতর অসঙ্গতি বা অনিয়ম ধরা পড়লে আইন অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা কমিটি: আইন অনুযায়ী নিয়মিত ব্যবস্থাপনা কমিটি (Management Committee) নির্বাচন করতে হবে এবং কমিটির সদস্যদের দায়িত্ব ও কর্তব্য উপ-আইন মেনে পালন করতে হবে। সাধারণ সভায় চূড়ান্ত কর্তৃত্ব নিশ্চিত করতে হবে।

  • রেকর্ডপত্র সংরক্ষণ: সমবায় আইন অনুযায়ী নির্ধারিত সকল রেজিস্টার ও রেকর্ডপত্র (কমপক্ষে ৭টি রেজিস্টার) নিয়মিত হালনাগাদ ও যথাযথভাবে সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।

  • বিনিয়োগে সতর্কতা: সাধারণ সভার অনুমতি ছাড়া সমিতির স্থাবর সম্পত্তি বা মূলধনের অংশ বিক্রয় বা দীর্ঘমেয়াদী ইজারা দেওয়া যাবে না। সকল প্রকার বিনিয়োগ সরকারি বিধিমালা মেনে সম্পন্ন করতে হবে।

  • তদন্ত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা: সমিতির কার্যক্রমে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে নিবন্ধক কর্তৃক তদন্ত করা হবে এবং প্রমাণিত হলে ব্যবস্থাপনা কমিটি ভেঙে দেওয়া বা কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গুরুতর আর্থিক প্রতারণার ক্ষেত্রে অপরাধীদের বিরুদ্ধে সরাসরি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

অনিয়ম ও চ্যালেঞ্জ

সমবায় অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, অনেক 'বহুমুখী সমবায় সমিতি' বা 'মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি' সমবায়ের মূল আদর্শ থেকে সরে এসে ব্যাংকিং বা ফিন্যান্সিং প্রতিষ্ঠানের মতো অতি মুনাফার লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ আমানত সংগ্রহ করে আত্মসাৎ করছে। বিশেষ করে, অল্প কয়েকজন সদস্যের ব্যক্তিগত মালিকানায় সমিতি পরিচালনা, গণতান্ত্রিক চর্চা না থাকা, এবং অডিটে স্বচ্ছতার অভাবই এই অনিয়মের মূল কারণ।

সদস্যদের জন্য বার্তা

সরকার সমবায় সমিতির সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যে, তারা যেন উচ্চ মুনাফার লোভে পড়ে তাদের অর্থ ঝুঁকিপূর্ণ বা অননুমোদিত সমিতিতে বিনিয়োগ না করেন। আমানতকারীদের অবশ্যই সংশ্লিষ্ট সমিতির নিবন্ধন এবং বার্ষিক অডিট রিপোর্ট যাচাই করে নিতে হবে। সমবায়ের আদর্শ হলো সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও স্বাবলম্বন, কোনোভাবেই এটি ব্যক্তিগত মুনাফা অর্জনের মাধ্যম হতে পারে না।