A L T R O Z   N E W S

সর্বশেষ সংবাদ

অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে বয়স লাগে না: সমন্বয়ক রাফি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেছেন, ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে, প্রতিবাদ করতে কোন বয়স লাগে না। আমাদের সঙ্গে যখন কোন অন্যায় করা হবে, তার প্রতিবাদ আমরা সঙ্গে সঙ্গেই করবো। সে যে দলেরই হোক কিংবা ক্ষমতাবান হোক। তার বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ করতে হবে।’
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার কালাই সরদারেরচর এলাকায় সেনাবাহিনীর মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) রেজাউল করিম রেজা’র আয়োজনে কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
খান তালাত মাহমুদ রাফি আরও বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে আমরা যাতে স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারি, এজন্য যখনই অন্যায় দেখবেন তখনই প্রতিবাদ করতে হবে। অন্যায়ের প্রতিবাদ না করলে আপনি নিজেও দোষী হবেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে আন্দোলনে অনেকেই শহীদ হয়েছেন। এই অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে কথা না বললে আবারও স্বৈরচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। এমনকি আবারও তারা ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠবে। এতদিন আমাদেরকে কথা বলার সুযোগ দেয় নাই। এজন্যই ১৬ বছর ফ্যাসিস শেখ হাসিনা আমাদেরকে কুক্ষিগত করে রাখছে।’


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক বলেন, ‘আমরা এমন একটা বাংলাদেশ চাই, যে বাংলাদেশের নেতারা হবে জনবান্ধব। জনগণের কথা শুনবে, জনগণের কথা বুঝবে। নির্বাচনের আগে গ্রামের মানুষকে বিভিন্নভাবে ভোলানো হয়, নির্বাচনের পরে যখন নেতারা চেয়ারে বসে আর কিছুই দেয় না। এজন্য রাজনৈতিকভাবে আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। আমাদেরকে কেউ যেন আর ব্যবহার না করতে পারে।’


সেনাবাহিনীর মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) রেজাউল করিম রেজা’র আয়োজনে এলাকায় ৩ শতাধিক মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়। পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হতাহতদের স্মরণে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপদেষ্টা সালাউদ্দিন তানভীর, সেনাবাহিনীর মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) রেজাউল করিম রেজা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাতক চাকমা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাশসহ অনেকেই।

সংবাদ প্রবাহ

সুনামগঞ্জ জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আগষ্টের ৩-৪ তারিখ সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। যাদের নাম পরিচয় এখনও নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। এখনও হাসপাতালে ২২২ জন পঙ্গুত্ব বরণকারী, ৭শ জন দুচোখ হারা, একচোখ হারানো আরও ৫শ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, গুম খুন হত্যাসহ ফ্যাসিবাদের বিচার দেশের মাটিতেই হবে। 

আমীরে জামায়াত বলেন, ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের একটাই উদ্দেশ্য একটি আদর্শ সমাজ বিনির্মাণ করা। এ কাজের জন্য জামায়াত নেতাকর্মীদের উপযুক্ত হয়ে গড়ে উঠতে হবে। জামায়াতকে দেশ গড়ার দায়িত্ব দিলে একটি বৈষম্যহীন মানবিক রাষ্ট্র উপহার দেওয়া সম্ভব হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

১ ফেব্রুয়ারি সকাল দশটায় সুনামগঞ্জ শহরের সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে (বালুর মাঠ) জেলা জামায়াত আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন। 

আমীরে জামায়াত ডা: শফিকুর রহমান আরও বলেন, আমরা প্রতিশোধে বিশ্বাসী নই। তবে জাতিকে কলংকমুক্ত করতে সকল গুম খুনের বিচার হতে হবে। তিনি জামায়াত নেতা কর্মীদেরকে আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার জন্যও আহ্বান জানান।

আমীরে জামায়াত বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে আমাদের সবগুলো অফিস সিলগালা করে দেওয়া হয়েছিল। আমাদের নেতাকর্মীদের ঘর থেকে তুলে নিয়ে গুম খুন নির্যাতন করা হয়েছে। আমাদের নেতাদেরকে বিচারের নামে ফাঁসিতে ঝঁলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা তাদের প্রতি প্রতিশোধে বিশ্বাসী নই। তবে জাতিকে কলঙ্ক মুক্ত করার জন্য ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচারের আওতায় আনা দরকার।

ডা: শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াত একটি আদর্শবাদী সংগঠন। আমাদের নেতারা বালু মহাল, জলমহাল, হাটবাজার দখলে জড়িয়ে পরে না। তারা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, লুটপাটে বিশ্বাসী নয়। তার জানে এসব কাজ হারাম। এটাই জামায়াতের নৈতিক শিক্ষা। 

তিনি বলেন, যে দল বা যারাই সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্বে জড়াবে তাদেরকে প্রতিহত করতে হবে। 
 
ডা. শফিকুর রহমান তার বক্তৃতায় জুলাই বিপ্লবে শাহাদাত বরনকারী সকল শহীদদের স্মরণ করে বলেন, যাদের জীবন দানে আমরা মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি তাদেরকে শ্রদ্ধার জায়গায় রাখতে হবে। তিনি নিরীহ মানুষের অযথা মামলায় হয়রানি না করার আহবান জানিয়ে বলেন, দেশটা সকলের। এদেশের সকল নাগরিক ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সমান অধিকার ভোগ করবে। কিছু দুষ্ট লোকের জন্য আমাদের সৌহার্দ্য-স¤প্রীতি বিনষ্ট হতে দেওয়া যাবেনা। ৫ আগষ্টের পর জামায়াত নেতাকর্মীরা টানা ১৫ দিন মন্দির-মঠ পাহারা দিয়ে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিয়েছে।

তিনি বলেন, একটি দল এদেশের সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যাবহার করে। আবার তাদের দ্বারাই সংখ্যালঘুরা বেশি নির্যাতনের শিকার হয়।

সংখ্যালঘুদের উপর এসকল নির্যাতন নিপীড়ন বন্ধের জন্য আমি জাতিসংঘে চিঠি লিখেছিলাম নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করার জন্য। তৎকালীন সরকারকেও একই চিঠি লিখেছিলাম। সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করবে আওয়ামী লীগ আর দায় চাপাবে জামায়াতের উপর। এজন্যই তারা তদন্ত করে নাই।

প্রধান অতিথি ডা শফিকুর রহমান ৩০ বছর আগের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, আমার জীবনের প্রথম কর্মস্থল সুনামগঞ্জ। এই জেলার জামালগঞ্জ হাসপাতালে ডাক্তার হিসেবে প্রথম যোগদান করি। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর সুনামগঞ্জের মৎস পাথর ধান সারাদেশে যোগান দিয়ে থাকে।

তিনি বলেন, ২০০ বছর আগে বিদেশীরা এদেশে আসত রুজি রোজগারের জন্য। তখনকার শাসকগণ দেশকে ভালবাসতেন। এখন আমাদের বিদেশে যেতে হয় কারণ শাসকদের মধ্যে দেশপ্রেম নেই। দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার জন্য দেশ প্রেমিক নেতৃত্বের প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন। 

জামায়াত আমীর আরও বলেন, বিগত সরকারের আমলে  যারা আমাদেরকে কথায় কথায় বিদেশে পাঠানোর কথা বলত তারাই আজ দেশ থেকে পালিয়ে অন্য দেশে চলে গেছে। শহীদদের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন,  আমাদের নেতাদেরকে যে জল্লাদ ফাঁসি দিয়েছিল সেই জল্লাদের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে। যখন আমাদের নেতাদের ফাঁসির সংবাদ দেওয়া হয় তারা তা শুনে আলহামদুলিল্লাহ বলে দুই রাকাআত নামাজ পড়েন। পরিচ্ছন্ন পরিপাটি কাপড় পড়ে শাহাদাত আঙুলির ইশারায় ফাঁসিকে স্বাগত জানান। শাহাদাতের মর্যাদা পেতে উৎফুল্ল ছিলেন আমাদের নেতারা। আমাদের বাগানের সুন্দর ফুলগুলো দুনিয়ার কারো কাছে মাথা নত না করে হাসতে হাসতে ফাঁসিকে বরণ করে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে গেছেন।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের সুনামগঞ্জের প্রয়াত সাবেক তিন জেলা আমীর আহমদ হোসাইন, আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সালেহ, হাতিমুর রহমানকে স্মরণ করে বলেন, হাওরের জেলা সুনামগঞ্জ দেশের ২৩ ভাগ খাদ্যশস্য উৎপন্ন করে। এখানকার বালি পাথর মাছ দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। তবে সব দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে এই জনপদের মানুষ।  দেশে ফ্যাসিবাদী শক্তি যেন আর ফিরে আসতে না পারে সেজন্য তিনি উন্নয়ন বৈষম্যের শিকার সুনামগঞ্জবাসীর প্রতি আহবান জানান। 

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনামলে হাজার হাজার মানুষকে গুম খুন করা হয়েছে। জামায়াতকে রাজাকার জঙ্গিবাদের ট্যাগ লাগিয়ে রাজনৈতিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। মিথ্যা মামলায় আমাদের নেতাদের ফাঁসির মঞ্চে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আজ তারা নিজেরাই দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। বর্তমানেও একটি দল চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজিসহ নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে পুরনো কায়দায় জামায়াতের নামে ট্যাগ লাগাতে চায়। 

সিলেট মহানগরী জামায়াতের আমীর ফখরুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, দীর্ঘ আন্দোলনের বিনিময়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি কোনো চাঁদাবাজ দখলদারদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিবার জন্য নয়। তিনি নৈতিকতা সম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যদিয়ে সুনাগরিক গঠনের কথা বলেন।

উদ্বোধনী বক্তব্যে জেলা জামায়াতের আমীর উপাধ্যক্ষ মাওলানা তোফায়েল আহমেদ খান জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, অধ্যাপক গোলাম আযম, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদসহ সকল শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। 

সুনামগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমীর উপাধ্যক্ষ মাওলানা তোফায়েল আহমেদ খান এর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ এর সঞ্চালনায় কর্মীসম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান। 

অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন হবিগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা কাজী মখলিছুর রহমান, মৌলভীবাজার জেলা আমীর ইঞ্জিনিয়ার শাহেদ আলী, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর এডভোকেট শামস উদ্দীন, সুনামগঞ্জ জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি মোমতাজুল হাসান আবেদ, সিলেট মহানগরী শিবির নেতা শাহীন আহমদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট শিশির মোহাম্মদ মনির, জামায়াত নেতা মাওলানা আব্দুস সালাম আল মাদানী, সাবেক দোয়ারাবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান ডা: আব্দুল কুদ্দুস, জেলা জামায়াত নেতা এডভোকেট ইয়াসিন খান,  মাওলানা আব্দুস সাত্তার, নুরুল ইসলাম, এডভোকেট দেলোয়ার হোসেন শামীম, সুনামগঞ্জ পৌর আমীর আব্দুস সাত্তার মামুন, তাহিরপুর উপজেলা আমীর অধ্যাপক রুকন উদ্দিন, দোয়ারাবাজার উপজেলা আমীর ডা: হারুনুর রশীদ, বিশ্বম্ভপুর উপজেলা আমীর মুফতি হারিছ উদ্দিন, জেলা শিবির সভাপতি মেহেদী হাসান তুহিন, সিলেট জেলা পুর্ব শিবির সভাপতি মনিরুজ্জাম পিয়াস, ধর্মপাশা উপজেলা আমীর বুরহান উদ্দিন, জুলাই বিপ্লবের শহীদ আয়াত উল্লাহর পিতা সিরাজুল ইসলাম ও  শহীদ সোহাগের পিতা আবুল কালাম প্রমুখ। 

হাওরের জেলা সুনামগঞ্জে দীর্ঘ দেড় যুগ পর প্রকাশ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুনামগঞ্জের রাজনৈতিক ইতিহাসে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ সমাবেশ জেলা জামায়াতের এই কর্মী সম্মেলন। হাওর অধ্যুষিত এ জেলায় জামায়াতের কর্মী সম্মেলনকে ঘিরে ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী দুঃশাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট জামায়াত নেতা কর্মীরা মুক্ত স্বাধীন নতুন বাংলাদেশে কর্মী সম্মেলন করতে পেরে অনেকটাই উজ্জীবিত। কর্মীসম্মেলনকে ঘিরে সুনামগঞ্জের সর্বত্র ছিল উৎসবের আমেজ। 

সম্মেলনে সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলা থেকে নেতা কর্মীরা লঞ্চ ট্রলার গাড়ি করে সম্মেলন স্থলে এসে জমায়েত হতে থাকেন। বেলা ১১টায় সম্মেলনস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। সুনামগঞ্জ শহর ও শহরতলী থেকে পোষ্টার ব্যানারসহ মিছিল নিয়ে সমবেত হন বিভিন্ন শাখার নেতা কর্মীরা। অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলিতে তোরণ নির্মাণ করে সুসজ্জিত করা হয়েছে।

প্রতারক ক্ষমতায় থাকলে তার সন্তানরাও প্রতারক হয়, যেমন জয়-পুতুল

‘প্রতারক যখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকে, তখন তার সন্তানরাও প্রতারক হয়’ মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘তার উদাহরণ পুতুলের নামে সূচনা সংগঠন এবং জয়ের নামে বিনিময় সংগঠনের কোনো অস্তিত্ব পায়নি দুদক। অথচ এই সংগঠনের নামে শত শত টাকা বরাদ্দ নিয়ে লুটপাট করেছে জয়-পুতুল।’

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ‘প্রতিবন্ধী রিকশাচালক মামুন’-এর জন্য আর্থিক অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দলটির কোষাধ্যক্ষ ও আমরা বিএনপি পরিবারের উপদেষ্টা এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন প্রমুখ।

শহীদ পরিবারের কথা তুলে ধরে রিজভী বলেন, ‘শহীদ পরিবার কোনো কিছুই প্রত্যাশা করে না। তাদের প্রত্যাশা ঘাতকদের বিচার। এই পরিবারগুলো এটাই দেখে যেতে চায়।’

তিনি বলেন, ‘যারা টার্গেট করে গুলি করে, তাদের আত্মা মানুষের আত্মা না, তাদের আত্মার মধ্যে ছিল রক্তপিপাসু নেকড়ের কোনো আত্মা। তা না হলে এই ফুটফুটে শিশুদের গুলি করে মারতো না। শেখ হাসিনার কাছে নারী, শিশু, কিশোর মানবতার কোনো মূল্য নেই। ওর (হাসিনা) কাছে একটাই মূল্য, বাংলার সিংহাসনটা চাই, চাই।’

শেখ হাসিনা তার সিংহাসন রক্ষা করার জন্য সারাদেশে ১৬ বছর ধরে তাণ্ডব চালিয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘এই হাসিনা কত মায়ের কোল খালি করেছে, কত নারীকে বিধিবা করেছে, কত পরিবারকে সন্তান হারা করেছে, তার কোনো হদিস নেই। শেখ হাসিনার ক্ষমতার দেড় দশক ছিল এদেশের মানুষের জন্য শোকের বছর। গুম ছিল শেখ হাসিনার কাছে একটা খেলা। ক্রসফায়ারে হত্যা ছিল শেখ হাসিনার কাছে একটা আনন্দের বিষয়। সে বিরোধী পক্ষের লাশ, রক্ত দেখলে খুব খুশি হতো।’

প্রশাসনের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিজের মতো সাজিয়ে নিয়েছিল রাষ্ট্র ক্ষমতার জোরে। কই? এখন সামাজিক সংঘাতে কত মানুষ মারা যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এটা দমনে তো কোনো ভূমিকা দেখি না। অপরাধীদের তো গ্রেফতার করে না। অথচ এই পার্টি অফিস (বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়) থেকে একটা মিছিল বের হলে, মৌমাছির মতো ঘিরে ফেলতো। বিরোধী নেতাকর্মীরা যদি ধান ক্ষেতে, বাঁশ ঝাড়ে বসে লুকিয়ে থাকতো, সেখান থেকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে যেত। আজ যারা সমাজের অপরাধী তাদেরকে গ্রেফতার করে সমাজের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা হচ্ছে না। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ শত মানুষকে হত্যা করেছে, তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক। তাদের কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না? কারা এই অপরাধীদের রেহাই দিচ্ছে, তাদেরকে আমরা চিহ্নিত করে রাখছি। এদের বিচার করলে শহীদ পরিবারে রাগ কিছুটা শীতল হতো। বরং আমরা কী দেখছি! মামলার নামে যে বাদি সে বিএনপির আরেক কর্মীর নামে মামলা করছেন, এই চক্রান্ত প্রায় জায়গায় হচ্ছে। কারা এই কাজগুলো করছেন, সেটা আমরা জানি।’

শেখ হাসিনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সে শিশু হত্যা করতে পারে। তার পরিবারের দুর্নীতি তো এখন সবার জানা। ভাগ্নি-ভাগ্নের নামে প্লট। শুনলাম আওয়ামী লীগ নাকি মাঠে নামার কর্মসূচি দিয়েছে। জানি না। হয়তো প্রতিক্রিয়া জানার জন্য। তিনি আবার ক্ষমতা ফিরে পেতে চান। ছাই থেকে জন্ম নিতে চায়। এত সাহস পায় কই থেকে?’

এগুলো সরকারকে পর্যবেক্ষণ করার আহ্বান জানান রিজভী।

আ.লীগকে নিষিদ্ধের পরিকল্পনা অন্তর্বর্তী সরকারের নেই: প্রেস সচিব

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো নির্ধারণ করবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির ভবিষ্যৎ কী হবে। তবে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনও পরিকল্পনা অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। 

রবিবার (১৯ জানুয়ারি) রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশে (পিআইবি) ‘বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম’ (বিএজেএফ) সদস্যদের জন্য কৃষি সাংবাদিকতা বিষয়ক প্রশিক্ষণের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

শফিকুল আলম বলেন, কৃষিখাত গত ১৫ বছর ধরে চুরির তথ্য দিয়ে পরিচালনা করা হয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়েছে। প্রতি বছর কয়েক লাখ কোটি টাকার খাদ্যপণ্য আমদানি করা হয়। উৎপাদন না থাকার কারণে দেশে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি বলেন, বাজারে সিন্ডিকেট আছে, সেটি ভাঙা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ডিমের সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলা হয়েছে। কৃষিকে টেকসই করতে কাজ করা হচ্ছে।

নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচন কমিশন কাজ করছেন জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, নির্বাচন কমিশন কিছু টাইমলাইন দিয়েছে। প্রিপারেশন কেমন হবে সেটা নির্ভর করছে অনেকগুলো রিফর্মের ওপর। এই রিফর্মগুলোর অনেকগুলোই মাঠ পর্যায়ে নির্বাচন প্রভাবিত করবে।

এ সময় চলতি বছরের ডিসেম্বরে অথবা ২০২৬ এর জুনে নির্বাচন হওয়ার কথা জানান প্রেস সচিব। তিনি বলেন, আমরা খুব বেশি সময় যে নিচ্ছি তা না। খুব যুক্তিযুক্ত সময়েই নির্বাচন হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কারও ক্ষমতার প্রতি লোভ নেই।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, দেশের মধ্যবিত্তের যে উলম্ফন সেটি ধরে রাখতে হলে কৃষকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তা না হলে মধ্যবিত্তের ফুটানি থাকবে না। দেশে বাজার অর্থনীতির পরিবের্ত সিন্ডিকেটের অর্থনীতিতে দাঁড়িয়েছে। কৃষিখাতসহ দেশের সব জায়গাতে অকৃত্রিম পরিসংখ্যানের ভেল্কি দেখিয়ে উন্নয়ন দেখানো হয়েছে। সেখান থেকে বের হতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএজেএফ সভাপতি ও পিআইবি পরিচালনা বোর্ডের সদস্য গোলাম ইফতেখার মাহমুদ। সঞ্চালনা করেন বিএজেএফ সাধারণ সম্পাদক সাহানোয়ার সাইদ শাহীন।

হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর বার্তাকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে ভারত?

গত ২৩ ডিসেম্বর সকালে দিল্লির চাণক্যপুরীতে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়ার বার্তা ‘নোট ভার্বালে’র আকারে তুলে দেয়া হলো সাউথ ব্লকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা বা নীতিনির্ধারকরা বেশ কিছুদিন ধরেই আকারে ইঙ্গিতে বা খোলাখুলি বলে আসছিলেন যে তারা ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে তারা ফেরত চাইবেন, যাতে তাকে গণহত্যার জন্য বিচারের কাঠগড়ায় তোলা যায়।

কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে সে বার্তা বা চিঠি কিন্তু দিল্লির কাছে পাঠানো হচ্ছিল না। অবশেষে সেটা নোট ভার্বালের আকারে পাঠানো হলো।

নোট ভ‍ার্বাল হলো দু’দেশের সরকারের মধ্যে এক ধরনের ‘ডিপ্লোম্যাটিক কমিউনিকেশন’ বা কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যম- কিন্তু তাতে প্রেরকের কোনো স্বাক্ষর থাকে না।

তবে নোট ভার্বালের রীতি অনুযায়ী, ধরেই নেয়া যায় এক্ষেত্রেও বার্তাটি পাঠানো হয়েছে দিল্লির বাংলাদেশ দূতাবাসের লেটারহেডে এবং তাতে হাই কমিশনের রাবারস্ট্যাম্পও ছিল।

বার্তাটি হাতে পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দিল্লির পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে সেটির প্রাপ্তিস্বীকার করা হয়। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এটাও জানিয়ে দেন, তাদের এ বিষয়ে এখনই কিছু বলার নেই!

এরপর আরো কয়েকদিন কেটে গেছে, দিল্লির পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া যেমন দেয়া হয়নি, তেমনি বাংলাদেশকে নোট ভার্বালের কোনো জবাবও পাঠায়নি ভারত।

বস্তুত, ভারত সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সূত্র দিল্লিতে বিবিসি বাংলাকে আভাস দিয়েছেন, তারা এই অনুরোধকে আদৌ খুব একটা আমল দিচ্ছেন না।

তারপরেও এই বার্তার জবাব নিশ্চয় দেয়া হবে, কিন্তু তার জন্য দিল্লি কোনো ধরনের তাড়াহুড়ো করবে না বলেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

কেন ভারত সরকার ওই নোট ভার্বাল নিয়ে এরকম মনোভাব পোষণ করছে, কর্মকর্তা এবং বিশ্লেষকদের সাথে কথা বলে তার কারণগুলোই অনুসন্ধান করা হয়েছে বিবিসির এই প্রতিবেদনে।

‘সাক্ষ্যপ্রমাণের ফিরিস্তি কোথায়?’
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার যদিও দাবি করছে শেখ হাসিনাকে ফেরানোর প্রচেষ্টাকে তারা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। কিন্তু ভারত মনে করছে, তাদের পাঠানো বার্তা একটা ‘দায়সারা পদক্ষেপে’র চেয়ে বেশি কিছু নয় বলেই দাবি করা হয় বিবিসির প্রতিবেদনে।

দিল্লিতে শীর্ষস্থানীয় একজন সরকারি কর্মকর্তা বিবিসিকে বলছিলেন, ‘সত্যিই যদি বাংলাদেশ এই ব্যাপারটা নিয়ে সিরিয়াস হতো, তাহলে তো তারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগগুলো কী এবং তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণই বা কী, সেই বিবরণও পেশ করত। মানে যেমনটা একটা চার্জশিটে থাকে! এক-দু’পাতার একটা নোটে যে সেটা থাকতে পারে না, তা তো বলাই বাহুল্য!’

তার বক্তব্য, বাংলাদেশ সরকার আসলে তাদের দেশের মানুষকে এটা দেখাতে চাইছে যে তারা ভারতের কাছে প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানিয়ে দিয়েছে এবং ফলে ‘বল এখন ভারতের কোর্টে- আমাদের এখন আর কিছু করার নেই!’

ভারতের একজন সাবেক কূটনীতিবিদের কথায়, ‘আমার তো মনে হচ্ছে যেন বাংলাদেশ এই পদক্ষেপের মাধ্যমে যেন একটা বক্সে টিক দিয়ে দায়িত্ব সারলো- আমাদের প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানানোর কথা ছিল, জানিয়ে দিয়েছি – ব্যাস!’

কিন্তু শেখ হাসিনাকে ভারত বিচারের জন্য হস্তান্তর করবে- বাস্তবে এরকম সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই বাংলাদেশ হয়তো সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়নি, এমনটাও ধারণা করছেন তিনি।

প্রকৃত কারণটা যাই হোক, নোট ভার্বালে যে যুক্তি দেখিয়ে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হয়েছে, (জুলাই-অগাস্ট গণহত্যার বিচারের জন্য তাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে) সেটাকে ভারত আসলে জোরাল কোনো দাবি বলে মনেই করছে না বলেই দাবি করা হয় বিবিসির প্রতিবেদনে।

ভারতীয় সাবেক ওই কূটনীতিবিদ বলেন, ‘কারণটা হলো কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়া এ অভিযোগ জানানোর অর্থ এ বার্তার চরিত্র পুরোপুরি রাজনৈতিক। এখন দু'দেশের প্রত্যর্পণ চুক্তিতেই পরিষ্কার বলা আছে রাজনৈতিক অভিযোগে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে হস্তান্তর করা যাবে না। ফলে শেখ হাসিনার ক্ষেত্রেও নিশ্চয়ই সেই যুক্তিই প্রযোজ্য হবে।’

‘লেটার রোগেটরি দিলে তবু না হয় বুঝতাম!’
কোনো দেশের সাথে ভারতের প্রত্যর্পণ চুক্তি বা বিশেষ কোনো ব্যবস্থা বা অ্যারেঞ্জমেন্ট থাকলে সেই দেশের কোনো নাগরিককে ভারত তাদের হাতে তুলে দিতে পারে- যদি তিনি একজন ‘ফিউজিটিভ ক্রিমিনাল’ এফসি বা ফেরার আসামি হন।

এখন কোন কোন শর্তের অধীনে ভারত একজন ‘এফসি’-কে তার নিজ দেশের হাতে তুলে দিতে পারে, তার নিয়মকানুন খুব স্পষ্ট এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও তার পুরোটাই উল্লিখিত আছে।

এইসব রীতিনীতি কিছুটা নির্ভর করে বিশেষ ওই দেশের সাথে প্রত্যর্পণ চুক্তির বিশেষ ধারার ওপর। তবে মূল ধারাটা সব দেশের ক্ষেত্রেই এক, আর তা হলো যাকে ফেরত চাওয়া হচ্ছে তাকে কোনো ‘প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধে’র মামলায় ফেরার আসামি হতে হবে।

এখন শেখ হাসিনা যখন ভারতে এসে পৌঁছান, তখন তিনি কিন্তু কোনো ফেরার আসামি বা এফসি ছিলেন না।

ভারতের সাবেক শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিবিদ পিনাকরঞ্জন চক্রবর্তী এ যুক্তি দেখিয়েই বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘মনে রাখতে হবে ৫ আগস্ট তারিখেও শেখ হাসিনার নামে সে দেশে কোনো মামলা ছিল না। ফলে ভারত যখন তাকে আতিথেয়তা দিচ্ছে, সেই মুহূর্তে তিনি কিন্তু কোনো ফেরার আসামি নন।’

তিনি আরো যুক্তি দিচ্ছেন, ‘এখন শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর যদি তার বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে শত শত মামলা একসাধে দায়ের করা হতে থাকে, তাহলে এটা মনে করার যথেষ্ঠ কারণ থাকতে পারে এগুলো রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক- যার ভিত্তিতে প্রত্যর্পণের কোনো প্রশ্নই ওঠে না।’

তাহলে কি ধরেই নেয়া যেতে পারে, অনুরোধ যে আকারেই আসুক বা যতই জোরালে সাক্ষ্যপ্রমাণ পেশ করা হোক- ভারত কোনো অবস্থাতেই শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবে না?

পিনাকরঞ্জন চক্রবর্তী জবাবে বলছেন, ‘না বিষয়টা ঠিক সেরকম নয়। যদি সব নিয়ম মেনে এবং আঁটঘাট বেঁধে ভারতের কাছে এই অনুরোধ জানানো হয়, তাহলে ভারত নিশ্চয়ই সেটা বিবেচনা করবে।’

ঢাকায় ভারতের সাবেক এই হাই কমিশনারের ধারণা, এক্ষেত্রে একটি নোট ভার্বালের চেয়ে হয়তো অনেক বেশি কার্যকরী হতো একটি ‘লেটার রোগেটরি’।

ল্যাটিনে ‘রোগাটোরিয়াস’ কথার অর্থ হলো তথ্য জানতে চাওয়া। আর ‘লেটার রোগেটরি’ হলো এক দেশের আদালত যখন অন্য দেশের আদালতের কাছে কোনো বিষয়ে আইনি সহায়তা চেয়ে চিঠি দেয়।

সেটা কোনো অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ হতে পারে, কিংবা আইনি প্রক্রিয়ায় সাহায্য করার অনুরোধ হতে পারে।

সুতরাং, এক্ষেত্রে বাংলাদেশের আদালত বা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যদি ভারতের বিচার বিভাগের কাছে (সুপ্রিম কোর্ট) শেখ হাসিনার বিচার প্রক্রিয়ায় সহায়তা চেয়ে কোনো চিঠি দিত (লেটার রোগেটরি)- সেটার প্রভাব এই নোট ভার্বালের চেয়ে অনেক বেশি হতো বলে ভারতের কোনো কোনো পর্যবেক্ষক মনে করছেন।

তবে, এই ধরনের কোনো চিঠি পাঠানোর আগে সংশ্লিষ্ট বিচার প্রক্রিয়াতেও যথেষ্ঠ অগ্রগতি হওয়া দরকার। শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে তা এখনো আদৌ হয়েছে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ আছে দিল্লি বলেই উল্লেখ করেছে বিবিসি।

ভারতের শাসক দল বিজেপির ঘনিষ্ঠ পররাষ্ট্র নীতি বিশেষজ্ঞ শুভ্রকমল দত্ত বিবিসিকে বলেন, ‘ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়ার আগে আমি তো বলব মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের উচিত তাদের নিজেদের সেনাবাহিনীর কাছে জবাবদিহি চাওয়া, কেন তারা শেখ হাসিনাকে ভারতে যেতে দিল।’

বিসিসি উল্লেখ করে, শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর একটি মিলিটারি এয়ারক্র্যাফটে করেই দিল্লির কাছে হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে এসে অবতরণ করেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর এর পরদিনই মানে ৬ আগস্ট পার্লামেন্টে জানান, শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানটি যাতে দিল্লিতে এসে নামতে পারে, তার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তরফে ভারতের কাছে আগাম অনুমতি বা ফ্লাইট ক্লিয়ারেন্সও চাওয়া হয়েছিল।

শুভ্রকমল দত্ত বলেন, ‘ফলে, যে পরিস্থিতিতেই শেখ হাসিনা ভারতে এসে থাকুন, তার পেছনে বাংলাদেশের বর্তমান সেনা নেতৃত্বের একটা সক্রিয় ভূমিকা অবশ্যই ছিল- যা অস্বীকার করা কঠিন।’

তার কথায়, ‘বাস্তবিক শেখ হাসিনা এখন আমাদের অতিথি হতে পারেন, কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে- তাকে কিন্তু আমরা নিজে থেকে ডেকে আনিনি।’

ফলে ৫ আগস্টের সেই ঘটনাক্রম আজ শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের অনুরোধকে বেশ কিছুটা দুর্বল করে দিচ্ছে বলেই ভারতের বিশ্বাস। দিল্লিতে সাউথ ব্লকের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বলেন, ‘কারণ রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ (সেনাবাহিনী) তাকে ভারতে আসতে সাহায্য করেছে, আর এখন রাষ্ট্রেরই আর একটি স্তম্ভ (নির্বাহী বিভাগ) তাকে ভারত থেকে ফেরত চাইছে- এর মধ্যে তো একটা স্ববিরোধিতা আছেই।’

এই সব কারণেই বাংলাদেশের নোট ভার্বালের তড়িঘড়ি একটা জবাব দেয়া উচিত কিংবা শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের ব্যাপারে দ্রুত একটা সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত- তেমনটা ভারত মনে করছে না!
সূত্র : বিবিসি

পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার বন্ধ চান অধিকাংশ মানুষ

পুলিশ সংস্কার কমিশনের জনমত জরিপে বাহিনীটির রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধ চেয়েছেন বেশিরভাগ মানুষ।

ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিচারবহির্ভূত হত্যায় জড়িতদের বিচার নিশ্চিতেও কমিশন চেয়েছেন সচেতন নাগরিকরা।

সংস্কার কমিশন জানিয়েছে, প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে জনমত জরিপকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে নতুন বছরের শুরুতেই তারা প্রতিবেদনটি জমা দিতে পারবেন বলে মনে করছেন।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের বিতর্কিত ভূমিকার জন্য পুলিশ বাহিনীর ব্যাপক সংস্কারের দাবি ওঠে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও বিষয়টি আমলে নিয়ে গত অক্টোবরে ৭ সদস্যের কমিশন গঠন করে।

কমিশন কাজ শুরু করেই পুলিশ সংস্কারে ‘কেমন পুলিশ চাই’? শীর্ষক জনমত জরিপ শুরু করে। ১৫ দিনের জরিপে প্রায় সাড়ে ২৪ হাজার মানুষ মতামত দিয়েছেন।

জরিপে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে বাহিনীটির রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধে। এরপর আছে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি বন্ধ এবং গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যায় দায়ী পুলিশের বিচারে কমিশন গঠন।

ট্রিপল নাইন সেবা, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, অলনাইন জিডিসহ পুলিশের ৮টি সেবাধর্মী কাজের গতি বাড়ানোরও সুপারিশ করা হয়েছে জরিপে। সংস্কার কমিশন বলছে, ৫৪ ধারার অপব্যবহার বন্ধের পক্ষে তারাও। একইসঙ্গে গায়েবি মামলা বন্ধের পাশাপাশি সভা-সমাবেশে মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ এবং রিমান্ডে নির্যাতন বন্ধের সুপারিশও থাকবে কমিশনের প্রতিবেদনে।

পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য এ এস এম নাসিরউদ্দিন এলান বলেন, আলোচনার মধ্যে আমরা চেষ্টা করেছি এমন একটা সুপারিশ করতে পারি যাতে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত এবং জনগণের বন্ধু একটা পুলিশ দিতে পারি। জনমত জরিপকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই জমা দেয়া হবে।

তিনি বলেন, জরিপটা করেছিই জনগণের মতামত নেয়ার জন্য। মানুষ যে মতামতটা দিয়েছে সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তারা ভুক্তভোগী হয়েই মতামত দিয়েছে। এই কারণে তাদের মতামতের ওপর আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা আশা করছি, জানুয়ারির ৫ তারিখে মধ্যে একটা প্রতিবেদন তৈরি করতে পারবো।

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নের কাজ অন্তর্বর্তী সরকারকেই শুরু করতে হবে মনে করেন সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক।

তিনি বলেন, কাঠামোগত যে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে সেটার বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে। এর ফলাফল যখন মানুষ দেখতে শুরু করবে, তখন রাজনৈতিক দলের সরকার এলে তাদের জন্যও ধারাবাহিকতা বজায় রাখার একটা চাপ তৈরি হবে।

গুমে শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা পেয়েছে কমিশন

জোরপূর্বক গুমের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি। সেইসাথে তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী অভিযুক্ত করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‌্যাব) বিলুপ্ত করার সুপারিশ করেছে।

শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গুম সংক্রান্ত কমিশন তাদের প্রথম অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিশন ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ শীর্ষক এ প্রতিবেদন হস্তান্তর করে।

জমা দেওয়া রিপোর্টে কমিশন সদস্যরা জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত প্রাপ্ত ১ হাজার ৬৭৬টি অভিযোগের মধ্যে ৭৫৮ জনের অভিযোগ যাচাই-বাছাই করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে– গুমের ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে কমিশন। এছাড়াও হাসিনা প্রশাসনের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে; যাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান এবং পুলিশ কর্মকর্তা মো: মনিরুল ইসলাম ও মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

প্রতিবেদনে গুমের শিকার ব্যক্তিদের বিচারিক প্রক্রিয়া শুরুসহ র‍্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে কমিশন।

কমিশন প্রধান মইনুল ইসলাম চৌধুরী জানান, গুমের সাথে জড়িত কর্মকর্তারা কাজটি এমনভাবে করেছেন যাতে এগুলো শনাক্ত করা কঠিন হয়ে যায়। বিভিন্ন ফোর্স নিজেদের মধ্যে ভিকটিম বিনিময় করেছে এবং পরিকল্পনা ভিন্ন ভিন্নভাবে বাস্তবায়ন করেছে।

কমিশনের সদস্য হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো: ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকারকর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস ও মানবাধিকার কর্মী সাজ্জাদ হোসেন এসময় উপস্থিত ছিলেন।

আরো উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ।

বিচার বিভাগকে সরকারের কর্তৃত্ব থেকে আলাদা করতে হবে : সাকি

দেশের বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও সরকারের কর্তৃত্ব থেকে আলাদা করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী ও স্বনির্ভর করতে হবে। সমস্ত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র হতে হবে স্থানীয় সরকার।

 

শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) খুলনা প্রেসক্লাবের লিয়াকত আলী মিলনায়তনে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এক গণসংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।

জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমরা মনে করি, সরকার, রাজনৈতিক দল, শিক্ষার্থী, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষসহ দেশের জনগণ আজ ঐক্যবদ্ধ। জনগণ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য লড়াই করবে।’

তিনি বলেন, ‘ভারতীয় শক্তির পক্ষে সমর্থিত হয়ে আওয়ামী লীগ এখন হিন্দু সম্প্রদায়কে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে ভারতে বিজেপির ভোটের রাজনীতিতে হাওয়া দিচ্ছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব তাদের এসব ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতার ফলে আজ হুমকির সম্মুখীন। এদের রুখতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এ সরকারের ব্যর্থতার কোনো সুযোগ নেই। কীভাবে সফল করা যায় সেই বিষয়েই রাজনৈতিক ঐক্য তৈরি করতে হবে। এছাড়া সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনা ও গণতান্ত্রিক উত্তরণে সাফল্যের জন্য সকল রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, ‘আমরা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চাই, যা গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক। শেখ হাসিনা যে ব্যবস্থা তৈরি করেছেন, তাকে একটি ফ্যাসিস্ট বন্দোবস্তে পরিণত করা হয়েছে। সংবিধান এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে কেউ কিছুই করতে না পারে। এছাড়া রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে পকেটে ঢুকিয়ে যা ইচ্ছা তাই করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের সংগ্রামের ফলাফল যাতে আবারো ছিনতাই হয়ে না যায় সেদিকে সকলের নজর রাখতে হবে। সংগ্রামের শক্তিগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির যেকোনো প্রচেষ্টা রুখে দিতে হবে।’

গণসংলাপে সভাপতিত্ব করেন গণসংহতি আন্দোলনের খুলনা জেলা কমিটির আহ্বায়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল।

সূত্র : ইউএনবি


জনপ্রিয় সংবাদ

বিচার বিভাগকে সরকারের কর্তৃত্ব থেকে আলাদা করতে হবে : সাকি

দেশের বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও সরকারের কর্তৃত্ব থেকে আলাদা করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী ও স্বনির্ভর করতে হবে। সমস্ত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র হতে হবে স্থানীয় সরকার।

 

শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) খুলনা প্রেসক্লাবের লিয়াকত আলী মিলনায়তনে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এক গণসংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।

জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমরা মনে করি, সরকার, রাজনৈতিক দল, শিক্ষার্থী, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষসহ দেশের জনগণ আজ ঐক্যবদ্ধ। জনগণ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য লড়াই করবে।’

তিনি বলেন, ‘ভারতীয় শক্তির পক্ষে সমর্থিত হয়ে আওয়ামী লীগ এখন হিন্দু সম্প্রদায়কে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে ভারতে বিজেপির ভোটের রাজনীতিতে হাওয়া দিচ্ছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব তাদের এসব ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতার ফলে আজ হুমকির সম্মুখীন। এদের রুখতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এ সরকারের ব্যর্থতার কোনো সুযোগ নেই। কীভাবে সফল করা যায় সেই বিষয়েই রাজনৈতিক ঐক্য তৈরি করতে হবে। এছাড়া সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনা ও গণতান্ত্রিক উত্তরণে সাফল্যের জন্য সকল রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, ‘আমরা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চাই, যা গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক। শেখ হাসিনা যে ব্যবস্থা তৈরি করেছেন, তাকে একটি ফ্যাসিস্ট বন্দোবস্তে পরিণত করা হয়েছে। সংবিধান এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে কেউ কিছুই করতে না পারে। এছাড়া রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে পকেটে ঢুকিয়ে যা ইচ্ছা তাই করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের সংগ্রামের ফলাফল যাতে আবারো ছিনতাই হয়ে না যায় সেদিকে সকলের নজর রাখতে হবে। সংগ্রামের শক্তিগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির যেকোনো প্রচেষ্টা রুখে দিতে হবে।’

গণসংলাপে সভাপতিত্ব করেন গণসংহতি আন্দোলনের খুলনা জেলা কমিটির আহ্বায়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল।

সূত্র : ইউএনবি

হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর বার্তাকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে ভারত?

গত ২৩ ডিসেম্বর সকালে দিল্লির চাণক্যপুরীতে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়ার বার্তা ‘নোট ভার্বালে’র আকারে তুলে দেয়া হলো সাউথ ব্লকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা বা নীতিনির্ধারকরা বেশ কিছুদিন ধরেই আকারে ইঙ্গিতে বা খোলাখুলি বলে আসছিলেন যে তারা ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে তারা ফেরত চাইবেন, যাতে তাকে গণহত্যার জন্য বিচারের কাঠগড়ায় তোলা যায়।

কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে সে বার্তা বা চিঠি কিন্তু দিল্লির কাছে পাঠানো হচ্ছিল না। অবশেষে সেটা নোট ভার্বালের আকারে পাঠানো হলো।

নোট ভ‍ার্বাল হলো দু’দেশের সরকারের মধ্যে এক ধরনের ‘ডিপ্লোম্যাটিক কমিউনিকেশন’ বা কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যম- কিন্তু তাতে প্রেরকের কোনো স্বাক্ষর থাকে না।

তবে নোট ভার্বালের রীতি অনুযায়ী, ধরেই নেয়া যায় এক্ষেত্রেও বার্তাটি পাঠানো হয়েছে দিল্লির বাংলাদেশ দূতাবাসের লেটারহেডে এবং তাতে হাই কমিশনের রাবারস্ট্যাম্পও ছিল।

বার্তাটি হাতে পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দিল্লির পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে সেটির প্রাপ্তিস্বীকার করা হয়। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এটাও জানিয়ে দেন, তাদের এ বিষয়ে এখনই কিছু বলার নেই!

এরপর আরো কয়েকদিন কেটে গেছে, দিল্লির পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া যেমন দেয়া হয়নি, তেমনি বাংলাদেশকে নোট ভার্বালের কোনো জবাবও পাঠায়নি ভারত।

বস্তুত, ভারত সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সূত্র দিল্লিতে বিবিসি বাংলাকে আভাস দিয়েছেন, তারা এই অনুরোধকে আদৌ খুব একটা আমল দিচ্ছেন না।

তারপরেও এই বার্তার জবাব নিশ্চয় দেয়া হবে, কিন্তু তার জন্য দিল্লি কোনো ধরনের তাড়াহুড়ো করবে না বলেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

কেন ভারত সরকার ওই নোট ভার্বাল নিয়ে এরকম মনোভাব পোষণ করছে, কর্মকর্তা এবং বিশ্লেষকদের সাথে কথা বলে তার কারণগুলোই অনুসন্ধান করা হয়েছে বিবিসির এই প্রতিবেদনে।

‘সাক্ষ্যপ্রমাণের ফিরিস্তি কোথায়?’
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার যদিও দাবি করছে শেখ হাসিনাকে ফেরানোর প্রচেষ্টাকে তারা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। কিন্তু ভারত মনে করছে, তাদের পাঠানো বার্তা একটা ‘দায়সারা পদক্ষেপে’র চেয়ে বেশি কিছু নয় বলেই দাবি করা হয় বিবিসির প্রতিবেদনে।

দিল্লিতে শীর্ষস্থানীয় একজন সরকারি কর্মকর্তা বিবিসিকে বলছিলেন, ‘সত্যিই যদি বাংলাদেশ এই ব্যাপারটা নিয়ে সিরিয়াস হতো, তাহলে তো তারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগগুলো কী এবং তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণই বা কী, সেই বিবরণও পেশ করত। মানে যেমনটা একটা চার্জশিটে থাকে! এক-দু’পাতার একটা নোটে যে সেটা থাকতে পারে না, তা তো বলাই বাহুল্য!’

তার বক্তব্য, বাংলাদেশ সরকার আসলে তাদের দেশের মানুষকে এটা দেখাতে চাইছে যে তারা ভারতের কাছে প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানিয়ে দিয়েছে এবং ফলে ‘বল এখন ভারতের কোর্টে- আমাদের এখন আর কিছু করার নেই!’

ভারতের একজন সাবেক কূটনীতিবিদের কথায়, ‘আমার তো মনে হচ্ছে যেন বাংলাদেশ এই পদক্ষেপের মাধ্যমে যেন একটা বক্সে টিক দিয়ে দায়িত্ব সারলো- আমাদের প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানানোর কথা ছিল, জানিয়ে দিয়েছি – ব্যাস!’

কিন্তু শেখ হাসিনাকে ভারত বিচারের জন্য হস্তান্তর করবে- বাস্তবে এরকম সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই বাংলাদেশ হয়তো সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়নি, এমনটাও ধারণা করছেন তিনি।

প্রকৃত কারণটা যাই হোক, নোট ভার্বালে যে যুক্তি দেখিয়ে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হয়েছে, (জুলাই-অগাস্ট গণহত্যার বিচারের জন্য তাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে) সেটাকে ভারত আসলে জোরাল কোনো দাবি বলে মনেই করছে না বলেই দাবি করা হয় বিবিসির প্রতিবেদনে।

ভারতীয় সাবেক ওই কূটনীতিবিদ বলেন, ‘কারণটা হলো কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়া এ অভিযোগ জানানোর অর্থ এ বার্তার চরিত্র পুরোপুরি রাজনৈতিক। এখন দু'দেশের প্রত্যর্পণ চুক্তিতেই পরিষ্কার বলা আছে রাজনৈতিক অভিযোগে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে হস্তান্তর করা যাবে না। ফলে শেখ হাসিনার ক্ষেত্রেও নিশ্চয়ই সেই যুক্তিই প্রযোজ্য হবে।’

‘লেটার রোগেটরি দিলে তবু না হয় বুঝতাম!’
কোনো দেশের সাথে ভারতের প্রত্যর্পণ চুক্তি বা বিশেষ কোনো ব্যবস্থা বা অ্যারেঞ্জমেন্ট থাকলে সেই দেশের কোনো নাগরিককে ভারত তাদের হাতে তুলে দিতে পারে- যদি তিনি একজন ‘ফিউজিটিভ ক্রিমিনাল’ এফসি বা ফেরার আসামি হন।

এখন কোন কোন শর্তের অধীনে ভারত একজন ‘এফসি’-কে তার নিজ দেশের হাতে তুলে দিতে পারে, তার নিয়মকানুন খুব স্পষ্ট এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও তার পুরোটাই উল্লিখিত আছে।

এইসব রীতিনীতি কিছুটা নির্ভর করে বিশেষ ওই দেশের সাথে প্রত্যর্পণ চুক্তির বিশেষ ধারার ওপর। তবে মূল ধারাটা সব দেশের ক্ষেত্রেই এক, আর তা হলো যাকে ফেরত চাওয়া হচ্ছে তাকে কোনো ‘প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধে’র মামলায় ফেরার আসামি হতে হবে।

এখন শেখ হাসিনা যখন ভারতে এসে পৌঁছান, তখন তিনি কিন্তু কোনো ফেরার আসামি বা এফসি ছিলেন না।

ভারতের সাবেক শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিবিদ পিনাকরঞ্জন চক্রবর্তী এ যুক্তি দেখিয়েই বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘মনে রাখতে হবে ৫ আগস্ট তারিখেও শেখ হাসিনার নামে সে দেশে কোনো মামলা ছিল না। ফলে ভারত যখন তাকে আতিথেয়তা দিচ্ছে, সেই মুহূর্তে তিনি কিন্তু কোনো ফেরার আসামি নন।’

তিনি আরো যুক্তি দিচ্ছেন, ‘এখন শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর যদি তার বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে শত শত মামলা একসাধে দায়ের করা হতে থাকে, তাহলে এটা মনে করার যথেষ্ঠ কারণ থাকতে পারে এগুলো রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক- যার ভিত্তিতে প্রত্যর্পণের কোনো প্রশ্নই ওঠে না।’

তাহলে কি ধরেই নেয়া যেতে পারে, অনুরোধ যে আকারেই আসুক বা যতই জোরালে সাক্ষ্যপ্রমাণ পেশ করা হোক- ভারত কোনো অবস্থাতেই শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবে না?

পিনাকরঞ্জন চক্রবর্তী জবাবে বলছেন, ‘না বিষয়টা ঠিক সেরকম নয়। যদি সব নিয়ম মেনে এবং আঁটঘাট বেঁধে ভারতের কাছে এই অনুরোধ জানানো হয়, তাহলে ভারত নিশ্চয়ই সেটা বিবেচনা করবে।’

ঢাকায় ভারতের সাবেক এই হাই কমিশনারের ধারণা, এক্ষেত্রে একটি নোট ভার্বালের চেয়ে হয়তো অনেক বেশি কার্যকরী হতো একটি ‘লেটার রোগেটরি’।

ল্যাটিনে ‘রোগাটোরিয়াস’ কথার অর্থ হলো তথ্য জানতে চাওয়া। আর ‘লেটার রোগেটরি’ হলো এক দেশের আদালত যখন অন্য দেশের আদালতের কাছে কোনো বিষয়ে আইনি সহায়তা চেয়ে চিঠি দেয়।

সেটা কোনো অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ হতে পারে, কিংবা আইনি প্রক্রিয়ায় সাহায্য করার অনুরোধ হতে পারে।

সুতরাং, এক্ষেত্রে বাংলাদেশের আদালত বা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যদি ভারতের বিচার বিভাগের কাছে (সুপ্রিম কোর্ট) শেখ হাসিনার বিচার প্রক্রিয়ায় সহায়তা চেয়ে কোনো চিঠি দিত (লেটার রোগেটরি)- সেটার প্রভাব এই নোট ভার্বালের চেয়ে অনেক বেশি হতো বলে ভারতের কোনো কোনো পর্যবেক্ষক মনে করছেন।

তবে, এই ধরনের কোনো চিঠি পাঠানোর আগে সংশ্লিষ্ট বিচার প্রক্রিয়াতেও যথেষ্ঠ অগ্রগতি হওয়া দরকার। শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে তা এখনো আদৌ হয়েছে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ আছে দিল্লি বলেই উল্লেখ করেছে বিবিসি।

ভারতের শাসক দল বিজেপির ঘনিষ্ঠ পররাষ্ট্র নীতি বিশেষজ্ঞ শুভ্রকমল দত্ত বিবিসিকে বলেন, ‘ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়ার আগে আমি তো বলব মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের উচিত তাদের নিজেদের সেনাবাহিনীর কাছে জবাবদিহি চাওয়া, কেন তারা শেখ হাসিনাকে ভারতে যেতে দিল।’

বিসিসি উল্লেখ করে, শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর একটি মিলিটারি এয়ারক্র্যাফটে করেই দিল্লির কাছে হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে এসে অবতরণ করেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর এর পরদিনই মানে ৬ আগস্ট পার্লামেন্টে জানান, শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানটি যাতে দিল্লিতে এসে নামতে পারে, তার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তরফে ভারতের কাছে আগাম অনুমতি বা ফ্লাইট ক্লিয়ারেন্সও চাওয়া হয়েছিল।

শুভ্রকমল দত্ত বলেন, ‘ফলে, যে পরিস্থিতিতেই শেখ হাসিনা ভারতে এসে থাকুন, তার পেছনে বাংলাদেশের বর্তমান সেনা নেতৃত্বের একটা সক্রিয় ভূমিকা অবশ্যই ছিল- যা অস্বীকার করা কঠিন।’

তার কথায়, ‘বাস্তবিক শেখ হাসিনা এখন আমাদের অতিথি হতে পারেন, কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে- তাকে কিন্তু আমরা নিজে থেকে ডেকে আনিনি।’

ফলে ৫ আগস্টের সেই ঘটনাক্রম আজ শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের অনুরোধকে বেশ কিছুটা দুর্বল করে দিচ্ছে বলেই ভারতের বিশ্বাস। দিল্লিতে সাউথ ব্লকের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বলেন, ‘কারণ রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ (সেনাবাহিনী) তাকে ভারতে আসতে সাহায্য করেছে, আর এখন রাষ্ট্রেরই আর একটি স্তম্ভ (নির্বাহী বিভাগ) তাকে ভারত থেকে ফেরত চাইছে- এর মধ্যে তো একটা স্ববিরোধিতা আছেই।’

এই সব কারণেই বাংলাদেশের নোট ভার্বালের তড়িঘড়ি একটা জবাব দেয়া উচিত কিংবা শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের ব্যাপারে দ্রুত একটা সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত- তেমনটা ভারত মনে করছে না!
সূত্র : বিবিসি

পাকিস্তান তালেবানের হামলায় ১৬ সেনা নিহত

আফগানিস্তান সীমান্তের কাছে পাকিস্তান তালেবানের হামলায় অন্তত ১৬ সেনা নিহত হয়েছেন। পাকিস্তানের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিহতের পাশাপাশি আরও পাঁচজন আহত হয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাকিস্তানের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যম এএফপিকে জানিয়েছেন, তিন দিক থেকে সেনাদের তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালানো হয়। যা প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলে।

তিনি বলেছেন, হামলায় ১৬ জন নিহত হয়েছেন ও পাঁচজন মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। এ সময় জঙ্গীরা সেনাবাহিনীর বিভিন্ন সরঞ্জাম জ্বালিয়ে দেয়।

অন্য এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের মাকিন এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে, যা আফগানিস্তান সীমান্ত থেকে ৪০ কিলোমিটার ভেতরে।

পাকিস্তান তালেবান এক বিবৃতি দিয়ে এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। জানিয়েছে, তাদের শীর্ষ কমান্ডারদের হত্যার বদলা নিতেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিক দল করলে ভোট দেবেন ৪০ শতাংশ মানুষ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীরা যদি রাজনৈতিক দল গঠন করেন, তবে ওই দলকে ৪০ শতাংশ মানুষ ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন। আর ৪৪ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তারা শিক্ষার্থীদের দলকে ভোট দেয়ার কথা ভাবছেন না। আর ১৬ শতাংশ মানুষ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) ‘পালস সার্ভের’ দ্বিতীয় ধাপের জরিপের ফলাফলে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশে (পিআইবি) আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

জরিপটি দেশের গ্রাম ও শহরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার চার হাজার ১৫৮ মানুষের মতামতের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে। এর মধ্যে ৫৩ শতাংশ পুরুষ ও ৪৭ শতাংশ নারী অংশগ্রহণ করেন।

জরিপে উঠে এসেছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। যেমন, দেশে যদি এখন নির্বাচন হয়, তবে ৩৮ শতাংশ মানুষ এখনো ভোট দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেননি। বাকি ৬২ শতাংশ মানুষের মধ্যে ১৬ শতাংশ বিএনপিকে, ১১ শতাংশ জামায়াতে ইসলামকে এবং ৯ শতাংশ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন।

অনুষ্ঠানে জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন বিআইজিডির গবেষণা সহযোগী শেখ আরমান তামিম। তিনি জানান, জরিপে রাজনীতি, অর্থনীতি, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং সংস্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে মানুষের মতামত সংগ্রহ করা হয়েছে।

জরিপ প্রকাশের পর আয়োজিত প্যানেল আলোচনায় বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অর্থনীতিবিদ আহমেদ আহসান, পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফসহ অন্যান্য বিশ্লেষকরা জরিপের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।

পুরুষ যখন বাবা হন, তখন তাদের কী ধরনের পরিবর্তন ঘটে

নারীরা যখন মা হন তখন তাদের মধ্যে স্পষ্টতই অনেক ধরনের শারীরিক পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু পুরুষরা যখন বাবা হন তখন তাদের দেহেও যে কিছু পরিবর্তন ঘটে। সেটা কি বাবারা উপলদ্ধি করতে পারেন?

‘একমাত্র যে শারীরিক পরিবর্তন আমি লক্ষ্য করেছি, সেটা হচ্ছে আমার ওজন বেড়ে গিয়েছিল। আমার শরীর হয়ে উঠছিল একজন পিতার শরীর,’ বলেন ছয় মাস বয়সী এক শিশু সন্তানের বাবা টম।

কিন্তু না, বাবা হলে যে শুধু পুরুষের ওজন কয়েক কেজি বেড়ে যায় তা নয়। এর বাইরেও আরো কিছু পরিবর্তন ঘটে।

“মা ও বাবা- দু’জনেই শারীরিকভাবে শিশুর পিতামাতা,” বলেন ড. আন্না মাশিন, যিনি পিতৃত্বের ওপর একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। বইটির নাম: ‘পিতার জীবন: একজন আধুনিক পিতা হয়ে ওঠা।’

‘পিতৃত্বের বিষয়ে এই উপলব্ধি নতুন এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়- অতীতে আমরা মনে করতাম যে শুধু নারীরাই শারীরিক পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যায়। কিন্তু আসলে সন্তানধারণ ও শিশুর জন্মদানের মতো বিষয়ে পুরুষের মধ্যেও একই ধরনের পরিবর্তন ঘটে থাকে,’ বলেন তিনি।

এটা ঠিক যে একজন পুরুষ নারীদের মতো নয় মাস ধরে তার পেটে সন্তানকে বড় করে না, তিনি সন্তান প্রসবও করেন না এবং সন্তানের জন্য তার দেহে দুধও উৎপন্ন হয় না।

কিন্তু তারাও একই ধরনের পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হয়, যা বাইরে থেকে খালি চোখে দেখা যায় না।

‘বড় ধরনের দুটো পরিবর্তন ঘটে। আপনি যখন প্রথমবারের মতো বাবা হবেন তখন আপনার দেহের হরমোন ও মস্তিষ্কে কিছু পরিবর্তন ঘটবে,’ ড. আন্না ব্যাখ্যা করেন।

হরমোনজনিত প্রভাব
হরমোনজনিত সবচেয়ে বড় যে পরিবর্তন ঘটে, সেটি হচ্ছে টেস্টোস্টেরন হরমোনের নিঃসরণ কমে যাওয়া। এটি পুরুষের সেক্স হরমোন।

‘সন্তান উৎপাদনের জন্য যৌনমিলনের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে। কারণ এই হরমোন আপনাকে সঙ্গীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার ব্যাপারে আপনাকে সক্রিয় ও উৎসাহিত করে তোলে,’ বলেন আন্না।

কিন্তু আপনি যখন বাবা হয়ে যান, তখন এই টেস্টোস্টেরন নিঃসরণের মাত্রা কমে গিয়ে বাবা হিসেবে নতুন ভূমিকা পালনের জন্য আপনার দেহকে প্রস্তুত করে তোলে।

‘যেসব পুরুষের দেহে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কম থাকে, তারা তাদের সন্তানের প্রতি অনেক বেশি স্পর্শকাতর ও সহানুভূতিশীল হয়। এর ফলে তারা তাদের সন্তানদের যত্ন নেয়ার ব্যাপারে অনুপ্রাণিত হয়।’

‘একজন শিশু যখন কাঁদতে শুরু করে, যেসব পুরুষের শরীরে উচ্চমাত্রা টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসৃত হয় তারা এতে বিরক্ত হয়। কিন্তু যাদের দেহে টেস্টোস্টেরণ কম থাকে তারা সন্তানের কান্নায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।’

সম্প্রতি প্রথমবারের মতো বাবা হয়েছেন মার্ক।, তিনি বলেন, ‘বাবা হওয়ার আগে আমার এক ছোট্ট ভাতিজা কাঁদতে শুরু করলে আমি ভাবতাম কেউ এসে ওকে সামলাতে পারবে কি না। কিন্তু যেই মুহূর্তে আমি নিজে বাবা হয়ে গেলাম, আমার সন্তান কাঁদতে থাকলে তাকে সামলানোর জন্য আমি নিজে কিছু করতে উদ্যোগী হয়ে উঠলাম।’

টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যাওয়ার কারণে বাবারা অনেক বেশি ধৈর্যশীল হয়ে ওঠে, যা একটি শিশুর জন্য বেশ সহায়ক।

“আমি এখন আর হতাশ হই না। সেদিন আমি গাড়িতে ছিলাম। আরেকজন একটা কাজ করছিল। কিন্তু সেই কাজটা করতে তার অনেক সময় লাগছিল। কিন্তু আমি বেশ শান্ত ছিলাম, ভেবেছিলাম ‘যাই হোক’। এধরনের বিষয় আমরা কাছে এখন আর খুব বড় কোনো বিষয় নয়,” বলেন মার্ক।

টেস্টোস্টেরনের নিঃসরণ কমে যাওয়ার ফলে বাবার সাথে সন্তানের সম্পর্কের ওপরেও এর একটা বড় ধরনের প্রভাব পড়ে।

‘টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বেশি হলে সেটা অক্সিটোসিন এবং ডোপামিনের ইতিবাচক প্রভাবকে আটকে দেয়,’ বলেন আন্না।

শিশু সন্তানের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে এই দু’টি রাসায়নিক পদার্থ পালন করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

আপনি যখন শিশু সন্তানকে জড়িয়ে ধরেন এবং তাদের সাথে মেলামেশা করেন অথবা কথাবার্তা বলেন তখন এই অক্সিটোসিন এবং ডোপামিন উৎপন্ন হয় যা আপনাকে চাঙ্গা করে তোলে।

‘আপনি যখন সবেমাত্র বাবা হন, তখন আপনার দেহে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কম থাকে। ফলে অক্সিটোসিন এবং ডোপামিনের প্রভাব খুব বেশি হয়। ফলে শিশু সন্তানের সাথে কথা বলা এবং তাদের সাথে খেলা করা আপনার জন্য অনেক বেশি আনন্দদায়ক হয়ে ওঠে।’

টমের নিয়মিতই এই অভিজ্ঞতা হচ্ছে, যখন সে (শিশু সন্তান) হাসে তখন আসলেই এর চেয়ে ভালো অনুভূতি আর কিছু হয় না, বলেন তিনি।

পরিবর্তনের এই সবটাই এরকম সুখকর নয়, সতর্ক করে দিয়েছেন আন্না। তিনি বলেন, ‘টেস্টোস্টেরন হরমোন পুরুষকে চাঙ্গা রাখে। এটি তাদের মানসিক অবস্থাকে খারাপ হতে দেয় না।’

‘কিন্তু যখন এই হরমোন কমে যায় এবং তার সঙ্গে ব্যক্তিগত ও কর্মজীবনের আরো কিছু ঝামেলা এসে যুক্ত হয় এবং স্ত্রী বা সঙ্গী প্রসব-পরবর্তী বিষণ্ণতায় ভোগেন, তখন পুরুষের মধ্যেও এই একই ধরনের বিষণ্ণতা দেখা দিতে পারে,’ বলেন তিনি।

আন্না বলছেন, শরীরের হরমোন এবং তাদের প্রভাব সম্পর্কে জানা থাকলে সেটা আমাকে মানসিকভাবে সুস্থ থাকার ব্যাপারে আরো বেশি সচেতন হতে সাহায্য করতে পারে।

‘একজন নারী হিসেবে আপনি ভাবতে পারেন যে আমি জানি যে আমার হরমোনের কারণেই এমনটা হচ্ছে, আমি যে এরকম খারাপ অনুভব করছি তার একটা কারণ আমার হরমোন, তখন এসব আপনাকে সাহায্য করতে পারে। আবার পুরুষরা যদি এটা জানেন যে হরমোনজনিত পরিবর্তন তাকে কখনো কখনো কিভাবে নাজুক ও অসহায় করে তুলতে পারে, তাহলে তারাও তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে পারবেন,’ বলেন তিনি।

বাবা ও সন্তান দু’জনের জন্যেই উপকারী
শিশু সন্তানের সাথে খেলা করা ও তাকে জড়িয়ে ধরার কারণে বাবার দেহে যে ডোপামিন ও অক্সিটোসিনের নিঃসৃত হয় তার ফলে তাদের দেহে যে ধরনের পরিবর্তন ঘটে তাতে শিশু ও বাবা দু’জনেই লাভবান হয়।

বাবার মতো এই একই রাসায়নিকের নিঃসরণ ঘটে শিশুদের শরীরেও।

ফলে তারা দু’জনেই একেবারে শুরু থেকে স্পর্শ, জড়িয়ে ধরা এবং মাসাজ ইত্যাদির মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে তোলার কাজটা শুরু করতে পারেন।

সন্তান বড় হওয়ার সময় তাদের দেহে সবচেয়ে বেশি অক্সিটোসিন নিঃসৃত হয়। ফলে পিতার সাথে তাদের সম্পর্ক তখন আরো বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে।

‘কোনো বাবা যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন যে আমার সন্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে হলে আমাকে কী করতে হবে?, আমি তাকে বলব তাদের সঙ্গে খেলা করুন,’ বলেন আন্না।

‘দারুণ ব্যাপার হচ্ছে শিশু ও বাবার মধ্যে এই পরিবর্তন ঘটছে যা দু’জনের সঙ্গেই জড়িত এবং দু’জনের ওপরেই তার প্রভাব পড়ছে। যখন তারা একসঙ্গে খেলা করে তখনই তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অক্সিটোসিন নিঃসৃত হয়।’

আন্না বলছেন, শিশুর বিকাশের জন্য তার সঙ্গে বাবার শারীরিকভাবে খেলাধুলা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে যে আপনার সন্তানের দেহে প্রচুর পরিমাণে অক্সিটোসিনের নিঃসরণ ঘটবে শুধু তাই নয়, এর ফলে তারা বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার করার উপায়ও শিখতে পারবে। তারা শিখতে পারবে পড়ে গেলে কিভাবে উঠে দাঁড়াতে হয় এবং একবার ব্যর্থ হলে সেটা কাটিয়ে ওঠে কিভাবে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হয়। এবং যেসব শিশু এধরনের খেলায় অংশ নেয়, তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেক বেশি অদম্য ও অপরাজেয় হয়ে ওঠে, যেকোনো খারাপ অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকে।

“অতীতে বাবাদের ‘ফান প্যারেন্ট’ হিসেবে দেখা হতো যারা শিশুদের চকলেটসহ নানা জিনিস উপহার দিতেন। কিন্তু শিশুদের বিকাশের জন্য তাদের সঙ্গে খেলাধুলা করা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ।”

মস্তিষ্কে ইতিবাচক পরিবর্তন
আপনি যখন একজন বাবা হবেন তখন হরমোনের মাত্রায় পরিবর্তনের পাশাপাশি আপনার মস্তিষ্কেও কিছু শারীরিক পরিবর্তন ঘটে।

‘শিশু সন্তানকে ভালো মতো দেখাশোনা করার জন্য আমাদের মস্তিষ্কের যে অংশের প্রয়োজন হয় সেসব জায়গায় পরিবর্তন ঘটে,’ বলেন আন্না।

‘একটা উদাহরণ দেয়া যাক- আউটার ব্রেইন বা বহির্মস্তিষ্কের কিছু অংশ বেড়ে যায়। পরিকল্পনা, মনোযোগ দেয়া এবং সমস্যা সমাধানের মতো দক্ষতার জন্য মস্তিষ্কের এই অংশের প্রয়োজন হয়। আর মস্তিষ্কের অবচেতন অংশে (আনকনশাস ব্রেইন) আমরা সেসব জায়গায় তৎপরতা দেখতে পাই যেগুলো শিশু প্রতিপালন এবং ঝুঁকি চিহ্নিত করার জন্য প্রয়োজন হয়। আপনার শিশু নিরাপদে আছে কি না সেটা জানার জন্য এগুলোর প্রয়োজন নয়।’

টম নিজেও এই পরিবর্তনটা স্পষ্ট বুঝতে পারছেন। ‘আপনি সবসময় উদ্বিগ্ন বোধ করছেন। আর কিছু না হলেও এই উদ্বেগ আগের চাইতে বেশি। আমি যখন সন্তানকে নিয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাই, তখন পেছনে তাকিয়ে দেখি কোনো গাড়ি আমার দিকে চলে আসছে কি না!’

একই সাথে আপনি ঝুঁকির ব্যাপারেও অনেক বেশি সচেতন হয়ে উঠছেন। বাবারা প্রায়ই স্পর্শকাতর হয়ে ওঠেন, বিশেষ করে তার সন্তানের বিষয়ে।

‘অন্যের দুঃখ কষ্টের ব্যাপারে আপনি আরো বেশি সংবেদনশীল এবং তাদের প্রতি আরো বেশি সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠেন,’ বলেন আন্না।

‘আমি অনেক বাবার সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলবে - শিশুদের ব্যাপারে যেসব খবর দেখানো হয় আমি আর সেগুলো দেখতে পারি না।’

টমের বেলাতেও তাই হয়েছে। ‘আমার খুব কান্না পায়। এটা আমাকে আগে প্রভাবিত করত না, কিন্তু এটা সত্যিই আমার ওপর প্রভাব ফেলছে,’ বলেন তিনি।

জ্ঞানই শক্তি
আন্না আশা করছেন যে শারীরিক এই পরিবর্তনের ব্যাপারে জানতে পারলে, বাবা হিসেবে পুরুষের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে।

“পুরুষদের কাছ থেকে আগে আমি এই কথাটা প্রচুর শুনতে পেতাম যে তারা মনে করে শিশু লালন-পালনের ক্ষেত্রে মা-ই হচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড। যেহেতু তিনি গর্ভধারণ করেছেন, শিশুর জন্ম দিয়েছেন, দুগ্ধ-পান করিয়েছেন, তাই তিনিই ভালো জানেন যে শিশুর জন্য কী করতে হবে, এটা তার সহজাত প্রবৃত্তি। কিন্তু পুরুষদের এসব শিখতে হয়। এসব সত্য নয়। নারী ও পুরুষ দু’জনেই পিতামাতা হিসেবে একই ধরনের সহজাত প্রবৃত্তির অধিকারী। কারণ সন্তান জন্মদানের সময়ে তাদের দু’জনকেই শারীরিক পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যেতে হয়।”

বাবাদের জন্য তার কিছু পরামর্শ আছে, ‘আপনার মধ্যেও সহজাত প্রবৃত্তি আছে, এ বিষয়ে আপনাকে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। আপনিও নিজেকে সন্তানের মায়ের সহকারী হিসেবে না দেখে নিজেকেও তার মায়ের মতো একই ধরনের ব্যক্তি হিসেবে দেখার চেষ্টা করুন। তার কাছে থাকে এবিষয়ে আপনি অনেক কিছু শিখতে পারবেন।’

পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার বন্ধ চান অধিকাংশ মানুষ

পুলিশ সংস্কার কমিশনের জনমত জরিপে বাহিনীটির রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধ চেয়েছেন বেশিরভাগ মানুষ।

ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিচারবহির্ভূত হত্যায় জড়িতদের বিচার নিশ্চিতেও কমিশন চেয়েছেন সচেতন নাগরিকরা।

সংস্কার কমিশন জানিয়েছে, প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে জনমত জরিপকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে নতুন বছরের শুরুতেই তারা প্রতিবেদনটি জমা দিতে পারবেন বলে মনে করছেন।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের বিতর্কিত ভূমিকার জন্য পুলিশ বাহিনীর ব্যাপক সংস্কারের দাবি ওঠে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও বিষয়টি আমলে নিয়ে গত অক্টোবরে ৭ সদস্যের কমিশন গঠন করে।

কমিশন কাজ শুরু করেই পুলিশ সংস্কারে ‘কেমন পুলিশ চাই’? শীর্ষক জনমত জরিপ শুরু করে। ১৫ দিনের জরিপে প্রায় সাড়ে ২৪ হাজার মানুষ মতামত দিয়েছেন।

জরিপে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে বাহিনীটির রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধে। এরপর আছে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি বন্ধ এবং গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যায় দায়ী পুলিশের বিচারে কমিশন গঠন।

ট্রিপল নাইন সেবা, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, অলনাইন জিডিসহ পুলিশের ৮টি সেবাধর্মী কাজের গতি বাড়ানোরও সুপারিশ করা হয়েছে জরিপে। সংস্কার কমিশন বলছে, ৫৪ ধারার অপব্যবহার বন্ধের পক্ষে তারাও। একইসঙ্গে গায়েবি মামলা বন্ধের পাশাপাশি সভা-সমাবেশে মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ এবং রিমান্ডে নির্যাতন বন্ধের সুপারিশও থাকবে কমিশনের প্রতিবেদনে।

পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য এ এস এম নাসিরউদ্দিন এলান বলেন, আলোচনার মধ্যে আমরা চেষ্টা করেছি এমন একটা সুপারিশ করতে পারি যাতে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত এবং জনগণের বন্ধু একটা পুলিশ দিতে পারি। জনমত জরিপকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই জমা দেয়া হবে।

তিনি বলেন, জরিপটা করেছিই জনগণের মতামত নেয়ার জন্য। মানুষ যে মতামতটা দিয়েছে সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তারা ভুক্তভোগী হয়েই মতামত দিয়েছে। এই কারণে তাদের মতামতের ওপর আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা আশা করছি, জানুয়ারির ৫ তারিখে মধ্যে একটা প্রতিবেদন তৈরি করতে পারবো।

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নের কাজ অন্তর্বর্তী সরকারকেই শুরু করতে হবে মনে করেন সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক।

তিনি বলেন, কাঠামোগত যে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে সেটার বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে। এর ফলাফল যখন মানুষ দেখতে শুরু করবে, তখন রাজনৈতিক দলের সরকার এলে তাদের জন্যও ধারাবাহিকতা বজায় রাখার একটা চাপ তৈরি হবে।

গুমে শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা পেয়েছে কমিশন

জোরপূর্বক গুমের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি। সেইসাথে তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী অভিযুক্ত করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‌্যাব) বিলুপ্ত করার সুপারিশ করেছে।

শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গুম সংক্রান্ত কমিশন তাদের প্রথম অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিশন ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ শীর্ষক এ প্রতিবেদন হস্তান্তর করে।

জমা দেওয়া রিপোর্টে কমিশন সদস্যরা জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত প্রাপ্ত ১ হাজার ৬৭৬টি অভিযোগের মধ্যে ৭৫৮ জনের অভিযোগ যাচাই-বাছাই করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে– গুমের ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে কমিশন। এছাড়াও হাসিনা প্রশাসনের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে; যাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান এবং পুলিশ কর্মকর্তা মো: মনিরুল ইসলাম ও মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

প্রতিবেদনে গুমের শিকার ব্যক্তিদের বিচারিক প্রক্রিয়া শুরুসহ র‍্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে কমিশন।

কমিশন প্রধান মইনুল ইসলাম চৌধুরী জানান, গুমের সাথে জড়িত কর্মকর্তারা কাজটি এমনভাবে করেছেন যাতে এগুলো শনাক্ত করা কঠিন হয়ে যায়। বিভিন্ন ফোর্স নিজেদের মধ্যে ভিকটিম বিনিময় করেছে এবং পরিকল্পনা ভিন্ন ভিন্নভাবে বাস্তবায়ন করেছে।

কমিশনের সদস্য হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো: ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকারকর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস ও মানবাধিকার কর্মী সাজ্জাদ হোসেন এসময় উপস্থিত ছিলেন।

আরো উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ।

বাংলাদেশে ইজতেমা একটাই হবে, দ্বিতীয় কোনো আয়োজন মানবো না: মহিউদ্দিন রব্বানী

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে সমাবেশ করে ওলামা মাশায়েখ ও তৌহিদি জনতা একসঙ্গে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজন করতে সাদপন্থিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে ইজতেমা একটাই হবে। দ্বিতীয় কোনো ইজতেমা আমরা মেনে নেবো না। আমরা কখনো মানবো না।

শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) জুমার নামাজ শেষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশের আয়োজন করে ওলামা মাশায়েখ ও তৌহিদি জনতা বাংলাদেশ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী বলেন, হক বাতিলের প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকার যদি কোনো প্রশ্রয় দেয়, আমরা তা বরদাশত করবো না। বৈষম্যের (অবসানের) জন্য এ দেশের ছাত্ররা যেভাবে জীবন দিয়েছে, আলেম ওলামারাও এভাবে জীবন দিয়েছেন। তাই বাংলাদেশে ইজতেমা একটাই হবে। আমরা এখনো ভাইদের আহ্বান করবো, আমরা একসঙ্গে থেকেছি, খেয়েছি। আসুন একসঙ্গে ইজতেমা করি।

সমাবেশে অন্য বক্তারা বলেন, আমরা অন্তর্বর্তী সকারের কাছে আহ্বান জানাবো, আপনারা বাতিল পক্ষকে পশ্রয় দিবেন না। হকের পক্ষে যারা থাকেন তারা দুর্বল হয়, আর যারা বাতিল তারা শক্তিশালী হয়। কিন্ত পরিশেষে যারা হকের পক্ষে থাকেন তারাই চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেন। যারা হেফাজতে ইসলামসহ দেশের শীর্ষ আলেমদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে, আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। এই মামলা প্রত্যাহার না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ার দেন তারা।

দেশের শীর্ষ ওলামাদের বিরুদ্ধে সাদপন্থিদের মামলা, টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমার মাঠে ছাত্র ও তাবলীগের সাথীদের ওপর হামলার বিচার এবং সাদপন্থিদের টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমার মাঠ দখলের চেষ্টার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করা হয়। এতে তাবলীগ জামায়াতের একাংশ (জোবায়েরপন্থি) ও তাবলীগ জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরাম, দাওয়াত ও তাবলীগের সাথীরা উপস্থিত ছিলেন।

পাথরঘাটায় যুবককে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ, প্রতিবাদে স্থানীয়দের বিক্ষোভ

বরগুনার পাথরঘাটার জুয়েল মীর নামের এক কোস্টগার্ডের সোর্সের বিরুদ্ধে ইয়াবা দিয়ে এক যুবককে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পাথরঘাটা-হরিণঘাটা সড়কের বাদুরতলা সেতুতে এ ঘটনা ঘটে। তবে জুয়েল মীর তাদের সোর্স না বলে জানিয়েছে পাথরঘাটা কোস্টগার্ড স্টেশন।

ফাঁসিয়ে দেওয়া ওই যুবকের নাম মো. সুমন (২৫)। তিনি উপজেলার বাদুরতলা গ্রামের শাহ আলমের ছেলে। ১০০টি ইয়াবাসহ তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে সুমনের পরিবার অভিযোগ করে বলেন, জুয়েল মীর ইয়াবা দিয়ে সুমনকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।

মো. সুমনকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় বাদুরতলা বাজারে শতাধিক মানুষ বিক্ষোভ করে প্রতিবাদ করেছেন। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, কোস্টগার্ডের সোর্স ইয়াবা দিয়ে তাঁকে ফাঁসিয়েছে। জুয়েল মীর (২৮) পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের গহরপুর গ্রামের জাফর মীরের ছেলে।

এ ঘটনায় পাথরঘাটা কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট এম আকতার হোসেন সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মো. সুমনকে ১০০ ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় তাঁর কাছ থেকে ১৭ হাজার ৭৮২ টাকা জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মো. সুমনের বিরুদ্ধে পাথরঘাটা থানায় মামলা করে বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে পাথরঘাটা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে জুয়েল মীর নামে কোস্টগার্ডের কোনো সোর্স থাকার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন।

অপর দিকে পাথরঘাটা কোস্টগার্ডের ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত গ্রেপ্তার মো. সুমন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ‘আমার সঙ্গে জুয়েল মীরের বিরোধ চলছিল। ওই বিরোধের জের ধরে জুয়েল মীর ইয়াবা দিয়ে আমাকে ফাঁসিয়েছে।’

মো. সুমন বলেন, ‘কিছুদিন আগে থেকে জুয়েল মীর আমাকে হরিণের চামড়া ও মাদক দিয়ে ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে আসছিল। এ ঘটনায় আমি এক মাস আগে পাথরঘাটা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি।’

বাদুরতলা বাজারের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, জুয়েল মীরকে ২০২০ সালের ৭ মার্চ ১ কেজি গাঁজাসহ পাথরঘাটা কোস্টগার্ড গ্রেপ্তার করে। পরে আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে তাঁকে কোস্টগার্ডের সোর্স পরিচয়ে পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নে কাজ করতে দেখা যায়। ওই কাজের ধারাবাহিকতায় ইয়াবা দিয়ে মো. সুমনকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ইয়াবা জব্দের ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী গহরপুর গ্রামের খলিল ফরাজী ও বাদুরতলা গ্রামের ইউনুস হাওলাদার বলেন, ‘সুমন ট্রলারের ডিজেল আনতে বাড়ি থেকে পাথরঘাটা বাজারে রওনা হন। এ সময় বাদুরতলা সেতু অতিক্রমের সময় ওই সেতুর ওপরে সুমনের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে জুয়েল মীর। এ সময় জুয়েল সুমনের সামনে গিয়ে সুমনের বুকপকেটে একটা কিছু গুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করে। সঙ্গে সঙ্গে সাদাপোশাকে ও কোস্টগার্ড পোশাকে সদস্যরা জুয়েলকে ঘিরে ধরে তার পকেট থেকে ইয়াবা উদ্ধার করে। এ সময় আমরা ঘটনাটি দেখছিলাম। তবে ওই ঘটনা দেখে মানুষজন জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে কোস্টগার্ড সদস্যরা সুমনকে নিয়ে কোস্টগার্ড অফিসে চলে যান। এ সময় সুমনকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর ঘটনায় তাৎক্ষণিক বাদুরতলা বাজারে কোস্টগার্ড সোর্স জুয়েল মীরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ করেন স্থানীয় গ্রামবাসী।’

বাদুরতলা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জুয়েল মীর মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ওই সময় যুবলীগের রাজনীতি করতেও দেখা গেছে তাঁকে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাদুরতলা বাজারে যুবদলের ব্যানার ফেস্টুন দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে এখনো তিনি কোস্টগার্ড সোর্স পরিচয় এলাকায় কাজ করেন, যা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই।

এ ব্যাপারে পাথরঘাটা থানার ওসি (তদন্ত) ইয়াকুব আলী প্রথম আলোকে বলেন, কোস্টগার্ড মাদক মামলা দিয়ে সুমনকে পাথরঘাটা থানায় হস্তান্তর করেছে। যদি কোনো ফাঁসানোর অভিযোগ থাকে, তাহলে মামলার তদন্তের সময় পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখবে।

জুমার দিনের ফজিলতপূর্ণ আমল

সপ্তাহের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ দিন জুমাবার। মুমিনের জীবনে দিনটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা এ দিনের নামে স্বতন্ত্র সুরা অবতীর্ণ করেছেন। জুমার আজানের সঙ্গে সঙ্গে দুনিয়ার যাবতীয় কাজকর্ম ত্যাগ করে তাঁর দরবারে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসেও এ দিনের বিশেষ কিছু আমলের কথা বিবৃত হয়েছে। একজন মুসলমানের জন্য এই দিনে বেশ কিছু ফজিলতপূর্ণ আমল রয়েছে। যথা-

১. গোসল করা

২. উত্তম পোশাক পরিধান করা

৩. সুগন্ধি ব্যবহার করা

৪. মনোযোগের সঙ্গে

খুতবা শোনা
এই চার আমলের বিনিময়ে এক সপ্তাহের সব ছোট গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করে, যদি তার কাছে থাকে, তারপর জুমার নামাজে আসে এবং অন্য মুসল্লিদের গায়ের ওপর দিয়ে টপকে সামনের দিকে না যায়, নির্ধারিত নামাজ আদায় করে, তারপর ইমাম খুতবার জন্য বের হওয়ার পর থেকে সালাম পর্যন্ত চুপ করে থাকে, তাহলে তার এই আমল পূর্ববর্তী জুমার দিন থেকে পরের জুমা পর্যন্ত সব সগিরা গুনাহর জন্য কাফফারা হবে।’ (আবু দাউদ: ৩৪৩) 

৫. বেচাকেনা বন্ধ রাখা
জুমার দিন আজানের পর বেচাকেনা বন্ধ রাখা গুরুত্বপূর্ণ আমল। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, ‘হে মুমিনেরা, জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত ছুটে যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বোঝো।’ (সুরা জুমুআ: ৯) 

৬. দ্রুত মসজিদে যাওয়া
জুমার নামাজের জন্য আগে আগে মসজিদে যাওয়া ফজিলতপূর্ণ কাজ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিন মসজিদের দরজায় ফেরেশতারা অবস্থান করেন এবং ক্রমানুসারে আগে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। যে সবার আগে আসে সে একটি মোটাতাজা উট কোরবানি করার সওয়াব পায়। এর পর যে আসে, সে একটি গাভি কোরবানি করার সওয়াব পায়। এর পর আগমনকারী ব্যক্তি মুরগি দানকারীর সমান সওয়াব পায়। তার পর ইমাম যখন বের হন, তখন ফেরেশতারা সওয়াব লেখা বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগসহকারে খুতবা শুনতে থাকেন।’ (বুখারি: ৯২৯) 

৭. সুরা কাহফ তিলাওয়াত
সুরা কাহফ তিলাওয়াত করা এই দিনের অন্যতম বিশেষ আমল। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ পড়বে, তা জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার জন্য আলোকিত হয়ে থাকবে। আর যে ব্যক্তি এই সুরার শেষ ১০ আয়াত পাঠ করবে, দাজ্জাল বের হলে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (তারগিব, হাদিস: ১৪৭৩, মুসতাদরাক: ২ / ৩৯৯) 

৮. বেশি বেশি দরুদ পাঠ
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি বেশি বেশি দরুদ পড়া এ দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল। রাসুল (সা.) বলেন, ‘দিনসমূহের মধ্যে জুমার দিনই সর্বোত্তম। এই দিনে হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। এই দিনে শিঙায় ফুঁক দেওয়া হবে। এই দিনে সব সৃষ্টিকে বেহুঁশ করা হবে। অতএব, তোমরা এই দিনে আমার ওপর অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ করো। কেননা তোমাদের দরুদ আমার সামনে পেশ করা হয়ে থাকে।’ (আবু দাউদ: ১০৪৭) 

৯. দোয়ায় মশগুল হওয়া
আল্লাহর দরবারে দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনায় মগ্ন হওয়া জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল। এ দিনের একটি বিশেষ মুহূর্তে আল্লাহ দোয়া কবুল করেন। জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন, ‘জুমার দিনের ১২ ঘণ্টার মধ্যে একটি বিশেষ মুহূর্ত এমন আছে, যখন মুমিন আল্লাহর কাছে যে দোয়া-ই করবে তিনি তা কবুল করেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১০৪৮)

ঢাবির ৭ প্রবেশমুখে হঠাৎ নিরাপত্তা চৌকি, ক্যাম্পাসে যান চলাচল সীমিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ৭টি প্রবেশ পথে বসেছে বেরিয়ার এবং সিকিউরিটি সার্ভিলেন্স বক্স। এর মধ্য দিয়ে শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) যানবাহন নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফলে ঢাবি ক্যাম্পাসে রিকশা ও বহিরাগত যানবাহন প্রবেশ একেবারেই সীমিত হয়েছে।

এই বিষয়ে ঢাবির প্রক্টর সহযোগী সাইফুদ্দীন আহমদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের চাওয়া ছিল ক্যাম্পাসে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা। ক্যাম্পাসে রাস্তা ব্যবহার করলে দ্রুত সময়ে মানুষ তার গন্তব্যে যেতে পারে দেখে অনেকেই এই রাস্তা ব্যবহার করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, ভিসি চত্বর, শহীদ মিনার এলাকায় অনেক সময় দীর্ঘ জ্যাম লেগে থাকে। অনেক গাড়ির আনাগোনা থাকায় মাঝে-মধ্যে দুর্ঘটনা ও ঘটেছে। শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে চলাফেরা বিঘ্নিত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এটি যেহেতু সিটি কর্পোরেশনের রাস্তা তাই আমরা একেবারেই তা বন্ধ করে দিতে পারিনা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সহ বসে আমরা নির্দিষ্ট একটি সময় ঠিক করে দিব। যে সময়ের মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়িগুলো ক্যাম্পাসের রাস্তা ব্যবহার করে যাতায়াত করতে পারবে।

শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, পলাশীর মোড়, নীলক্ষেত মোড়, শহীদ মিনার, শাহবাগ, শহীদুল্লাহ হল, হাইকোর্ট মোড় এবং শিববাড়ি ক্রসিং মোড়ে বেরিয়ার বসানো। এ সব রাস্তা দিয়ে একেবারেই সীমিত যানবাহন চলাচল করছে। ক্যাম্পাসের স্টিারযুক্ত গাড়ি ছাড়া কোনো যানবাহন প্রবেশ করছেনা।সরেজমিন ঘুরে আরও দেখা যায়, টিএসসি, ভিসি চত্বর, শহীদ মিনার ও দোয়েল চত্বর এলাকায় রিকশা চলাচল ও সীমিত। বন্ধের দিনগুলোতে এসব এলাকায় আগে যদিও অনেক রিকশার আনাগোনা ছিল ,শুক্রবার তা ছিল না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সজিব ভূঁইয়া বলেন, দীর্ঘদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ভালো লাগছে। মানুষের আনাগোনা ও তীব্র যান চলাচলের কারণে আগে বন্ধের দিনে হল থেকেই বের হতে ইচ্ছে হতো না। কিন্তু আজ এই পরিবেশ দেখে ভালো লাগছে। জানি না কতদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যানবাহন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত যানবাহন নিয়ন্ত্রণে সব সময় এমন কঠোর থাকা।  

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। সে সময় তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে স্টিকারবিহীন গাড়ি, গণপরিবহন ও ভারি যানবাহন চলাচল এবং বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এসব বেরিয়ার এবং সিকিউরিটি অ্যান্ড সার্ভিলেন্স বক্স স্থাপন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করাসহ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে এসব বেরিয়ার এবং সিকিউরিটি অ্যান্ড সার্ভিলেন্স বক্স কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এই উদ্যোগের সফল বাস্তবায়নে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।