A L T R O Z   N E W S
সংবাদ প্রবাহ

জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট, দ্রুত তফসিল ঘোষণা করতে হবে | বিএনপি মির্জা ফখরুল

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) যশোরে অনুষ্ঠিত এক স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট হবে, এর আগে না। দ্রুত তফসিল ঘোষণা করতে হবে। নির্বাচন দিতে হবে।” তাঁর এই বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যেখানে নির্বাচনকালীন সরকার এবং ভোটের পরিবেশ নিয়ে সৃষ্ট অচলাবস্থা বিরাজ করছে।

 

বিএনপির শক্তি ও রাজনৈতিক অবস্থান

সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য তরিকুল ইসলামের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা বিএনপি আয়োজিত এই স্মরণসভাটি অনুষ্ঠিত হয় সন্ধ্যায় যশোর টাউন হল ময়দানে। সেখানে দলের অবস্থান স্পষ্ট করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দৃঢ়তার সাথে বলেন, “বিএনপি ভেসে আসা কোনো রাজনৈতিক দল না। এই দলকে খাটো করে দেখবেন না। বিএনপি যদি মাঠে নামে তাহলে রাজনৈতিক বিষয়গুলো ভিন্নভাবে আসবে।”

দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা এবং নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও বিএনপি যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক শক্তি, তাঁর বক্তব্যে সেই বার্তাটিই উচ্চারিত হয়েছে। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিএনপি যেকোনো মুহূর্তে তার পূর্ণ শক্তি নিয়ে মাঠে নামতে প্রস্তুত, যা দেশের সার্বিক রাজনৈতিক সমীকরণকে বদলে দিতে পারে। এই হুঁশিয়ারি দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে।

 

উপদেষ্টা পরিষদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

বক্তৃতায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচন প্রক্রিয়া সংস্কারের জন্য গঠিত উপদেষ্টা পরিষদের ভূমিকা নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন তোলেন। তিনি অভিযোগ করেন যে, উপদেষ্টা পরিষদ পক্ষপাতদুষ্টু হয়ে কাজ করছে এবং তারা দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করছে না।

তিনি উল্লেখ করেন যে, উপদেষ্টা পরিষদ ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে মাত্র সাত দিন সময় দিয়েছেন। কিন্তু এর সমালোচনা করে তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দল তো হাতের খেলনার মতো নয়।” দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং জনগণের সমর্থন নিয়ে প্রতিষ্ঠিত একটি দলকে আলোচনার জন্য এমন সীমিত সময় দেওয়া অযৌক্তিক বলে তিনি মনে করেন।

বিএনপি মহাসচিব জানান, তার দল সংস্কার কমিশনের সব সভায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে এবং তাদের মতামত দিয়েছে। তিনি যুক্তি দেন, যে বিষয়গুলোতে ইতোমধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেগুলোর উপর ভিত্তি করে কাজ শুরু করা উচিত। আর যে বিষয়গুলো নিয়ে এখনো মতৈক্য হয়নি, সেগুলোকে পরবর্তী পার্লামেন্টে আলোচনা ও সমাধানের জন্য তুলে রাখা যেতে পারে।

তবে, তিনি অভিযোগ করেন যে উপদেষ্টা পরিষদ তা না করে “পক্ষপাতদুষ্টু হয়ে কাজ করছেন” এবং তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে “দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত ষড়যন্ত্র হচ্ছে।” এই গুরুতর অভিযোগটি রাজনৈতিক পরিবেশকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে এবং নির্বাচন কমিশন ও এর সহায়ক সংস্থাগুলোর নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে সংশয় সৃষ্টি করছে।

 

রক্ত দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষার আহ্বান

দেশের বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপদেষ্টাদের প্রতি সরাসরি কঠোর বার্তা দেন। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে, “অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন হয়েছি।” তিনি আরও বলেন, চব্বিশের আন্দোলনের পথ ধরে এখন গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই সুযোগকে নষ্ট না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি সতর্ক করে বলেন, “দয়া করে পানি ঘোলা করবেন না। দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবেন না।”

তাঁর এই আহ্বান মূলত নির্বাচনকালীন সময়ে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার প্রতি জোর দেয়। তিনি স্পষ্ট করে দেন যে, কোনো প্রকার চক্রান্ত বা পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

 

স্মরণসভার উপস্থিত বক্তাবৃন্দ

যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাবেরুল হক সাবুর সভাপতিত্বে এই স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে আরও যারা বক্তব্য রাখেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন:

  • বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু

  • সাবেক তথ্যবিষয়ক সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি

  • কৃষকদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক টি এস আইয়ুব

  • ঝিকরগাছা থানা বিএনপির সভাপতি সাবিরা নাজমুল মুন্নী

  • ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ

  • বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল হোসেন আজাদ

  • জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম

  • জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইসহক

  • চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান

  • নগর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরী

  • কোতোয়ালি থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুরুল হক খোকন

  • ইমাম পরিষদের সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুল মান্নান

এছাড়াও, মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মরহুম তরিকুল ইসলামের সহধর্মিণী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নার্গিস বেগম এবং তাদের পুত্র, বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তাদের উপস্থিতি এই স্মরণসভাকে আরও আবেগঘন করে তোলে।

 

রাজনৈতিক প্রভাব ও পরবর্তী পদক্ষেপ

বিএনপি মহাসচিবের এই বক্তব্য এমন এক সময়ে এলো যখন দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে গভীর মতপার্থক্য বিদ্যমান। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ‘জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট হবে’—এই ঘোষণা কেবল নির্বাচনকে একটি আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে না দেখে, বরং ক্ষমতাসীন দলের প্রতি জনগণের আস্থার প্রকাশ হিসেবে দেখার ইঙ্গিত দেয়। এটি স্পষ্ট করে যে, বিএনপি মনে করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনই বর্তমান সরকারের জনপ্রিয়তা এবং ক্ষমতা থাকার বৈধতার চূড়ান্ত পরীক্ষা হবে।

এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বিএনপি নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন পরিচালনার সাথে যুক্ত সকল পক্ষকে তাদের দায়িত্ব ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য একটি জোরালো বার্তা দিয়েছে। এখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় এবং উপদেষ্টা পরিষদ তাদের কার্যক্রমে বিএনপির অভিযোগের প্রতি কীভাবে সাড়া দেয়, সেদিকেই সকলের দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকবে। নির্বাচন দ্রুত এবং সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য মির্জা ফখরুলের আহ্বান দেশে একটি দ্রুত রাজনৈতিক সমাধানের প্রত্যাশাকেই তুলে ধরে। দেশের গণতন্ত্র, স্থিতিশীলতা এবং জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য দলটির কঠোর অবস্থান রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। এই সমাবেশটি কেবল তরিকুল ইসলামকে স্মরণ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং এটি বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বিএনপির ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করেছে। দেশের গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের অধিকার রক্ষায় বিএনপির এই দৃঢ়তা আগামী দিনগুলোতে আরও বড় আন্দোলনের জন্ম দিতে পারে।

এনসিপিসহ ৩ দলকে নিবন্ধন দিচ্ছে ইসি

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ আজ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন যে, চূড়ান্ত পর্যালোচনার পর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) এবং বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি—এই তিনটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এই তিনটি দল এখন নিবন্ধনের চূড়ান্ত প্রক্রিয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

 

দীর্ঘ যাচাই প্রক্রিয়ার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

ইসি সচিব আখতার আহমেদ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানান, নির্বাচন কমিশনের কাছে নিবন্ধনের জন্য মোট ১৪৩টি আবেদন জমা পড়েছিল। এই বিপুল সংখ্যক আবেদন থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে ২২টি দলকে নির্বাচন কমিশন তদন্তের জন্য মনোনীত করে। মাঠ পর্যায়ে দীর্ঘ ও নিবিড় তদন্তের পর, অনেক আবেদনই শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হয়।

সচিবের ভাষ্য অনুযায়ী, ২২টি দলের তদন্তের পর সাতটি দল তাদের আবেদনের শর্তাবলী পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় 'কোয়ালিফাই' করতে পারেনি। বাকি দলগুলোর মধ্যে থেকে চূড়ান্ত পর্যালোচনা শেষে নির্বাচন কমিশন এই তিনটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বাংলাদেশ নেজামী ইসলাম পার্টির আইনি প্রক্রিয়া

অন্যান্য দলগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও, বাংলাদেশ নেজামী ইসলাম পার্টি-র ক্ষেত্রে আদালতের রায়ের জন্য অপেক্ষা করছে নির্বাচন কমিশন। ইসি সচিব জানান, "বাংলাদেশ নেজামী ইসলাম পার্টির রায় পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত হবে।" এর অর্থ, দলটির নিবন্ধনের বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত পদক্ষেপ নির্ধারণ করবে। উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী এই দলের নিবন্ধন সংক্রান্ত আইনি বিষয় হাইকোর্টে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল এবং বর্তমানে সেই সংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বা রায়ের জন্যই অপেক্ষা করা হচ্ছে।

 

দাবি-আপত্তি চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি

নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) এবং বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টিকে চূড়ান্ত নিবন্ধন দেওয়ার আগে, জনগণের কাছ থেকে দাবি বা আপত্তি গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

আখতার আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন:

"চূড়ান্ত পর্যালোচনা শেষে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টিকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এখন দাবি-আপত্তি চেয়ে আগামীকাল (৫ নভেম্বর) পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে।"

এই গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দাবি ও আপত্তি জানানোর সুযোগ থাকবে। ইসি সচিব যোগ করেন, "এরপর দাবি-আপত্তি আসলে তা নিষ্পত্তি করে চূড়ান্ত নিবন্ধন দেওয়া হবে।" এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরই দলগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মর্যাদা লাভ করবে এবং আসন্ন নির্বাচনে প্রতীক নিয়ে অংশ নিতে পারবে। এই তিনটি দলের নিবন্ধনের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

রাজনৈতিক নিবন্ধনের গুরুত্ব

রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিবন্ধন লাভ করার মাধ্যমেই একটি দল জাতীয় নির্বাচনে তাদের দলীয় প্রতীক নিয়ে অংশ নিতে পারে এবং বিভিন্ন নির্বাচনী সুবিধা ভোগ করার যোগ্যতা অর্জন করে। এই নিবন্ধন প্রক্রিয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে সুসংগঠিত করা এবং কেবল প্রয়োজনীয় শর্তাবলী পূরণ করা দলগুলোকেই নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া।

নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে তিনটি নতুন দল মূলধারার রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে, যা দেশের বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আরও গতিশীল করে তুলবে। নিবন্ধনের চূড়ান্ত সনদ পাওয়ার পর, দলগুলো আগামী সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করবে।

২৩৭ আসনে বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্ত: তালিকা ঘোষণা করলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তাদের নির্বাচনী প্রস্তুতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অতিক্রম করেছে। দলটি প্রাথমিকভাবে ২৩৭টি সংসদীয় আসনে তাদের দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। এই চূড়ান্ত তালিকাটি দলের কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে, যা আসন্ন নির্বাচনের আগে দলের সাংগঠনিক তৎপরতাকে আরও জোরদার করল।

সোমবার (৩ নভেম্বর, ২০২৫) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

 

শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মনোনয়ন

ঘোষিত এই তালিকায় দলের শীর্ষস্থানীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের আসনগুলো বিশেষভাবে নজর কেড়েছে:

  • বেগম খালেদা জিয়া (চেয়ারপারসন): তিনি এবার মোট তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গেছে। আসনগুলো হলো:

    • দিনাজপুর -৩

    • বগুড়া -৭

    • ফেনী-১ (তথ্যসূত্র অনুযায়ী, তিনি তিনটি আসন থেকে লড়বেন, আপনার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী দিনাজপুর-৩ ও বগুড়া-৭ এর পাশাপাশি ফেনী-১ আসনটিও যোগ হচ্ছে)।

  • তারেক রহমান (ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান): দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন।

  • মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (মহাসচিব): তিনি তার নিজ আসন ঠাকুরগাঁও-১ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

এছাড়াও, দলের গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য নেতাদের মধ্যে যারা মনোনয়ন পেয়েছেন:

  • ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু (স্থায়ী কমিটির সদস্য): সিরাজগঞ্জ-২ আসন।

  • মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (স্থায়ী কমিটির সদস্য): ভোলা-৩ আসন।

  • গয়েশ্বর চন্দ্র রায়: ঢাকা-৩ আসন।

  • ইশরাক হোসেন: ঢাকা-৬ আসন।

  • মির্জা আব্বাস: ঢাকা-৮ আসন।

  • লুৎফুজ্জামান বাবর: নেত্রকোণা-৪ আসন।

  • এসএম জিলানী: গোপালগঞ্জ-৩ আসন।

  • (অন্যান্য আসনে উল্লেখযোগ্য প্রার্থীরা, যদি তালিকাটি বিস্তারিত দেওয়া হয়, তাহলে এখানে যোগ করা হবে।)

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে জানান, এই ২৩৭ জনের তালিকা একটি 'সম্ভাব্য তালিকা'। তিনি উল্লেখ করেন, বাকি আসনগুলোতে পরবর্তীতে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে এবং কিছু আসন তাদের যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের জন্য রাখা হবে। প্রয়োজনবোধে এই তালিকাতেও যেকোনো সময় পরিবর্তন আসতে পারে বলে তিনি জানান।

 

নির্বাচনের সময়সূচি ও দলের প্রস্তুতি

দেশের রাজনৈতিক মহলে জোর আলোচনা চলছে, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, নির্বাচনের তফসিল ডিসেম্বরের শুরুর দিকে ঘোষণা করা হবে। এই সময়সূচিকে সামনে রেখে বিএনপি তাদের নির্বাচনী কার্যক্রম গুছিয়ে আনছে।

প্রার্থী ঘোষণার আগে দুপুর সাড়ে ১২টায় বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী চলা এই বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আসন্ন নির্বাচনের দলীয় প্রার্থী চূড়ান্তকরণ এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, তারা মাঠ পর্যায়ে জরিপ করে এবং প্রার্থীর জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা যাচাই করে এই তালিকা তৈরি করেছেন।

 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতি

প্রার্থী ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য ও গুরুত্বপূর্ণ নেতারা। এদের মধ্যে ছিলেন:

  • ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন

  • আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

  • আবদুল মঈন খান

  • গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

  • সেলিমা রহমান

  • নজরুল ইসলাম খান

  • এ জেড এম জাহিদ হোসেন

  • মির্জা আব্বাস

  • মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ

  • এছাড়াও, দলের সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকরাও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

 

২৩৭ আসনে বিএনপির প্রার্থীর তালিকা (সারাংশ)

এই ২৩৭টি আসনের পূর্ণাঙ্গ তালিকা এখানে দেওয়া সম্ভব না হলেও, ঘোষিত প্রার্থীরা হলেন দলের বিভিন্ন স্তরের পরীক্ষিত নেতা, সাবেক সংসদ সদস্য, নতুন মুখ এবং তরুণ নেতৃত্ব। এই তালিকা প্রকাশ প্রমাণ করে যে, প্রতিকূলতার মধ্যেও বিএনপি নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরালোভাবে শুরু করেছে এবং তারা তাদের সাংগঠনিক শক্তিকে নির্বাচনের মাধ্যমে কাজে লাগানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। যেহেতু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তালিকা ঘোষণা করেছেন, তাই এখন পর্যন্ত এটিই দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনের জন্য প্রাথমিকভাবে মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা দেখতে এখানে ক্লিক করুন

আজ থেকে বন্ধ অতিরিক্ত সিম - ইউএনবি।

বহুল আলোচিত এবং প্রতীক্ষিত বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) নতুন নির্দেশনাটি আজ, শনিবার থেকে কার্যকর হয়েছে। এই নির্দেশনার ফলে এখন থেকে একজন নাগরিক তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বিপরীতে সর্বোচ্চ ১০টি সিম ব্যবহার করতে পারবেন। অতিরিক্ত সক্রিয় সিমগুলো আজ থেকেই দেশের মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ করে দেওয়া শুরু করেছে। এই পদক্ষেপটি সিম ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরানো এবং মোবাইলভিত্তিক প্রতারণা রোধ করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

 

সিম ব্যবহারের সীমা ১৫ থেকে ১০-এ নামল

দীর্ঘদিন ধরে একজন গ্রাহক তার জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে সর্বোচ্চ ১৫টি সিমকার্ড ব্যবহার করার সুযোগ পেতেন। কিন্তু গত ৩০ জুলাই, ২০২৫ তারিখে বিটিআরসি একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সংস্থাটি ঘোষণা করে যে, এই সংখ্যা কমিয়ে ১০টিতে আনা হবে এবং নভেম্বর মাস থেকে অতিরিক্ত সিম নিষ্ক্রিয় করার কাজ শুরু হবে। সেই ঘোষণা অনুযায়ী, আজ ১ নভেম্বর, ২০২৫ থেকে এই নিয়ম পুরোপুরি কার্যকর হলো।

বিটিআরসি সম্প্রতি জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, নভেম্বর মাস থেকে এই অতিরিক্ত সিমগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। এটি একটি কঠোর পদক্ষেপ, যা গ্রাহকদের তাদের সক্রিয় সিমের সংখ্যা যাচাই করতে এবং অপ্রয়োজনীয় সিমগুলো বন্ধ করতে উৎসাহিত করছে।

 

গুরুত্বপূর্ণ সিম বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি ও করণীয়

এই স্বয়ংক্রিয় নিষ্ক্রিয়করণ প্রক্রিয়ার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, যেসব ব্যবহারকারী নিজেরা অতিরিক্ত সিম বন্ধ করার উদ্যোগ নেবেন না, তাদের এনআইডিতে নিবন্ধিত গুরুত্বপূর্ণ সিমকার্ডও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কারণ, সিম বন্ধ করার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ ‘দৈবচয়ন’ (র‌্যান্ডম সিলেকশন) নীতি অনুসরণ করবে। অর্থাৎ, গ্রাহকের পছন্দ বা প্রয়োজনের তোয়াক্কা না করে যেকোনো অতিরিক্ত সিম বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। এটি গ্রাহকদের জন্য একটি জরুরি সতর্কবার্তা।

অতিরিক্ত সিম ডি-রেজিস্ট্রেশন বা বন্ধ করতে হলে গ্রাহকদের দ্রুত সংশ্লিষ্ট অপারেটরের কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে যোগাযোগ করতে হবে। কাস্টমার কেয়ারে গিয়ে গ্রাহক তাঁর এনআইডির বিপরীতে নিবন্ধিত সিমগুলোর তালিকা দেখতে পারবেন এবং কোনটি রাখতে চান আর কোনটি বন্ধ করতে চান, সেই সিদ্ধান্ত জানাতে পারবেন। এই প্রক্রিয়াটি গ্রাহককে তার প্রয়োজনীয় সিমগুলো সক্রিয় রাখার নিশ্চয়তা দেবে।

 

বিটিআরসি’র দৃঢ়তা: ডিসেম্বরের মধ্যে লক্ষ্য অর্জন

বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী গণমাধ্যমকে দেওয়া এক বক্তব্যে এই পদক্ষেপের বিষয়ে কমিশনের দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, “আজ শনিবার (১ নভেম্বর) থেকেই অপারেটররা অতিরিক্ত সিম নিষ্ক্রিয় করা শুরু করেছে। আমরা দৃঢ়ভাবে আশাবাদী যে, ডিসেম্বর মাসের মধ্যে আমরা নিশ্চিত করব, কোনো এনআইডির নামে ১০টির বেশি সিম সক্রিয় থাকবে না।

বিটিআরসি চেয়ারম্যানের এই মন্তব্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের জিরো টলারেন্স নীতিকেই তুলে ধরে। এই স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা বাস্তবায়নে অপারেটরদের সফটওয়্যারে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং বিটিআরসি মনিটরিং-এর মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করবে।

 

পরিসংখ্যান: কেন এই কঠোর সিদ্ধান্ত?

বিটিআরসি’র পরিসংখ্যানে মোবাইল সিমের সংখ্যার একটি স্পষ্ট অসঙ্গতি দেখা যায়, যা এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা প্রমাণ করে। ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত দেশে সক্রিয় মোবাইল সিমের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৮ কোটি ৬২ লাখ। অথচ এই সময়ে দেশের প্রকৃত মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা ছিল প্রায় ছয় কোটি ৭৫ লাখ। এই বিশাল ব্যবধানই প্রমাণ করে যে, একজন গ্রাহকের নামে একাধিক সিম নিবন্ধিত হচ্ছে, যা ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।

পরিসংখ্যান আরও দেখায় যে:

  • ৮০ শতাংশের বেশি ব্যবহারকারীর নামে পাঁচটির কম সিম সক্রিয় রয়েছে।

  • ৬ থেকে ১০টি সিম ব্যবহার করছেন প্রায় ১৬ শতাংশ গ্রাহক।

  • ১১টির বেশি সিম ব্যবহার করছেন মাত্র তিন শতাংশ গ্রাহক, যারা মূলত এই নতুন নিয়মের আওতায় আসছেন।

যদিও এই ব্যবহারকারীর সংখ্যা শতাংশের হিসাবে কম, তবুও এদের কারণেই সিমের অতিরিক্ত নিবন্ধন এবং তা থেকে সৃষ্ট জটিলতা তৈরি হচ্ছিল। এই অতিরিক্ত সিমগুলো অনেক সময়ই অব্যবহৃত বা প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করত।

 

শৃঙ্খলা ফেরানো ও প্রতারণা রোধই মূল লক্ষ্য

বিটিআরসি কর্মকর্তারা এই সিদ্ধান্তের মূল কারণ ব্যাখ্যা করে জানিয়েছেন যে, সিম ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরানো এবং মোবাইলভিত্তিক প্রতারণা রোধ করাই এই নতুন নিয়মের প্রধান উদ্দেশ্য। অতিরিক্ত সিমকার্ডের ব্যবহার প্রায়শই অবৈধ ভিওআইপি (VoIP) কার্যক্রমে এবং বিভিন্ন আর্থিক প্রতারণা যেমন—ফিশিং বা চাঁদাবাজিতে ব্যবহৃত হয়। সিমের সংখ্যা সীমিত করার মাধ্যমে এই ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিস্তার অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে কমিশন মনে করে।

এছাড়াও, একটি এনআইডির বিপরীতে মাত্রাতিরিক্ত সিম থাকার কারণে সিমের প্রকৃত ব্যবহারকারী চিহ্নিত করা কঠিন হয়, যা নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর তদন্ত কাজকেও ব্যাহত করে। ১০টি সিমের সীমা নির্ধারণ করার ফলে প্রত্যেক গ্রাহকের দায়বদ্ধতা বাড়বে এবং সিমের অপব্যবহার রোধ করা যাবে।

 

আপনার এনআইডিতে কয়টি সিম? যাচাই করার উপায়

গ্রাহকদের মধ্যে যেন কোনো বিভ্রান্তি না থাকে, সেজন্য বিটিআরসি সহজ উপায়ে তাদের নিবন্ধিত সিমের সংখ্যা যাচাই করার সুযোগ দিয়েছে। গ্রাহকরা খুব সহজেই *অনলাইনে বা ১৬০০২# ডায়াল করে নিজেদের এনআইডিতে নিবন্ধিত সিমের সংখ্যা যাচাই করতে পারেন। এই যাচাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্রাহকরা জানতে পারবেন তাদের কোন কোন অপারেটরের কতগুলো সিম সক্রিয় আছে এবং সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

গ্রাহকদের প্রতি নির্দেশনা হলো, যত দ্রুত সম্ভব তারা যেন এই যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন এবং অতিরিক্ত সিম থাকলে তা কাস্টমার কেয়ারে গিয়ে ডি-রেজিস্ট্রেশন করে নেন। এতে করে তাদের গুরুত্বপূর্ণ সিমগুলো দৈবচয়নের মাধ্যমে বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি এড়ানো যাবে।

 

ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে আরও একধাপ

বিটিআরসি’র এই উদ্যোগ কেবল সিম ব্যবস্থাপনার একটি প্রশাসনিক পরিবর্তন নয়, বরং এটি ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে সুশৃঙ্খল এবং নিরাপদ যোগাযোগ নিশ্চিত করার একটি বড় পদক্ষেপ। সিমের সুব্যবস্থাপনা দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে স্বচ্ছতা আনবে এবং গ্রাহকদের আস্থাও বাড়াবে। এই পদক্ষেপের সফল বাস্তবায়ন দেশের সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করতে এবং মোবাইল আর্থিক সেবার (MFS) অপব্যবহার কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

অপারেটর এবং গ্রাহক—উভয় পক্ষই এই নতুন নিয়মের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারলে ডিসেম্বরের মধ্যে সিম ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকারের লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে, যা দেশের সামগ্রিক ডিজিটাল ইকোসিস্টেমের জন্য ইতিবাচক বার্তা দেবে।

নেতৃত্বের বাইরে শেখ পরিবার, আপা আর ফিরছেন না দেশে: রয়টার্সকে জানালেন শেখ হাসিনা

ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে সাক্ষাৎকার দিতে শুরু করেছেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক রয়টার্সদি ইন্ডিপেন্ডেন্ট এবং ফ্রান্সভিত্তিক এএফপি-কে দেওয়া এসব ভার্চুয়াল সাক্ষাৎকারে তিনি জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চাইতে স্পষ্টভাবে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

২৯ অক্টোবর, বুধবার (বাংলাদেশ সময়) একযোগে প্রকাশিত এসব সাক্ষাৎকারে তিনি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন:

  • ক্ষমা চাওয়া প্রসঙ্গে: সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন যে জুলাই অভ্যুত্থানের রক্তপাতের জন্য তিনি দায়ী নন। তাঁর বিরুদ্ধে যে বিচার কার্যক্রম চলছে, তাকে তিনি ‘লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করেন এবং নিহতদের জন্য সহানুভূতিশীল হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে রাজি হননি। তাঁর দাবি, সরকার উৎখাতের জন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা অস্থিরতা তৈরি করে চক্রান্ত করেছিল।

  • দেশে ফেরা ও নির্বাচন: রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে যদি আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং যেই সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তিনি দেশে ফিরবেন না। তিনি মনে করেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা শুধু অন্যায্যই নয়, আত্মঘাতীও বটে। তাঁর ধারণা, আসন্ন নির্বাচনে বেশিরভাগ আওয়ামী লীগ সমর্থকই ভোট দেবেন না।

  • আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব: তিনি ইঙ্গিত দেন যে ভবিষ্যতে সরকারে কিংবা বিরোধী দলে শেখ পরিবারের নেতৃত্ব দেওয়া অপরিহার্য নয়

 

বিচারের মুখে শেখ হাসিনা: রায় ঘোষণার অপেক্ষা

জুলাই গণহত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা চলমান রয়েছে এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন শেষ হয়েছে। আগামী ১৩ নভেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার তারিখ ঠিক হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ফাঁসির রায় দিলেও তিনি বিস্মিত হবেন না বলেও মন্তব্য করেন। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের হিসাবে, জুলাই মাসের বিক্ষোভে এক হাজার ৪০০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছেন।

 

নয়াদিল্লির ভূমিকা ও পুনর্বাসনের অভিযোগ

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভারত শুধু শেখ হাসিনার নিরাপদ আশ্রয়ই নিশ্চিত করেনি, বরং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অস্থিতিশীল করার বিভিন্ন কৌশল বাস্তবায়ন করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

  • আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন: দিল্লি ও কলকাতায় আওয়ামী লীগকে দলীয় কার্যালয় খোলার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, লিফলেট ছাপিয়ে সেমিনার করার সুযোগ এবং হাসিনার কাছাকাছি থাকা অন্তত তিনজন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাও ভারতে নিরাপদ আশ্রয় পেয়েছেন বলে জানা গেছে।

  • অর্থনৈতিক পদক্ষেপ: সংখ্যালঘু নির্যাতনের কার্ড খেলা এবং বাণিজ্যক্ষেত্রে বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে ক্রমেই কঠিন করে তোলার জন্য নয়াদিল্লি নানা বিদ্বেষমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

 

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের প্রতিক্রিয়া

শেখ হাসিনার এসব সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বুধবার তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, হাসিনার সাক্ষাৎকার প্রচারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তাঁর খুনের বিষয়ে উপস্থাপিত তথ্য-প্রমাণ, জাতিসংঘ এবং আল-জাজিরার প্রতিবেদনে তাঁর গুম-খুনের যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলো মাথায় রাখতে হবে


এই পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শেখ হাসিনার এমন স্পষ্ট ও অনমনীয় বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনা ও উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।

মেট্রোরেল দুর্ঘটনায় নিহতের পরিবারকে ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ: হাইকোর্ট রুল

রাজধানীর দ্রুতগতির গণপরিবহন মেট্রোরেলের নির্মাণ এবং পরিচালনার মান নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিল একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। গত ২৬ অক্টোবর, রোববার, ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের ভায়াডাক্ট থেকে একটি ভারী বিয়ারিং প্যাড আকস্মিকভাবে খুলে নিচে পথচারী আবুল কালাম আজাদের (শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঈশরপাটি গ্রামের বাসিন্দা) মাথায় আঘাত হানে। ঘটনাস্থলেই গুরুতর আহত হয়ে মারা যান তিনি। এই ভয়াবহ ঘটনা কেবল একটি প্রাণহানি নয়, বরং দেশের অন্যতম মেগা প্রকল্পের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতির এক বড় ইঙ্গিত।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। বুধবার (২৯ অক্টোবর), বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি আসিফ হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ একটি যুগান্তকারী আদেশ জারি করেছেন।

 

আদালতের দ্বিমুখী নির্দেশ: রুল এবং বিশেষজ্ঞ কমিটি

হাইকোর্ট এই ঘটনায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আদেশ দিয়েছেন। প্রথমত, নিহত আবুল কালাম আজাদের পরিবারকে ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়ে রুল জারি করেছেন। দ্বিতীয়ত এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আদালত মেট্রোরেল ও দেশের অন্যান্য ফ্লাইওভারের সার্বিক নিরাপত্তা এবং দুর্ঘটনার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন। কমিটিকে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়েছে।

 

আইনি লড়াইয়ের নেপথ্যে

আদালতে এই বিষয়ে রিটের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের প্রথিতযশা আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন এবং অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ। ঘটনার পরপরই আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

১. প্রথম রিট: ঘটনার দুই দিন পর, গত সোমবার (২৭ অক্টোবর) আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন মেট্রোরেলসহ দেশের সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান যাচাইয়ে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে প্রথম রিটটি দায়ের করেন। রিট আবেদনে স্পষ্টভাবে বলা হয়, দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই অবকাঠামোগুলিতে ব্যবহৃত বিয়ারিং প্যাডের মান কতটা নিরাপদ ও টেকসই, তা বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে যাচাই করা জরুরি। ২. দ্বিতীয় রিট (ক্ষতিপূরণ): পাশাপাশি, মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে নিহত হওয়া পথচারী আবুল কালাম আজাদের পরিবারকে দ্রুত দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশনা চেয়ে আরেকটি রিট আবেদন করা হয়।

হাইকোর্ট এই দুটি রিট আবেদন একত্রিত করে বুধবার উপরোক্ত আদেশ প্রদান করেন। এই রুল জারির মাধ্যমে আদালত স্পষ্ট বার্তা দিলেন যে, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া কর্তৃপক্ষের অপরিহার্য দায়িত্ব।

 

কী এই বেয়ারিং প্যাড এবং কেন এটি খুলে পড়ল?

বিশেষজ্ঞদের মতে, বেয়ারিং প্যাড হলো সেতু বা উড়াল পথের (যেমন, মেট্রোরেল বা ফ্লাইওভার) একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি সাধারণত নিওপ্রেন বা প্রাকৃতিক রাবার দিয়ে তৈরি হয় এবং পিলারের (পিয়ার) সঙ্গে উড়াল পথের কাঠামোকে (ভায়াডাক্ট) সংযোগ করে। এর মূল কাজ হলো ট্রেনের চলাচল বা গাড়ির কারণে সৃষ্ট কম্পন শোষণ করা এবং কাঠামোর তাপীয় প্রসারণ ও সংকোচনজনিত চাপ সামলানো। এটি অত্যন্ত ভারী হয়।

দুর্ঘটনার পর মেট্রোরেল সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা প্রাথমিক তদন্তে জানান, প্যাডটি সঠিকভাবে সংযুক্ত ছিল না বা এর ফিক্সিংয়ে কোনো ত্রুটি ছিল। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, নকশাগত ত্রুটি অথবা নির্মাণকালীন দুর্বলতা এর জন্য দায়ী হতে পারে। বেয়ারিং প্যাড সাধারণত ইস্পাতের শেকলে বাঁধা থাকে, যা এর স্থানচ্যুতি রোধ করে। এটি খুলে পড়া একটি অত্যন্ত বিরল এবং মারাত্মক ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচিত। এই ঘটনা মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা প্রোটোকল নিয়ে গভীর সংশয় তৈরি করেছে।

 

নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ: জনমনে প্রশ্ন

মেট্রোরেলের মতো একটি অত্যাধুনিক এবং জনবহুল গণপরিবহন ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ খুলে পড়ে মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনা সাধারণ জনগণের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। প্রশ্ন উঠেছে:

  • মেট্রোরেলের রক্ষণাবেক্ষণের মান কেমন?

  • নির্মাণ শেষে নিয়মিত গুণগত মান যাচাই করা হয় কি না?

  • বাংলাদেশের অন্যান্য ফ্লাইওভারগুলোতেও এমন ঝুঁকি রয়েছে কি না?

হাইকোর্ট কর্তৃক বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশনা ঠিক এই উদ্বেগগুলির সমাধান করতে পারে। এই কমিটির দেওয়া রিপোর্ট ভবিষ্যতে দেশের সকল উড়াল পথের নিরাপত্তার মান নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

আবুল কালাম আজাদের মৃত্যু এবং হাইকোর্টের রুল জারির ঘটনা মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণকারী সংস্থাগুলোর জন্য একটি সতর্কবার্তা। ক্ষতিপূরণের রুল এবং বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশ কেবল নিহত পরিবারের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার প্রাথমিক পদক্ষেপ নয়, বরং এটি দেশের অবকাঠামো নিরাপত্তা নিশ্চিত করার একটি মাইলফলক। এখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জন্য অপেক্ষা, তারা কীভাবে আদালতের নির্দেশনা পালন করে এবং আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তারা বিশেষজ্ঞ কমিটিকে কী ধরনের সহযোগিতা প্রদান করে।

বাংলাদেশের কার্গো পরিবহন সক্ষমতা বাড়ছে: ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধের সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে সরকার

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ হওয়ার পর বাংলাদেশের আকাশপথে কার্গো পরিবহন খাত নতুন এক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলেও এটি একই সাথে একটি সুযোগ হিসেবেও দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এসব পদক্ষেপ দেশের আকাশপথে কার্গো পরিবহন সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক হতে সহায়তা করবে।

বিকল্প বিমানবন্দরের প্রস্তুতি: সিলেট-চট্টগ্রাম এখন গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের ফলে ঢাকা শহরের হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চাপ বেড়ে গেছে। এ কারণে সিলেটের ওসমানী এবং চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো পরিবহন কার্যক্রম দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২৭ এপ্রিল সিলেট থেকে প্রথম ইউরোপে পণ্য পরিবহন করা হবে, যা দেশের আকাশপথে কার্গো পরিবহনে একটি বড় পদক্ষেপ। চট্টগ্রাম এবং সিলেটের বিমানবন্দর দুটি দেশের আকাশপথের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে কাজ করবে।

করোনাকালে ভারতের উপর নির্ভরতা

করোনাকালে ভারতের কলকাতা ও দিল্লি বিমানবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বিশ্ব বাজারে রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৩৪০০ টন পোশাক রপ্তানি করার মধ্যে ৬০০ টন যেত ভারত হয়ে। অর্থাৎ, ১৮ শতাংশ পণ্য ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার মাধ্যমে পরিবহন করা হত। তবে এখন ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ হওয়ায় বাংলাদেশের পণ্য সরাসরি আকাশপথে পরিবহন করা হচ্ছে।

ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধেও বন্ধ হয়নি রপ্তানি প্রবাহ

ভারতীয় ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ হওয়ার পরও বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবাহ থেমে থাকেনি। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৪০০০ টন পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স যেমন কাতার, এমিরেটস, টার্কিশ, সৌদিয়া, এবং ক্যাথে প্যাসিফিক বাংলাদেশ থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এর ফলে দেশের অর্থনীতি এবং শিল্পের জন্য নতুন সম্ভাবনার জন্ম হয়েছে।

সিলেট থেকে ইউরোপ: একটি বড় মাইলফলক

বাংলাদেশের আকাশপথে কার্গো পরিবহন খাতে আরও একটি মাইলফলক স্থাপন হবে ২৭ এপ্রিল সিলেট থেকে প্রথম ইউরোপে ৪০ টন পণ্য পাঠানোর মাধ্যমে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাফিকুর রহমান জানিয়েছেন, সিলেট থেকে প্রথম ফ্লাইটের মাধ্যমে ৪০ টন পোশাক ইউরোপে পাঠানো হবে। এটি দেশের বিমানবন্দরগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির এক বিশাল উদ্যোগ এবং আগামী দিনে আরও ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে।

পিক সিজনে চাহিদা বাড়ে কয়েকগুণ

বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি খাতের জন্য পিক সিজন অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে রপ্তানি চাহিদা দ্বিগুণ হয়ে যায়, যা ১২০০ টন পর্যন্ত পৌঁছায়। ভারতীয় ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ হওয়ার আগে বাংলাদেশ এই চাহিদা মেটাতে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করত। তবে এখন দেশীয় বিমানবন্দরগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে এই চাহিদা পূরণ করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল: বদলে দিচ্ছে কার্গো হ্যান্ডলিং

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নতুন তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে দেশের কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা আরও বাড়বে। বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দরের দুইটি টার্মিনাল মিলে বছরে ২ লাখ টন কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষম। তবে তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে এই সক্ষমতা বছরে ৫.৫ লাখ টনে পৌঁছাবে। এই পদক্ষেপ দেশের রপ্তানি খাতকে আরও শক্তিশালী করবে এবং আকাশপথে পণ্য পরিবহনের খরচও কমবে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আধুনিকীকরণ ও প্রস্তুতি

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স দেশের বিমানবন্দরগুলোতে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা বাড়ানোর জন্য অত্যাধুনিক সরঞ্জাম সংগ্রহ করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রায় ১০০০ কোটি টাকার বেশি সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩২টি নতুন ইক্যুইপমেন্ট কেনা হয়েছে। এসব সরঞ্জাম সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে স্থানান্তর করা হয়েছে এবং আরও জনবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।

রেট কম, পরিষেবা উন্নত: বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতামূলক বাংলাদেশ

বর্তমানে ইউরোপে প্রতি কেজি কার্গোর হ্যান্ডলিং রেট ২.৭০ থেকে ২.৮০ ডলার হলেও বাংলাদেশের শাহজালাল বিমানবন্দরের রেট আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। বিএএফএফএ সভাপতি কবির আহমেদ জানান, বিমান কর্তৃপক্ষ এই খরচ কমানোর চেষ্টা করছে এবং দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে খরচের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনার উদ্যোগ গ্রহণ করছে।

সরকার ও বেসরকারি খাতের সমন্বয় জরুরি

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি খায়রুল কবির সুজন বলেন, “এখন সময় এসেছে আমাদের আকাশপথ এবং লজিস্টিক সুবিধাগুলো সর্বোচ্চ ব্যবহার করার।” তিনি আরও বলেন, “সরকার এবং বেসরকারি খাত একসাথে কাজ করলে আমাদের আর বিদেশি রুটের উপর নির্ভর করতে হবে না। বাংলাদেশের আকাশপথ এবং লজিস্টিক খাত এক নতুন দিকে এগিয়ে যাবে।”

ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ: সমস্যা নয়, বরং সম্ভাবনার সূচনা

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেন, “ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের পর, এটি আমাদের জন্য একটি সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এখন আমরা নিজেদের সক্ষমতায় আন্তর্জাতিক বাজারে কার্গো পণ্য পরিবহন করতে পারছি। এর ফলে দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে এবং পণ্য পরিবহনে সময় এবং খরচ কমবে।”

এই উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশ আকাশপথে কার্গো পরিবহন খাতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছে। এটি দেশের অর্থনীতি এবং বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের অবস্থান আরও মজবুত করবে।

বাংলাদেশের সঙ্গে এলএনজি চুক্তি নবায়ন করবে কাতার

বাংলাদেশ ও কাতার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) সরবরাহ চুক্তি নবায়নের মাধ্যমে। সম্প্রতি দোহায় অনুষ্ঠিত ‘আর্থনা সামিট’-এর সাইডলাইনে এই সিদ্ধান্ত আসে, যেখানে কাতারের জ্বালানিমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আলোচনায় উঠে আসে কেবল বিদ্যমান সমঝোতা স্মারক (MoU) নবায়ন নয়, বরং ভবিষ্যতের জ্বালানি নিরাপত্তা ও অবকাঠামো নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার সম্ভাবনা।

দীর্ঘমেয়াদি SPA ও MoU নবায়নের প্রেক্ষাপট

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ও কাতার G2G ভিত্তিক একটি Sales and Purchase Agreement (SPA) স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ প্রতি বছর ১.৫ থেকে ২.৫ মিলিয়ন টন এলএনজি আমদানি করে থাকে। প্রতি বছর প্রায় ৪০টি এলএনজি কার্গো এভাবে সরবরাহ করা হয়।

২০২৩ সালে নতুন আরেকটি SPA সই হয়, যার কার্যকারিতা শুরু হবে ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে। এই নতুন চুক্তির আওতায় আরও ১.৫ মিলিয়ন টন এলএনজি আমদানি করা হবে প্রতি বছর। এই SPA-এর সাপোর্টিং MoU ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়, যার নবায়নের প্রতিশ্রুতি কাতার দিয়েছে।

কাতারের প্রতিশ্রুতি: সহযোগিতা আরও গভীর হবে

কাতারের জ্বালানিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সাদ বিন শেরিদা আল কাবি বলেন, "আমরা শুধু বাংলাদেশে গ্যাস সরবরাহ করতে চাই না, বরং এই খাতে বাংলাদেশের সাথে টেকসই অংশীদারত্ব গড়তে চাই।" তিনি আরও জানান, কাতার তাদের এলএনজি উৎপাদন দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর ফলে আগামীতে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমতে পারে, যা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত লাভজনক হবে।

বাংলাদেশের পরিকল্পনা: স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল

বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে মাতারবাড়ী, কক্সবাজারে একটি স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। বর্তমানে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল দিয়ে দেশে বছরে ১১৫টি কার্গো হ্যান্ডল করা সম্ভব হচ্ছে। তবে এই সক্ষমতা ভবিষ্যতে চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট নয়।

স্থলভিত্তিক টার্মিনালের মাধ্যমে পাইপলাইনের মাধ্যমে সরাসরি গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে, যা বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিল্প ও আবাসিক ব্যবহারকারীদের জন্য সুবিধাজনক হবে। এই টার্মিনাল থেকে রিগ্যাসিফায়েড এলএনজি (RLNG) সরবরাহ করা হবে, যা বর্তমান এলএনজি ব্যবস্থার চেয়ে আরও স্থায়ী ও ব্যয়সাশ্রয়ী হবে।

ইউরিয়া সার সরবরাহেও কাতারের আগ্রহ

এলএনজির পাশাপাশি কাতার বাংলাদেশে ইউরিয়া সার সরবরাহ বাড়াতে চায়। দেশের কৃষিখাত ইউরিয়া সার নির্ভর, এবং বছরে কয়েক মিলিয়ন টন সার আমদানি করা হয়। কাতারের প্রতিমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে আমরা ভূমিকা রাখতে আগ্রহী।”

উচ্চপর্যায়ের উপস্থিতি: বৈঠকের গুরুত্ব

এই বৈঠকে কেবল দুই দেশের প্রধান উপদেষ্টা নয়, উপস্থিত ছিলেন আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। যেমন—পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আশিক মাহমুদ, টেকসই উন্নয়ন সচিব লামিয়া মোর্শেদ এবং জ্বালানি সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। এ থেকেই বোঝা যায়, এই আলোচনা কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের।

জ্বালানি নিরাপত্তা ও কৌশলগত প্রয়োজন

বাংলাদেশে গ্যাস একটি প্রাথমিক জ্বালানি উৎস, বিশেষ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্পখাতে। দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উৎপাদন ক্রমাগত কমে যাচ্ছে, ফলে আমদানি নির্ভরতা বেড়ে চলেছে। বর্তমানে দৈনিক প্রায় ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি হচ্ছে, এবং এই পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ পরিস্থিতিতে কাতারের মতো নির্ভরযোগ্য দেশ থেকে এলএনজি সরবরাহ একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে বাজারে অস্থিরতা কমানো এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণ করাও সম্ভব হবে।

ভবিষ্যতের রূপরেখা

বাংলাদেশ ও কাতার দু’দেশই বুঝতে পেরেছে যে একে অপরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। কাতারের টেকনিক্যাল সক্ষমতা, অভিজ্ঞতা এবং উচ্চমানের গ্যাস উৎপাদন বাংলাদেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ একটি উদীয়মান অর্থনীতি, যেখানে জ্বালানি একটি মৌলিক চালিকাশক্তি।

দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা শুধু বাণিজ্যিক নয়, বরং কৌশলগত। এই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ জ্বালানি খাতে যেমন আত্মনির্ভর হতে পারবে, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয়ও সম্ভব হবে।


জনপ্রিয় সংবাদ

বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভর্তি ২০২৫: আবেদন শুরু, দ্বিতীয়বার পরীক্ষার সুযোগসহ বিস্তারিত জানুন

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছভুক্ত ১৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আবেদন শুরু, থাকছে দ্বিতীয়বারের সুযোগ

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ১৯টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আবেদন শুরু হয়েছে। আগ্রহী শিক্ষার্থীরা এবারও ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ তিনটি ইউনিটে অংশগ্রহণ করতে পারবেন এবং থাকছে দ্বিতীয়বার পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ।

আবেদন শুরুর তারিখ ও সময়সীমা: আবেদন শুরু: ৫ মার্চ, দুপুর ১২টা শেষ তারিখ: ১৫ মার্চ, রাত ১১টা ৫৯ মিনিট

আবেদনের যোগ্যতা:

  • এসএসসি/সমমান: ২০২০, ২০২১, ২০২২ সালে উত্তীর্ণ

  • এইচএসসি/সমমান: ২০২৩ বা ২০২৪ সালে উত্তীর্ণ

ইউনিটভিত্তিক আবেদন যোগ্যতা:

  • ইউনিট A (বিজ্ঞান):

    • এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় (৪র্থ বিষয়সহ) কমপক্ষে জিপিএ ৩.৫০

    • মোট জিপিএ: কমপক্ষে ৭.৫০

  • ইউনিট B (মানবিক):

    • উভয় পরীক্ষায় (৪র্থ বিষয়সহ) ন্যূনতম জিপিএ ৩.০০

    • মোট জিপিএ: কমপক্ষে ৬.০০

  • ইউনিট C (বাণিজ্য):

    • উভয় পরীক্ষায় (৪র্থ বিষয়সহ) ন্যূনতম জিপিএ ৩.০০

    • মোট জিপিএ: কমপক্ষে ৬.৫০

  • ‘O’ ও ‘A’ লেভেল:

    • ‘O’ লেভেল: ৫ বিষয়ে পাস (৩টিতে B গ্রেড সহ)

    • ‘A’ লেভেল: ৩ বিষয়ে পাস (২টিতে B গ্রেড সহ)

আবেদনের ওয়েবসাইট:  www.gstadmission.ac.bd

ছবি আপলোড নির্দেশিকা:

  • ৩০০x৩০০ পিক্সেল, স্টুডিও কোয়ালিটি, JPG ফরম্যাট

  • ফাইল সাইজ ১০০ কেবির মধ্যে

  • স্কুল ড্রেস নয়, মুখমণ্ডল ও কান স্পষ্ট থাকতে হবে

সেলফি নির্দেশিকা:

  • আলোকোজ্জ্বল স্থানে তুলতে হবে

  • মুখ ও দুই কান খোলা থাকতে হবে

  • এটি বায়োমেট্রিক যাচাইয়ের কাজে ব্যবহৃত হবে

ভর্তি পরীক্ষা সময়সূচি:

  • ইউনিট C (বাণিজ্য): ৫ এপ্রিল ২০২৫, সকাল ১১টা

  • ইউনিট B (মানবিক): ২ মে ২০২৫, সকাল ১১টা

  • ইউনিট A (বিজ্ঞান): ৯ মে ২০২৫, সকাল ১১টা

  • আর্কিটেকচার ব্যবহারিক (ড্রয়িং): বিকেল ৩টা–৪টা

আবেদন ফি:

  • সাধারণ ফি: ১৫০০ টাকা

  • আর্কিটেকচার ব্যবহারিক: অতিরিক্ত ৫০০ টাকা

গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ: ১. ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ২. মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৩. পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৪. নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৫. জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ৬. যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৭. বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ৮. পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৯. গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ১০. বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ১১. রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ১২. রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ১৩. গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি ১৪. নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয় ১৫. জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ১৬. কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় ১৭. চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ১৮. সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ১৯. পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

রাহমাহ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ঈদ পুনর্মিলনী ২০২৫: আনন্দ, শিক্ষা ও ইসলামী বন্ধনের অপূর্ব সমন্বয়

১৩ এপ্রিল ২০২৫ (রবিবার) ঢাকার উত্তরা ব্রাঞ্চে রাহমাহ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে আজ অনুষ্ঠিত হলো এক আনন্দঘন ও শিক্ষা-সমৃদ্ধ ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান। ইসলামী আদর্শে পরিচালিত এই স্কুলটি প্রতি বছর ঈদের পরপরই শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের নিয়ে এমন আয়োজন করে থাকে — যেখানে একসাথে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করা হয় এবং শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিকতার চর্চা হয় বাস্তব পরিসরে।

অনুষ্ঠানের সূচনা: কুরআন তিলাওয়াত ও ইসলামিক নাশিদে হৃদয় ছোঁয়া সূচনা-

সকাল ১০টায় শুরু হওয়া অনুষ্ঠানের সূচনা হয় তেলাওয়াত ও ইসলামিক নাশিদ দিয়ে। পবিত্র কুরআনের আয়াত শুনে উপস্থিত সবাই এক আত্মিক প্রশান্তি অনুভব করেন। এরপর শিক্ষার্থীদের নাশিদ, কবিতা আবৃত্তি পরিবেশনা হয়।

শিশুদের অংশগ্রহণে প্রাণবন্ত পরিবেশ

বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তাঁদের প্রস্তুতকৃত পরিবেশনায় অংশ নেয়। প্রতিটি পরিবেশনায় ছিল ইসলামী শিক্ষার আলো এবং নৈতিক বার্তা।

চিত্রগ্রহণ ও গার্ডিয়ানদের সম্পৃক্ততা

অনুষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য মুহূর্তগুলো ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে ধারণ করা হয়। উপস্থিত অভিভাবকগণ তাঁদের সন্তানদের পারফরম্যান্স সরাসরি উপভোগ করেন এবং এ আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এই ধরণের অনুষ্ঠান বিদ্যালয় ও পরিবারের মাঝে সুদৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলে।

আপ্যায়ন ও আন্তরিক মিলনমেলা

অনুষ্ঠানের শেষে ছিল হালকা নাস্তার আয়োজন, যেখানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক একত্রে মিলিত হন। এতে ঈদের সৌন্দর্য ও ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধ আরও বেশি করে ফুটে ওঠে।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য

বিদ্যালয়ের প্রিন্সিপাল বলেন-

আমরা চাই শিশুদের শুধু পড়ালেখা নয়, বরং ইসলামি মূল্যবোধ ও সামাজিক দক্ষতার উন্নয়ন ঘটুক। ঈদ পুনর্মিলনীর মতো আয়োজনে শিশুরা যেমন আনন্দ করে, তেমনি জীবনের প্রকৃত শিক্ষাও পায়।

রাহমাহ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের এই ঈদ পুনর্মিলনী শুধু একটি অনুষ্ঠান নয় — এটি এক প্রাণবন্ত শিক্ষা, যেখানে ইসলাম, আনন্দ, ভ্রাতৃত্ব ও শৃঙ্খলার অপূর্ব সমন্বয় ঘটে। এই ধরণের আয়োজন একটি আদর্শ ইসলামিক স্কুলের পরিচয় বহন করে।

ভোজ্যতেল বাজারে উর্ধ্বগতি, সয়াবিন তেলে লিটারে ১৪ টাকা বাড়তি চাপ

সরকার এবং ভোজ্যতেল উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কয়েক দফা দর-কষাকষির পর অবশেষে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৮৯ টাকা নির্ধারণ করেছে ব্যবসায়ীরা। পূর্বে এই দাম ছিল ১৭৫ টাকা। ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন রোববার (১৩ এপ্রিল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নতুন দামের ঘোষণা দেয় এবং জানিয়েছে যে, ঘোষণার পর থেকেই এই নতুন দাম কার্যকর হয়েছে।

নতুন দাম কীভাবে নির্ধারিত হলো?

প্রকাশিত ঘোষণায় বলা হয়েছে, পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম আগের ৮৫২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯২২ টাকা করা হয়েছে। পাশাপাশি খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম প্রতি লিটার ১৬৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগে ছিল ১৫৭ টাকা।

এর আগে ৯ ডিসেম্বর সর্বশেষ বার সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল, যখন প্রতি লিটারের দাম ছিল ১৭৫ টাকা। এরপর দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ীরা পুনরায় মূল্যবৃদ্ধির দাবি করে আসছিলেন।

দাম বৃদ্ধির পেছনের কারণ

জানা গেছে, চলতি বছরের ২৭ মার্চ ঈদের আগে মিল মালিকেরা নতুন করে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেন। তারা বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৮ টাকা ও খোলা তেলের দাম ১৩ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। কারণ হিসেবে তারা আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি এবং দেশে শুল্ক কর সুবিধার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা উল্লেখ করেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, ১ এপ্রিল থেকে কর সুবিধার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় আমদানি ব্যয় বেড়েছে। ফলে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার প্রভাব পড়ে বাজারমূল্যে। এরপরেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে বসেন তারা।

দীর্ঘ আলোচনা ও দর-কষাকষি

ঈদের ছুটি শেষে সরকার ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে রবি, মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার দফায় দফায় বৈঠক হয়। এই বৈঠকগুলোতে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৯০ টাকার বেশি হবে কিনা, তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়। যদিও প্রথমদিকে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি, অবশেষে ১৮৯ টাকায় সম্মত হয় উভয় পক্ষ।

শুল্ক সুবিধা বাড়াতে সুপারিশ

ট্যারিফ কমিশন ইতিমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) কে একটি চিঠি দিয়ে ভোজ্যতেলের আমদানি পর্যায়ে শুল্ক কর ছাড়ের মেয়াদ ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। তবে এখনও এনবিআর চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।

সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া

এই দাম বৃদ্ধি মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য এক প্রকার ধাক্কা। তারা মনে করছেন, ঈদের পরপরই এমন দাম বাড়ানো জনসাধারণের কষ্ট আরও বাড়িয়ে তুলবে। সরকারের উচিত বাজার মনিটরিং আরও জোরদার করা এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ তেল সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রাখা।

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে: মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাবে। এই পরিস্থিতি তখন নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে বলে তিনি সতর্ক করেন।


যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক

বুধবার (১৬ এপ্রিল) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে বিএনপি প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নিতে যমুনা ভবনে প্রবেশ করে এবং প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে বিকেল ২টার দিকে তারা বের হন।


দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি

বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমরা দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, বিশেষ করে নির্বাচন নিয়ে আমাদের উদ্বেগ ও সুপারিশ তুলে ধরেছি। আমরা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছি।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি, চলমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের ব্যবস্থা নিতে হবে। এটি না হলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে অস্থিরতা তৈরি হবে, তা নিয়ন্ত্রণে রাখা সরকারের জন্যও কষ্টকর হয়ে উঠবে।”


চার্টার গঠনের প্রস্তাব

বিএনপি মহাসচিব জানান, সরকার গঠিত সংস্কার কমিশন নিয়ে বিএনপির মতামত তুলে ধরা হয়েছে এবং তারা এসব প্রক্রিয়ায় গঠনমূলক ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, “আমরা বলেছি যে, যেসব বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য হবে, সেগুলো নিয়ে একটি ‘চার্টার’ করতে আমরা রাজি আছি।”


ডিসেম্বরই কাট-অফ টাইম

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলেছেন। কিন্তু আমরা পরিষ্কারভাবে জানিয়েছি—আমাদের সময়সীমা ডিসেম্বর। এর পরের সময় আমরা মেনে নিতে রাজি নই।”

তিনি আরও বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ দেননি। তবে বলেছেন যে তিনি ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে চান। কিন্তু আমাদের স্পষ্ট অবস্থান হলো—ডিসেম্বরই আমাদের কাট-অফ টাইম।”


দলের সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, “আমরা দলের অভ্যন্তরীণ আলোচনা ও মিত্রদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী কর্মপন্থা ঠিক করবো এবং আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।”


প্রতিনিধি দলের সদস্যরা

প্রতিনিধি দলে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সালাহউদ্দিন আহমেদ।


রাজনীতিতে আলোচনা জোরালো হচ্ছে

এ বক্তব্যের মাধ্যমে বিএনপি আবারও নির্বাচন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের দাবিকে সামনে রেখে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা আরও গতি পাবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।

গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত আরও ২৯, পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর টানা হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ২৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও অনেকে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, এই হামলা বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) ভোর থেকে শুক্রবার (১১ এপ্রিল) ভোর পর্যন্ত চালানো হয়েছে।

মানবিক বিপর্যয় বেড়েই চলেছে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মহাপরিচালক ড. টেড্রোস আধানম গেব্রেয়াসুস গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ইসরাইলের অবরোধের কারণে গাজায় ত্রাণ পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে সেখানে রোগ ও মৃত্যুর আশঙ্কা দিন দিন বাড়ছে। তার মতে, বর্তমানে গাজার অন্তত ১০ হাজারের বেশি মানুষকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে সরিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।

ভয়াবহ পরিসংখ্যান

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলমান হামলায় এখন পর্যন্ত ৫০,৮৮৬ জন নিহত হয়েছেন এবং ১,১৫,৮৭৫ জন আহত হয়েছেন।

অন্যদিকে, গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় জানায়, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা ৬১,৭০০ ছাড়িয়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে থাকা হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ, যাদের অনেকেই হয়তো আর জীবিত নেই।

সুড়ঙ্গ ও কৌশলগত উদ্বেগ

ইসরাইলের টিভি চ্যানেল ১২ জানায়, গাজার ভেতরে হামাসের কৌশলগত সুড়ঙ্গগুলোর মধ্যে মাত্র ২৫% ধ্বংস করতে পেরেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী।

ইসরাইলি নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর দাবি, গাজা ও মিসরের সীমান্তে অনেক চোরাচালান সুড়ঙ্গ এখনো সচল রয়েছে এবং এদের অধিকাংশই এখনো শনাক্ত করা যায়নি।

এই তথ্য উঠে এসেছে ফিলাডেলফি করিডোর সংক্রান্ত সাম্প্রতিক আলোচনায়। সেখানে এখনো ইসরাইল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি পিছু হটার বিষয়ে। যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভূগর্ভস্থ চোরাচালান সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা সম্ভব নয়।

ফিলাডেলফি করিডোর ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা

প্রায় দেড় মাস আগে, ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ এক বৈঠকে বলেন, ফিলাডেলফি করিডোরকে একটি ‘বাফার জোন’ হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে; যেমনটি লেবানন ও সিরিয়ায় করা হয়েছে।

চ্যানেল ১২ জানায়, তিনি আরও বলেন—

"আমি নিজে ফিলাডেলফি এলাকায় গিয়ে অনেক সুড়ঙ্গ পরিদর্শন করেছি। কিছু বন্ধ, কিছু এখনো খোলা রয়েছে। আমরা এমন তথ্য পেয়েছি যে, যুদ্ধবিরতির সময় হামাস আবারও হামলার পরিকল্পনা করছে, যার লক্ষ্য হতে পারে আমাদের সেনা সদস্য এবং আবাসিক এলাকা।" 

প্রতিবেদক: দিগন্ত বাংলা
ক্যাটাগরি: আন্তর্জাতিক

ঢাকায় নেতানিয়াহুর ছবিতে জুতাপেটা: ইসরাইলি গণমাধ্যমে প্রতিবাদের খবর

১২ এপ্রিল, শনিবার ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে প্রায় এক লাখ মানুষ অংশগ্রহণ করে। এই বিক্ষোভ সমাবেশে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়। সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী ঢাকায় এসে ফিলিস্তিনের প্রতি তাদের সংহতি প্রকাশ করেন। সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা শত শত ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে নিয়ে ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লোগান দেন, এবং গাজার বেসামরিকদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানাতে তারা এই প্রতিবাদে অংশ নেন।

বিক্ষোভকারীরা গাজার জনগণের প্রতি তাদের সমর্থন ও ইসরাইলের নৃশংস হামলার বিরুদ্ধে একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ জানান। ঢাকায় অনুষ্ঠিত এই বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশের মূল লক্ষ্য ছিল গাজায় ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানানো এবং ফিলিস্তিনের জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা।

নেতানিয়াহু ও তার মিত্রদের ছবিতে আঘাত: প্রতিবাদের শক্তিশালী বার্তা

এদিনের প্রতিবাদে অংশগ্রহণকারীরা প্রধানত ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার মিত্রদের ছবি পদদলিত করেন। বিশেষত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবিতেও আঘাত করা হয়। এটি ছিল গাজার ওপর ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী প্রতিবাদ। বিক্ষোভকারীরা তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে জানান, তারা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে এবং ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধের পক্ষে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে।

এছাড়াও, সমাবেশে ইসরাইলের রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়, যার মধ্যে নেতানিয়াহু, ট্রাম্প, এবং মোদির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ছিল স্পষ্ট। ছবিগুলোর ওপর আঘাত করে প্রতিবাদকারীরা এককাট্টা হয়ে বলছেন, তারা এই নেতাদের উত্থান এবং তাদের ফিলিস্তিনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে।

প্রতীকী কফিন: গাজার বেসামরিক নিহতদের স্মরণ

বিক্ষোভকারীরা গাজার নিহত বেসামরিকদের স্মরণে প্রতীকী কফিন এবং মৃতদেহের আকারে প্রতীকী লাশ নিয়ে আসেন। এভাবে তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং গাজার নিরীহ মানুষের ওপর ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদ জানান। এই প্রতীকী প্রতিবাদ গাজার ওপর ইসরাইলি হামলার নির্মমতা ও বর্বরতা তুলে ধরে এবং গাজার জনগণের প্রতি বাংলাদেশের জনগণের গভীর সহানুভূতির প্রতিফলন।

প্রতীকী কফিন এবং মৃতদেহের লাশ প্রদর্শন করে, বিক্ষোভকারীরা সারা বিশ্বের কাছে একটি অত্যন্ত শক্তিশালী বার্তা পাঠিয়েছেন: গাজার বেসামরিকরা মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত, এবং তাদের জীবন অত্যন্ত মূল্যবান। বাংলাদেশ এই আন্দোলনে সামিল হয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে ফিলিস্তিনের অধিকারের পক্ষে এক দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছে।

বাংলাদেশের শক্তিশালী অবস্থান: ফিলিস্তিনের পক্ষে ঐক্য

বাংলাদেশ, একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখে না এবং আনুষ্ঠানিকভাবে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে অবস্থান নেয়। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে এককাট্টা হয়ে কাজ করছে। এই প্রতিবাদ সমাবেশটি বাংলাদেশের জনগণের গাজার প্রতি দীর্ঘদিনের সমর্থনের এক আরেকটি শক্তিশালী উদাহরণ।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে বিভিন্ন সময়ে সমর্থন জানানো হয়েছে। বিশেষত, বাংলাদেশি জনগণ তাদের নৈতিক সমর্থন দিয়ে বিশ্বকে জানান দিয়েছে যে, তারা সবসময় ফিলিস্তিনের অধিকার এবং স্বাধীনতা পক্ষে দাঁড়িয়ে থাকবে।

বিশ্ব মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ: টাইমস অব ইসরাইলের প্রতিবেদন

এই বিক্ষোভ সমাবেশটি বিশ্বব্যাপী মিডিয়ার নজর কাড়ে। বিশেষ করে টাইমস অব ইসরাইল তাদের প্রতিবেদনে জানায়, ঢাকায় অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভ সমাবেশের প্রতীকী প্রতিবাদ এবং অংশগ্রহণকারীদের শক্তিশালী বার্তা বিশ্বকে পৌঁছে দেয়। টাইমস অব ইসরাইল প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশের রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভটি ইসরাইলি হামলার বিরুদ্ধে এক বড় ধরনের প্রতিবাদ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তাদের মতে, ঢাকায় এক লাখেরও বেশি মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন, যা গাজার ওপর ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের দৃঢ় অবস্থানকে বিশ্বব্যাপী জানান দেয়।

ফিলিস্তিনের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন: বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের দৃঢ় অবস্থান

বাংলাদেশের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার এবং তারা আন্তর্জাতিক স্তরে ফিলিস্তিনের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। গাজার প্রতি এই সমর্থন শুধুমাত্র বাংলাদেশে নয়, বরং আন্তর্জাতিক মহলেও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা এক কণ্ঠে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা এবং গাজার জনগণের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন।

এই প্রতিবাদ সমাবেশে বাংলাদেশের জনগণের অংশগ্রহণ এবং সমর্থন শুধু একটি জাতীয় বিষয় নয়, এটি আন্তর্জাতিকভাবে ফিলিস্তিনের প্রতি বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে।

ইতিহাসের সেরা নির্বাচন হবে বাংলাদেশে: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় রচনার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, "আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে দেশের ইতিহাসের সর্বোত্তম নির্বাচন। এটি গণতান্ত্রিক যাত্রার একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।"

শনিবার, ১৯ এপ্রিল, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে তিনি এই মন্তব্য করেন। এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (ANFREL) নামক আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তিনি এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।


কী বলেছে প্রধান উপদেষ্টা?

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, "এই নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক। আমরা এমন একটি নির্বাচন আয়োজন করতে চাই যা দেশের জনগণের আস্থা অর্জন করবে এবং গণতন্ত্রকে আরও দৃঢ় করবে।"


কারা ছিলেন এই সাক্ষাতে?

সাক্ষাতে অংশ নেন ANFREL-এর নির্বাহী পরিচালক ব্রিজা রোসালেস, পরামর্শক মে বুটয়, সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার থারিন্ডু আবেরত্না, প্রোগ্রাম অফিসার আয়ান রহমান খান এবং প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট আফসানা আমেই।


কী বলেছে ANFREL?

এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (ANFREL) দীর্ঘ দুই দশক ধরে এশিয়াজুড়ে সুষ্ঠু নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক সংস্কারের লক্ষ্যে কাজ করছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তারা যে বিষয়গুলো তুলে ধরে তা হলো:

  • নাগরিকচালিত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা পুনর্গঠন

  • স্টেকহোল্ডার ম্যাপিং

  • সুশীল সমাজের সম্পৃক্ততা

  • নির্বাচনী স্বচ্ছতা বৃদ্ধির উদ্যোগ

তারা জানান, এসব পদক্ষেপ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সহায়ক হবে।


আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের গুরুত্ব

ANFREL-এর প্রতিনিধিরা উল্লেখ করেন যে, তারা বাংলাদেশে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে আন্তরিকভাবে কাজ করে যেতে আগ্রহী। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে প্রস্তুত তারা।


কেন এই নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ?

বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ইতিহাসে প্রতিটি নির্বাচনই গুরুত্বপূর্ণ। তবে আগামী নির্বাচনকে ঘিরে যে প্রস্তুতি ও আন্তরিকতার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, তা দেশের গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য আশার আলো হয়ে উঠেছে।

আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ইতিবাচক বার্তা এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের আগ্রহ — উভয়ই দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য শুভসংকেত। যদি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হয়, তবে এটি শুধু একটি নির্বাচন নয়; বরং বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে।

আনন্দ শোভাযাত্রার নিরাপত্তায় ১৮ হাজার পুলিশ মোতায়েন, ড্রোনে চলবে সার্বক্ষণিক নজরদারি

বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ আসছে, এবং এই দিনটি উদযাপনে ঢাকাসহ সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত শক্তিশালী করা হয়েছে। প্রতিবছরের মতো এবারও রাজধানী ঢাকা এবং সারা দেশে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। এদিকে, বিশাল এই আয়োজনকে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সজাগ নজরদারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ১৮ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, পহেলা বৈশাখের উৎসব সুষ্ঠুভাবে উদযাপনের জন্য ঢাকা মহানগরকে ২১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। এখানে নিরাপত্তার জন্য সাদা পোশাকসহ ইউনিফর্ম পরিহিত পুলিশ সদস্যরা মোতায়েন থাকবে। ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে, যেমন রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রবীন্দ্র সরোবর, এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পহেলা বৈশাখের আনন্দ শোভাযাত্রা ও অন্যান্য অনুষ্ঠানস্থলগুলোতে প্রবেশের আগে তল্লাশি ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া, অনুষ্ঠানস্থলে সিসি ক্যামেরাসহ স্থির এবং ভিডিও ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং করা হবে এবং ড্রোনের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারি চলবে।

প্রতিটি অনুষ্ঠানস্থলে নিরাপত্তা চেকপোস্ট

নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে, অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশের মুখে আর্চওয়ে এবং মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে তল্লাশি করা হবে। রমনা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো প্রধান এলাকাগুলোতে ব্যারিকেট থাকবে এবং ফুট পেট্রোলিং টিমগুলো সারা দিন নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যরা ইভটিজিং ও ছিনতাই রোধে কাজ করবে।

গোয়েন্দা নজরদারি ও সাইবার মনিটরিং

পুলিশ সদর দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, সারা দেশে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং সাইবার মনিটরিং চালু রাখা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো অপপ্রচার বা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা হলে তা দ্রুত রোধ করা হবে। এছাড়া, সাইবার পেট্রোলিংয়ের মাধ্যমে সাইবার ক্রাইম মোকাবিলা করা হবে এবং র‍্যাবও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছে।

র‍্যাবের টহল ও বিশেষ বাহিনীর প্রস্তুতি

র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) জানায়, তাদের বাহিনী সারা দেশে মোটরসাইকেল পেট্রোল, গাড়ি পেট্রোল, চেকপোস্ট, অবজারভেশন টাওয়ার এবং গোয়েন্দা নজরদারি চালাবে। র‍্যাবের সদস্যরা ২৪৭টি পিকআপ টহল, ১২২টি মোটরসাইকেল টহলসহ মোট ৩৪৬টি টহল, এবং সাদা পোশাকে ৪১৩ জন সহ মোট ২,৪৪৯ জন সদস্য মোতায়েন করবে। র‍্যাবের স্পেশাল ফোর্সের কমান্ডো টিমও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকবে।

নিরাপত্তায় পূর্ণ প্রস্তুতি, ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, নববর্ষের উৎসব সুষ্ঠুভাবে উদযাপনের জন্য সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ১৮ হাজার পুলিশ সদস্য পহেলা বৈশাখে ঢাকা শহরজুড়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করবে। র‍্যাব, আর্মি ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা নিরাপত্তা কাজে সহযোগিতা করবে এবং যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক বিভাগও বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

পহেলা বৈশাখে দেশের শান্তিপূর্ণ উদযাপন আশা

এদিকে, ডিএমপি এবং র‍্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা আশা করেন এবারের পহেলা বৈশাখ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্কতা, গোয়েন্দা নজরদারি, এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সকল নাগরিককে নিরাপদে উদযাপন করতে সহায়তা করা হবে।

পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষের উৎসব সবার জন্য আনন্দময় মুহূর্ত। তবে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৮ হাজার পুলিশ সদস্য, ড্রোন নজরদারি, এবং অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে যে, বাংলা বর্ষবরণ উৎসব সবাই নিরাপদভাবে উদযাপন করতে পারবেন।

এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার রোধে সাইবার পেট্রোলিংয়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে, যা ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। নিরাপত্তার এই ব্যাপক ব্যবস্থা সবার জন্য একটি আনন্দময় ও শান্তিপূর্ণ পহেলা বৈশাখের আশ্বাস দিচ্ছে।

‘মার্চ ফর গাজা’: ইসরাইল ও বিশ্ব গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত

গাজায় ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে ঢাকায় লাখো মানুষের বিক্ষোভ, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি আলোচিত

১২ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি। এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন, যারা ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে সোচ্চার হন। বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন করে এবং ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধ করার দাবি জানিয়ে নানা স্লোগান দেন। সমাবেশের মূল উদ্দেশ্য ছিল গাজার জনগণের প্রতি আন্তর্জাতিক সহানুভূতি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর।

এই সমাবেশটি শুধু দেশের মধ্যে নয়, আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, যেমন আল-জাজিরা, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি), ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট, আরব নিউজ, এবং টাইমস অব ইসরাইল। এমনকি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভের খবর প্রকাশ করেছে টরেন্টো স্টারস্টার ট্রিবিউনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ
আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী অংশ নেন এবং গাজায় ইসরাইলের সামরিক কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানান। প্রতিবাদকারীরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইসরাইলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবার আহ্বান জানান।

আরব নিউজ তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রায় ১০ লাখের বেশি মানুষ ঢাকায় জমায়েত হন। তারা গাজার জনগণের প্রতি বাংলাদেশের বৃহত্তম সংহতির নিদর্শন হিসেবে বিক্ষোভে অংশ নেন। বিক্ষোভকারীরা ইসরাইলি পণ্য বয়কটের শপথ নেন এবং ‘ফ্রি ফ্রি ফিলিস্তিনি’ স্লোগান দেন।

টাইমস অব ইসরাইল উল্লেখ করেছে যে, প্রায় এক লাখ মানুষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। তারা ফিলিস্তিনের পতাকা উড়িয়ে এবং ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ জানান। এ সময়, ইসরাইলি সরকারের সমর্থকদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেকেই ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবি পদদলিত করেন।

বিক্ষোভে প্রতীকী লাশ প্রদর্শন
সমাবেশে গাজার বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর প্রতীক হিসেবে কয়েকজন বিক্ষোভকারী প্রতীকী লাশ নিয়ে আসেন। এটি ছিল গাজার বেসামরিক লোকদের প্রতি সহানুভূতির একটি শক্তিশালী প্রকাশ।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও বাংলাদেশের জনগণের সংহতি
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, সমাবেশে প্রায় এক লাখ মানুষ অংশ নেন, এবং এ কর্মসূচি দেশীয় ইসলামী দলগুলোসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন লাভ করে। একদিকে যেমন সমাবেশটি একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ছিল, তেমনি অন্যদিকে এটি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত মানুষের জোরালো সংহতি প্রকাশের এক অনন্য উদাহরণ ছিল।

এছাড়া এপি এবং ফাস্টপোস্ট রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই প্রতিবাদ কর্মসূচি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং এটি বিশ্বে ইসরাইলের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠিয়েছে।

বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ ও সংহতি
ঢাকায় আয়োজিত এই বিক্ষোভ কর্মসূচি একদিকে গাজার জনগণের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের গভীর সহানুভূতি ও সমর্থন প্রকাশ করেছে, অন্যদিকে ইসরাইলি আগ্রাসন এবং তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা দেশে এমন বিক্ষোভ আরও বাড়তে পারে, যা মানবাধিকার রক্ষা ও শান্তির জন্য একটি বৃহত্তর আন্দোলনে পরিণত হতে পারে।

সাত গম্বুজ মসজিদ ও অজানা সমাধির গল্প

ঢাকার জমজমাট জীবনের ভিড় থেকে সরে এসে আড়ম্বরহীন শান্তির খুঁজে পেতে পারলেন কি? শুক্রবারের কোনো এক ঝলমলে ছুটির দিনে মোহাম্মদপুরে ঘুরে আসুন দুই নীরব প্রত্যক্ষদর্শীর কাছে—সাত গম্বুজ মসজিদ ও তার স্নেহঢাকা ‘অজানা সমাধি’। ইতিহাসের পাতায় যে অধ্যায়গুলো আজো অমলিন, সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে এই দুই স্মৃতিস্তম্ভ।


ইতিহাসের পাতায় সাত গম্বুজ মসজিদ

১৬৮০ খ্রিস্টাব্দে মোঘল সাম্রাজ্যের সুবেদার শায়েস্তা খাঁর প্রভুত্ব বাংলা আখ্যায়িত ছিল শান্তিময়। তাঁর পুত্র উমিদ খাঁ মোগল স্থাপত্যরীতিতে মোহাম্মদপুরে নির্মাণ করেন এক বুড়িৎ নিদর্শন—সাত গম্বুজ মসজিদ। লাল বাগ দুর্গ মসজিদ ও খাজা আম্বর মসজিদের শৈলীতে এ মসজিদ স্থাপন করা হয়েছিল। ১৫ ফুট উঁচু প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে এ মসজিদ; দেড় শতকের বেশি সময় পার হলেও এর লাল ইটের অলঙ্কার আজো আভিজাত্য আবিষ্কার করে।

মসজিদের ছাদে তিনটি বড় গম্বুজ—মগ্র মরুভূমির সমতলে নজিরবিহীন আর চার কোণে ছোট গম্বুজ চারটি, যা স্থাপত্যগত ভারসাম্য বজায় রাখে। চার কোণে মিনার, টার্নিং খিলান, ইটের কারুকাজ ও খচিত মেহরাব— সবই সেই সময়কার শিল্পীর দক্ষতার সাক্ষ্য বহন করে। মসজিদের দেয়ালে সিমেট্রিকাল খিলান, অষ্টধাতু খিলঞ্জি ও জ্যামিতিক নকশা মুগ্ধ করে প্রতিটি দর্শককে।

মসজিদের অভ্যন্তরে প্রার্থনার স্থান চার সারিতে সাজানো। প্রায় ৯০ জন মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারে। এর সামনের প্রশস্ত বারান্দা ও উদ্যান এককালের বুড়িগঙ্গা তীরবর্তী গঞ্জনা স্মরণ করিয়ে দেয়, যখন লঞ্চ-স্টিমাররা ধারে ঘাট জমজমাট করে যেত। আজ সে গমগম হারিয়ে গেলেও স্মৃতিস্তম্ভ নিজ রূপে অব্যাহত।


অজানা সমাধির রহস্য

মসজিদ থেকে মাত্র কয়েকশো গজ দূরে আছে এক ‘অজানা সমাধি’। স্থানীয়দের কাছে ‘বিবির মাজার’ নামেও পরিচিত। বাইরের দিকে চতুষ্কোণ আকৃতির এ সমাধি, ভেতরে অষ্টকোণাকার—মোগল ধাঁচের একটি ছোট গম্বুজ বেষ্টিত। কার কবর, সম্রাটদের কোনো ডায়েরি না থাকায় জানা আজও কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি। ইতিহাসবিদদের অনুমান, হয়তো মসজিদের কোনো বরেণ্য মুসলিম নেতা বা সুফি সাধকের সমাধি, আবার কেউ কেউ বলেন, শায়েস্তা খাঁর কন্যার مساادى হতে পারে।

বহুকাল পরিত্যক্ত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত এ স্থানের পুনরুদ্ধার হয় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে আজ এটি নতুন রূপে দাঁড়িয়ে আছে। পুরনো পাচঁ-ছয়টি ইটের পাত ভেঙে যেতে যেতে আজাব দাঁড়িয়ে থাকা মাটির প্রাচীরগুলোতে আবার সাজাল বেহালকার, যেন ইতিহাসের কণ্ঠস্বর ঘুরে ফিরে আসে প্রত্যেক দিক থেকে।


দর্শনীয় স্থান ও সুবিধা

অবস্থান ও যাতায়াত

মোহাম্মদপুর রিং রোড ধরে মণিপুরীপাড়া বা বসিলা রোডের দিকে আসলেই চোখে পড়বে সূক্ষ্ম সাইনবোর্ড। সরু গলি পেরিয়ে প্রবেশের পর সামনে মসজিদ, পাশেই সমাধি—সবই এক চাহনিে।

  • ব্যক্তিগত যানবাহন: রিং রোড থেকে সহজেই উল্টে ছোট রাস্তা দিয়ে প্রবেশ

  • রিকশা: মোহনপুর পয়েন্ট বা রিং রোডের যেকোনো পয়েন্ট থেকে রিকশায় ১০–১৫ মিনিটে পৌঁছানো যায়

  • পার্কিং: সামান্য স্থান থাকলেও বাইকে পার্কিং সুবিধা রয়েছে

আশেপাশের আকর্ষণ

  • লালমাটিয়া ও তাজমহল রোড: এখানের কাবাব, চাপ, বিরিয়ানি বিখ্যাত—দু’মুঠো খাবারে ভ্রমণী ক্লান্তি ভুলিয়ে দেবে

  • বুড়িগঙ্গা ঘাট: পূর্বজলের স্মৃতি ধরে রাখা ঘাটের ধারে একটি নীরব উদ্যান


পরিদর্শন পরামর্শ

  1. সময় নির্বাচন: সকালবেলায় সূর্য ওঠার আগে বা বিকেলের হালকা আলোতে মসজিদ ও সমাধি পরিদর্শন উপভোগ্য

  2. পোষাক: ধর্মীয় স্থান হওয়ায় লম্বা, ঢাকনো পোশাক পরিধান করলে সম্মানজনক হয়

  3. ফটোগ্রাফি: স্থাপত্যের অলঙ্কার, খিলান ও মিনারের ডিটেইল শুট করতে পৌঁছে

  4. গাইড: স্থানীয় উপাখ্যায়ি বা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের গাইড থাকলে ইতিহাস বোঝা সহজ


উপসংহার

ঢাকার কোলাহল থেকে বিচ্ছিন্ন এই নিস্তব্ধ স্থানে দাঁড়ালে মনে হবে একরাশ ইতিহাসের নিঃশব্দ সাক্ষী সামনে। সাত গম্বুজ মসজিদের সুউচ্চ ইটের কারুকাজ, তার পাশের অজানা সমাধির রহস্যময়তা—সবই মানুষকে অতীতের অমলিন অধ্যায়ে পা রাখতে উদ্বুদ্ধ করে। একদিনের ছুটিতে বা সপ্তাহান্তের কোনো সকালে এই দুই নিদর্শন আড্ডা দিতে আসা মানে কেবল ভ্রমণ নয়; ইতিহাসের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতা।

বাংলাদেশ সর্বদা স্বাধীন ফিলিস্তিনের প্রতি তার অটল সমর্থন অব্যাহত রাখবে।

বাংলাদেশ, জাতিসঙ্ঘের একাধিক প্রস্তাবের সাথে সঙ্গতি রেখে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ন্যায্য লক্ষ্যে তার অটল সমর্থন অব্যাহত রাখবে। এ আশ্বাস শুক্রবার তুরস্কে ‘আনাতোলিয়া কূটনীতি ফোরাম (এডিএফ)-২০২৫’-এর ফাঁকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রসিকিউটর করিম এ.এ. খানের সাথে এক বৈঠকে দিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো: তৌহিদ হোসেন এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো: মাহফুজ আলম।

বৈঠকে ফিলিস্তিনের দুর্দশায় গভীর সহানুভূতি

বৈঠকে, বাংলাদেশ দুই উপদেষ্টা সাম্প্রতিক ফিলিস্তিনের জনগণের দুর্দশার প্রতি গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করেন এবং রোহিঙ্গা সঙ্কট ও গাজা পরিস্থিতি নিয়ে আইসিসি’র অবস্থানের প্রশংসা করেন। তারা রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ন্যায়বিচার ও সঙ্কটের চূড়ান্ত সমাধানের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার উপরও গুরুত্ব দেন।

আইসিসি ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সহযোগিতা

দুই পক্ষ বৈঠকে বাংলাদেশ ও আইসিসি’র মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা করেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন আইসিসি’র সাথে বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ ও আইনজ্ঞদের প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের আগ্রহের কথা জানান। আইসিসি’র প্রসিকিউটর করিম এ.এ. খান আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থায় বাংলাদেশের অটল অবস্থানের প্রশংসা করেন।

আনাতোলিয়া কূটনীতি ফোরামে অংশগ্রহণ

আজ তুরস্কের আনাতোলিয়ায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোগানের পৃষ্ঠপোষকতায় শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ‘আনাতোলিয়া কূটনীতি ফোরাম (এডিএফ)-২০২৫’। এই ফোরামের মাধ্যমে কূটনীতির পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার এবং একটি বিভক্ত বিশ্বে সম্মিলিত পদক্ষেপের সাধারণ ভিত্তি খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা অনুসন্ধান করা হবে।

এফডিএফ-এ ২০টিরও বেশি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান, ৫০টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, ৭০টিরও বেশি মন্ত্রী, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রায় ৬০ জন সিনিয়র প্রতিনিধি, শিক্ষার্থীসহ ৪ হাজারেরও বেশি অতিথি অংশগ্রহণ করছেন।

সূত্র: বাসস

স্বাধীনতার ‘আওয়ামী বয়ান’ বিলুপ্তিতে ঐক্যমতে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ইতিহাসে সংবিধানে সন্নিবেশিত ‘আওয়ামী বয়ান’ বিলুপ্তির বিষয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপি একমত পোষণ করেছে। এটি সংবিধান সংস্কার কমিশনের দেয়া প্রস্তাবনার আলোকে জানানো হয়েছে।

কমিশনের পর্যালোচনা অনুযায়ী, এই তিনটি রাজনৈতিক দল ‘সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫০(২) বিলুপ্ত করা এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট ৫ম, ৬ষ্ঠ এবং ৭ম তফসিল সংবিধানে না রাখার পক্ষে মতামত দিয়েছে। কমিশনের সর্বশেষ স্প্রেডশিট থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

১৫০ (২) অনুচ্ছেদ-এ উল্লেখ রয়েছে, ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তারিখে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৬শে মার্চে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র এবং ১০ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র সংক্রান্ত দলিল এবং ভাষণের ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু এই তিনটি রাজনৈতিক দল এই অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করার প্রস্তাবে একমত হয়েছে।

সংবিধান সংস্কারে দলগুলোর মতামত

সংবিধান সংস্কার বিষয়ে বিএনপি, জামায়াত এবং এনসিপি মোট ৭০টি প্রস্তাবের মধ্যে ৪টি প্রস্তাবে একমত হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো বাংলাদেশি হিসেবে পরিচিতি-এর বিষয়টি এবং রাষ্ট্রপতির অভিশংসন প্রক্রিয়া

এই প্রস্তাবনার মাধ্যমে, রাষ্ট্রদ্রোহ বা গুরুতর অসদাচরণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করার সুপারিশ করা হয়েছে। এই বিষয়েও তিনটি দল একমত হয়েছে।

রাজনৈতিক ঐকমত্য এবং পরবর্তী পদক্ষেপ

কমিশন জানিয়েছে, আগামী সংবিধান সংস্কার প্রক্রিয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত গুরুত্ব দিয়ে প্রস্তাবগুলো চূড়ান্ত করা হবে।

জানা গেছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংবিধান সংস্কার এবং অন্যান্য বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নিয়ে কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হবে সেই প্রস্তাবগুলোকে, যেগুলোর বিষয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত।