A L T R O Z   N E W S

সর্বশেষ সংবাদ

ডিবির হারুন আনঅফিসিয়ালি ফোন করে ডা. সাবরিনাকে ডেকেছিলেন

সাবেক ডিবি প্রধান হারুনকে নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছেন বন্দিনী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. সাবরিনা হুসেন মিষ্টি।

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে পিরোজপুর ইউনিয়নে বন্দিনী ফাউন্ডেশনের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। আমার সঙ্গে এই মামলার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। ওই সময় করোনা মোকাবিলায় বিগত সরকারের বেশ কিছু ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়েছিল, তখন জনসাধারণের ফোকাস সরিয়ে নেওয়ার জন্য বিনাকারণে আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর পুরো কাজটি করেছে সাবেক ডিবি প্রধান হারুন।’ 

সাবেক ডিবি প্রধান হারুন সম্পর্কে বিস্ফোরক তথ্য দিয়ে ডা. সাবরিনা বলেন, ‘আমার মামলার সময়ে সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ তেজগাঁও জোনের ডিসি ছিলেন। আমাকেও তেজগাঁও থানার একটি মামলায় সম্পৃক্ত করা হয়। পরে তিনি আমাকে আনঅফিসিয়ালি ফোন করে ব্যক্তিগতভাবে ডেকে ছিলেন। পরে একাধিকবার ফোন করে আমাকে যেতে বলেন। তবে ওনার কি উদ্দেশ্য ছিল তা জানা নেই। পরে আমাকে যখন তেজগাঁও থানায় ডেকে নেওয়া হলো সেবার তার সঙ্গে দেখা হলে তিনি আমাকে প্রশ্ন করেন- কোন মেডিকেল কলেজ ও কততম বিসিএস? এই দুটো প্রশ্ন করে তিনি আমাকে গ্রেপ্তার করলেন। কিন্তু গণমাধ্যমে নানা কিছু বলে নাটক সাজিয়ে তিনি আমাকে গ্রেপ্তার দেখান।’

নাটক সাজিয়ে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে উল্লেখ করে ডা. সাবরিনা বলেন, ‘তৎকালীন ডিবি প্রধান হারুন পরিকল্পনা অনুযায়ী নাটক সাজাতে ও নাটক পছন্দ করতেন। আমার ক্ষেত্রেও পুরোটা এমনই হয়েছে। রাজনৈতিক কারণে তিনি নাটক সাজিয়ে আমাকে ডেকে নিয়ে গ্রেপ্তার দেখিয়েছেন। এটা পুরোটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি মামলা।’

ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আওতায় দুই শতাধিক রোগীকে ডা. সাবরিনা বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেন। এ সময় বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করা হয়।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ২৩ জুন করোনার ভুয়া সনদ দেওয়া, জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে সাবরিনা, তার স্বামী আরিফুলসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। গত বছরের জুন মাসে কারাগার থেকে জামিন পান ডা. সাবরিনা। এ বছর একুশে বই মেলায় আলোচিত এই চিকিৎসকের ‘বন্দিনী’ নামে একটি গ্রন্থ এসেছে।

ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় বাংলাদেশ পরিবেশ ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন সচিব ও দৈনিক বাংলা পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি সেলিম আহমেদ ডালিমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিরোজপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক মাসুম রানা, বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ পরিবেশ ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটির চেয়ারম্যান এম ইব্রাহীম পাটোয়ারী প্রমুখ। 

ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আওতায় দুই শতাধিক রোগীকে ডা. সাবরিনা বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেন। এ সময় বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করা হয়।

সংবাদ প্রবাহ

ডিবির হারুন আনঅফিসিয়ালি ফোন করে ডা. সাবরিনাকে ডেকেছিলেন

সাবেক ডিবি প্রধান হারুনকে নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছেন বন্দিনী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. সাবরিনা হুসেন মিষ্টি।

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে পিরোজপুর ইউনিয়নে বন্দিনী ফাউন্ডেশনের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। আমার সঙ্গে এই মামলার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। ওই সময় করোনা মোকাবিলায় বিগত সরকারের বেশ কিছু ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়েছিল, তখন জনসাধারণের ফোকাস সরিয়ে নেওয়ার জন্য বিনাকারণে আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর পুরো কাজটি করেছে সাবেক ডিবি প্রধান হারুন।’ 

সাবেক ডিবি প্রধান হারুন সম্পর্কে বিস্ফোরক তথ্য দিয়ে ডা. সাবরিনা বলেন, ‘আমার মামলার সময়ে সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ তেজগাঁও জোনের ডিসি ছিলেন। আমাকেও তেজগাঁও থানার একটি মামলায় সম্পৃক্ত করা হয়। পরে তিনি আমাকে আনঅফিসিয়ালি ফোন করে ব্যক্তিগতভাবে ডেকে ছিলেন। পরে একাধিকবার ফোন করে আমাকে যেতে বলেন। তবে ওনার কি উদ্দেশ্য ছিল তা জানা নেই। পরে আমাকে যখন তেজগাঁও থানায় ডেকে নেওয়া হলো সেবার তার সঙ্গে দেখা হলে তিনি আমাকে প্রশ্ন করেন- কোন মেডিকেল কলেজ ও কততম বিসিএস? এই দুটো প্রশ্ন করে তিনি আমাকে গ্রেপ্তার করলেন। কিন্তু গণমাধ্যমে নানা কিছু বলে নাটক সাজিয়ে তিনি আমাকে গ্রেপ্তার দেখান।’

নাটক সাজিয়ে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে উল্লেখ করে ডা. সাবরিনা বলেন, ‘তৎকালীন ডিবি প্রধান হারুন পরিকল্পনা অনুযায়ী নাটক সাজাতে ও নাটক পছন্দ করতেন। আমার ক্ষেত্রেও পুরোটা এমনই হয়েছে। রাজনৈতিক কারণে তিনি নাটক সাজিয়ে আমাকে ডেকে নিয়ে গ্রেপ্তার দেখিয়েছেন। এটা পুরোটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি মামলা।’

ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আওতায় দুই শতাধিক রোগীকে ডা. সাবরিনা বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেন। এ সময় বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করা হয়।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ২৩ জুন করোনার ভুয়া সনদ দেওয়া, জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে সাবরিনা, তার স্বামী আরিফুলসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। গত বছরের জুন মাসে কারাগার থেকে জামিন পান ডা. সাবরিনা। এ বছর একুশে বই মেলায় আলোচিত এই চিকিৎসকের ‘বন্দিনী’ নামে একটি গ্রন্থ এসেছে।

ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় বাংলাদেশ পরিবেশ ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন সচিব ও দৈনিক বাংলা পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি সেলিম আহমেদ ডালিমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিরোজপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক মাসুম রানা, বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ পরিবেশ ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটির চেয়ারম্যান এম ইব্রাহীম পাটোয়ারী প্রমুখ। 

ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আওতায় দুই শতাধিক রোগীকে ডা. সাবরিনা বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেন। এ সময় বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করা হয়।

আ.লীগকে নিষিদ্ধের পরিকল্পনা অন্তর্বর্তী সরকারের নেই: প্রেস সচিব

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো নির্ধারণ করবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির ভবিষ্যৎ কী হবে। তবে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনও পরিকল্পনা অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। 

রবিবার (১৯ জানুয়ারি) রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশে (পিআইবি) ‘বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম’ (বিএজেএফ) সদস্যদের জন্য কৃষি সাংবাদিকতা বিষয়ক প্রশিক্ষণের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

শফিকুল আলম বলেন, কৃষিখাত গত ১৫ বছর ধরে চুরির তথ্য দিয়ে পরিচালনা করা হয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়েছে। প্রতি বছর কয়েক লাখ কোটি টাকার খাদ্যপণ্য আমদানি করা হয়। উৎপাদন না থাকার কারণে দেশে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি বলেন, বাজারে সিন্ডিকেট আছে, সেটি ভাঙা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ডিমের সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলা হয়েছে। কৃষিকে টেকসই করতে কাজ করা হচ্ছে।

নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচন কমিশন কাজ করছেন জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, নির্বাচন কমিশন কিছু টাইমলাইন দিয়েছে। প্রিপারেশন কেমন হবে সেটা নির্ভর করছে অনেকগুলো রিফর্মের ওপর। এই রিফর্মগুলোর অনেকগুলোই মাঠ পর্যায়ে নির্বাচন প্রভাবিত করবে।

এ সময় চলতি বছরের ডিসেম্বরে অথবা ২০২৬ এর জুনে নির্বাচন হওয়ার কথা জানান প্রেস সচিব। তিনি বলেন, আমরা খুব বেশি সময় যে নিচ্ছি তা না। খুব যুক্তিযুক্ত সময়েই নির্বাচন হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কারও ক্ষমতার প্রতি লোভ নেই।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, দেশের মধ্যবিত্তের যে উলম্ফন সেটি ধরে রাখতে হলে কৃষকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তা না হলে মধ্যবিত্তের ফুটানি থাকবে না। দেশে বাজার অর্থনীতির পরিবের্ত সিন্ডিকেটের অর্থনীতিতে দাঁড়িয়েছে। কৃষিখাতসহ দেশের সব জায়গাতে অকৃত্রিম পরিসংখ্যানের ভেল্কি দেখিয়ে উন্নয়ন দেখানো হয়েছে। সেখান থেকে বের হতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএজেএফ সভাপতি ও পিআইবি পরিচালনা বোর্ডের সদস্য গোলাম ইফতেখার মাহমুদ। সঞ্চালনা করেন বিএজেএফ সাধারণ সম্পাদক সাহানোয়ার সাইদ শাহীন।

হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর বার্তাকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে ভারত?

গত ২৩ ডিসেম্বর সকালে দিল্লির চাণক্যপুরীতে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়ার বার্তা ‘নোট ভার্বালে’র আকারে তুলে দেয়া হলো সাউথ ব্লকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা বা নীতিনির্ধারকরা বেশ কিছুদিন ধরেই আকারে ইঙ্গিতে বা খোলাখুলি বলে আসছিলেন যে তারা ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে তারা ফেরত চাইবেন, যাতে তাকে গণহত্যার জন্য বিচারের কাঠগড়ায় তোলা যায়।

কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে সে বার্তা বা চিঠি কিন্তু দিল্লির কাছে পাঠানো হচ্ছিল না। অবশেষে সেটা নোট ভার্বালের আকারে পাঠানো হলো।

নোট ভ‍ার্বাল হলো দু’দেশের সরকারের মধ্যে এক ধরনের ‘ডিপ্লোম্যাটিক কমিউনিকেশন’ বা কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যম- কিন্তু তাতে প্রেরকের কোনো স্বাক্ষর থাকে না।

তবে নোট ভার্বালের রীতি অনুযায়ী, ধরেই নেয়া যায় এক্ষেত্রেও বার্তাটি পাঠানো হয়েছে দিল্লির বাংলাদেশ দূতাবাসের লেটারহেডে এবং তাতে হাই কমিশনের রাবারস্ট্যাম্পও ছিল।

বার্তাটি হাতে পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দিল্লির পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে সেটির প্রাপ্তিস্বীকার করা হয়। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এটাও জানিয়ে দেন, তাদের এ বিষয়ে এখনই কিছু বলার নেই!

এরপর আরো কয়েকদিন কেটে গেছে, দিল্লির পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া যেমন দেয়া হয়নি, তেমনি বাংলাদেশকে নোট ভার্বালের কোনো জবাবও পাঠায়নি ভারত।

বস্তুত, ভারত সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সূত্র দিল্লিতে বিবিসি বাংলাকে আভাস দিয়েছেন, তারা এই অনুরোধকে আদৌ খুব একটা আমল দিচ্ছেন না।

তারপরেও এই বার্তার জবাব নিশ্চয় দেয়া হবে, কিন্তু তার জন্য দিল্লি কোনো ধরনের তাড়াহুড়ো করবে না বলেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

কেন ভারত সরকার ওই নোট ভার্বাল নিয়ে এরকম মনোভাব পোষণ করছে, কর্মকর্তা এবং বিশ্লেষকদের সাথে কথা বলে তার কারণগুলোই অনুসন্ধান করা হয়েছে বিবিসির এই প্রতিবেদনে।

‘সাক্ষ্যপ্রমাণের ফিরিস্তি কোথায়?’
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার যদিও দাবি করছে শেখ হাসিনাকে ফেরানোর প্রচেষ্টাকে তারা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। কিন্তু ভারত মনে করছে, তাদের পাঠানো বার্তা একটা ‘দায়সারা পদক্ষেপে’র চেয়ে বেশি কিছু নয় বলেই দাবি করা হয় বিবিসির প্রতিবেদনে।

দিল্লিতে শীর্ষস্থানীয় একজন সরকারি কর্মকর্তা বিবিসিকে বলছিলেন, ‘সত্যিই যদি বাংলাদেশ এই ব্যাপারটা নিয়ে সিরিয়াস হতো, তাহলে তো তারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগগুলো কী এবং তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণই বা কী, সেই বিবরণও পেশ করত। মানে যেমনটা একটা চার্জশিটে থাকে! এক-দু’পাতার একটা নোটে যে সেটা থাকতে পারে না, তা তো বলাই বাহুল্য!’

তার বক্তব্য, বাংলাদেশ সরকার আসলে তাদের দেশের মানুষকে এটা দেখাতে চাইছে যে তারা ভারতের কাছে প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানিয়ে দিয়েছে এবং ফলে ‘বল এখন ভারতের কোর্টে- আমাদের এখন আর কিছু করার নেই!’

ভারতের একজন সাবেক কূটনীতিবিদের কথায়, ‘আমার তো মনে হচ্ছে যেন বাংলাদেশ এই পদক্ষেপের মাধ্যমে যেন একটা বক্সে টিক দিয়ে দায়িত্ব সারলো- আমাদের প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানানোর কথা ছিল, জানিয়ে দিয়েছি – ব্যাস!’

কিন্তু শেখ হাসিনাকে ভারত বিচারের জন্য হস্তান্তর করবে- বাস্তবে এরকম সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই বাংলাদেশ হয়তো সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়নি, এমনটাও ধারণা করছেন তিনি।

প্রকৃত কারণটা যাই হোক, নোট ভার্বালে যে যুক্তি দেখিয়ে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হয়েছে, (জুলাই-অগাস্ট গণহত্যার বিচারের জন্য তাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে) সেটাকে ভারত আসলে জোরাল কোনো দাবি বলে মনেই করছে না বলেই দাবি করা হয় বিবিসির প্রতিবেদনে।

ভারতীয় সাবেক ওই কূটনীতিবিদ বলেন, ‘কারণটা হলো কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়া এ অভিযোগ জানানোর অর্থ এ বার্তার চরিত্র পুরোপুরি রাজনৈতিক। এখন দু'দেশের প্রত্যর্পণ চুক্তিতেই পরিষ্কার বলা আছে রাজনৈতিক অভিযোগে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে হস্তান্তর করা যাবে না। ফলে শেখ হাসিনার ক্ষেত্রেও নিশ্চয়ই সেই যুক্তিই প্রযোজ্য হবে।’

‘লেটার রোগেটরি দিলে তবু না হয় বুঝতাম!’
কোনো দেশের সাথে ভারতের প্রত্যর্পণ চুক্তি বা বিশেষ কোনো ব্যবস্থা বা অ্যারেঞ্জমেন্ট থাকলে সেই দেশের কোনো নাগরিককে ভারত তাদের হাতে তুলে দিতে পারে- যদি তিনি একজন ‘ফিউজিটিভ ক্রিমিনাল’ এফসি বা ফেরার আসামি হন।

এখন কোন কোন শর্তের অধীনে ভারত একজন ‘এফসি’-কে তার নিজ দেশের হাতে তুলে দিতে পারে, তার নিয়মকানুন খুব স্পষ্ট এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও তার পুরোটাই উল্লিখিত আছে।

এইসব রীতিনীতি কিছুটা নির্ভর করে বিশেষ ওই দেশের সাথে প্রত্যর্পণ চুক্তির বিশেষ ধারার ওপর। তবে মূল ধারাটা সব দেশের ক্ষেত্রেই এক, আর তা হলো যাকে ফেরত চাওয়া হচ্ছে তাকে কোনো ‘প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধে’র মামলায় ফেরার আসামি হতে হবে।

এখন শেখ হাসিনা যখন ভারতে এসে পৌঁছান, তখন তিনি কিন্তু কোনো ফেরার আসামি বা এফসি ছিলেন না।

ভারতের সাবেক শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিবিদ পিনাকরঞ্জন চক্রবর্তী এ যুক্তি দেখিয়েই বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘মনে রাখতে হবে ৫ আগস্ট তারিখেও শেখ হাসিনার নামে সে দেশে কোনো মামলা ছিল না। ফলে ভারত যখন তাকে আতিথেয়তা দিচ্ছে, সেই মুহূর্তে তিনি কিন্তু কোনো ফেরার আসামি নন।’

তিনি আরো যুক্তি দিচ্ছেন, ‘এখন শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর যদি তার বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে শত শত মামলা একসাধে দায়ের করা হতে থাকে, তাহলে এটা মনে করার যথেষ্ঠ কারণ থাকতে পারে এগুলো রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক- যার ভিত্তিতে প্রত্যর্পণের কোনো প্রশ্নই ওঠে না।’

তাহলে কি ধরেই নেয়া যেতে পারে, অনুরোধ যে আকারেই আসুক বা যতই জোরালে সাক্ষ্যপ্রমাণ পেশ করা হোক- ভারত কোনো অবস্থাতেই শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবে না?

পিনাকরঞ্জন চক্রবর্তী জবাবে বলছেন, ‘না বিষয়টা ঠিক সেরকম নয়। যদি সব নিয়ম মেনে এবং আঁটঘাট বেঁধে ভারতের কাছে এই অনুরোধ জানানো হয়, তাহলে ভারত নিশ্চয়ই সেটা বিবেচনা করবে।’

ঢাকায় ভারতের সাবেক এই হাই কমিশনারের ধারণা, এক্ষেত্রে একটি নোট ভার্বালের চেয়ে হয়তো অনেক বেশি কার্যকরী হতো একটি ‘লেটার রোগেটরি’।

ল্যাটিনে ‘রোগাটোরিয়াস’ কথার অর্থ হলো তথ্য জানতে চাওয়া। আর ‘লেটার রোগেটরি’ হলো এক দেশের আদালত যখন অন্য দেশের আদালতের কাছে কোনো বিষয়ে আইনি সহায়তা চেয়ে চিঠি দেয়।

সেটা কোনো অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ হতে পারে, কিংবা আইনি প্রক্রিয়ায় সাহায্য করার অনুরোধ হতে পারে।

সুতরাং, এক্ষেত্রে বাংলাদেশের আদালত বা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যদি ভারতের বিচার বিভাগের কাছে (সুপ্রিম কোর্ট) শেখ হাসিনার বিচার প্রক্রিয়ায় সহায়তা চেয়ে কোনো চিঠি দিত (লেটার রোগেটরি)- সেটার প্রভাব এই নোট ভার্বালের চেয়ে অনেক বেশি হতো বলে ভারতের কোনো কোনো পর্যবেক্ষক মনে করছেন।

তবে, এই ধরনের কোনো চিঠি পাঠানোর আগে সংশ্লিষ্ট বিচার প্রক্রিয়াতেও যথেষ্ঠ অগ্রগতি হওয়া দরকার। শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে তা এখনো আদৌ হয়েছে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ আছে দিল্লি বলেই উল্লেখ করেছে বিবিসি।

ভারতের শাসক দল বিজেপির ঘনিষ্ঠ পররাষ্ট্র নীতি বিশেষজ্ঞ শুভ্রকমল দত্ত বিবিসিকে বলেন, ‘ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়ার আগে আমি তো বলব মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের উচিত তাদের নিজেদের সেনাবাহিনীর কাছে জবাবদিহি চাওয়া, কেন তারা শেখ হাসিনাকে ভারতে যেতে দিল।’

বিসিসি উল্লেখ করে, শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর একটি মিলিটারি এয়ারক্র্যাফটে করেই দিল্লির কাছে হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে এসে অবতরণ করেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর এর পরদিনই মানে ৬ আগস্ট পার্লামেন্টে জানান, শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানটি যাতে দিল্লিতে এসে নামতে পারে, তার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তরফে ভারতের কাছে আগাম অনুমতি বা ফ্লাইট ক্লিয়ারেন্সও চাওয়া হয়েছিল।

শুভ্রকমল দত্ত বলেন, ‘ফলে, যে পরিস্থিতিতেই শেখ হাসিনা ভারতে এসে থাকুন, তার পেছনে বাংলাদেশের বর্তমান সেনা নেতৃত্বের একটা সক্রিয় ভূমিকা অবশ্যই ছিল- যা অস্বীকার করা কঠিন।’

তার কথায়, ‘বাস্তবিক শেখ হাসিনা এখন আমাদের অতিথি হতে পারেন, কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে- তাকে কিন্তু আমরা নিজে থেকে ডেকে আনিনি।’

ফলে ৫ আগস্টের সেই ঘটনাক্রম আজ শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের অনুরোধকে বেশ কিছুটা দুর্বল করে দিচ্ছে বলেই ভারতের বিশ্বাস। দিল্লিতে সাউথ ব্লকের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বলেন, ‘কারণ রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ (সেনাবাহিনী) তাকে ভারতে আসতে সাহায্য করেছে, আর এখন রাষ্ট্রেরই আর একটি স্তম্ভ (নির্বাহী বিভাগ) তাকে ভারত থেকে ফেরত চাইছে- এর মধ্যে তো একটা স্ববিরোধিতা আছেই।’

এই সব কারণেই বাংলাদেশের নোট ভার্বালের তড়িঘড়ি একটা জবাব দেয়া উচিত কিংবা শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের ব্যাপারে দ্রুত একটা সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত- তেমনটা ভারত মনে করছে না!
সূত্র : বিবিসি

পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার বন্ধ চান অধিকাংশ মানুষ

পুলিশ সংস্কার কমিশনের জনমত জরিপে বাহিনীটির রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধ চেয়েছেন বেশিরভাগ মানুষ।

ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিচারবহির্ভূত হত্যায় জড়িতদের বিচার নিশ্চিতেও কমিশন চেয়েছেন সচেতন নাগরিকরা।

সংস্কার কমিশন জানিয়েছে, প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে জনমত জরিপকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে নতুন বছরের শুরুতেই তারা প্রতিবেদনটি জমা দিতে পারবেন বলে মনে করছেন।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের বিতর্কিত ভূমিকার জন্য পুলিশ বাহিনীর ব্যাপক সংস্কারের দাবি ওঠে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও বিষয়টি আমলে নিয়ে গত অক্টোবরে ৭ সদস্যের কমিশন গঠন করে।

কমিশন কাজ শুরু করেই পুলিশ সংস্কারে ‘কেমন পুলিশ চাই’? শীর্ষক জনমত জরিপ শুরু করে। ১৫ দিনের জরিপে প্রায় সাড়ে ২৪ হাজার মানুষ মতামত দিয়েছেন।

জরিপে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে বাহিনীটির রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধে। এরপর আছে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি বন্ধ এবং গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যায় দায়ী পুলিশের বিচারে কমিশন গঠন।

ট্রিপল নাইন সেবা, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, অলনাইন জিডিসহ পুলিশের ৮টি সেবাধর্মী কাজের গতি বাড়ানোরও সুপারিশ করা হয়েছে জরিপে। সংস্কার কমিশন বলছে, ৫৪ ধারার অপব্যবহার বন্ধের পক্ষে তারাও। একইসঙ্গে গায়েবি মামলা বন্ধের পাশাপাশি সভা-সমাবেশে মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ এবং রিমান্ডে নির্যাতন বন্ধের সুপারিশও থাকবে কমিশনের প্রতিবেদনে।

পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য এ এস এম নাসিরউদ্দিন এলান বলেন, আলোচনার মধ্যে আমরা চেষ্টা করেছি এমন একটা সুপারিশ করতে পারি যাতে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত এবং জনগণের বন্ধু একটা পুলিশ দিতে পারি। জনমত জরিপকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই জমা দেয়া হবে।

তিনি বলেন, জরিপটা করেছিই জনগণের মতামত নেয়ার জন্য। মানুষ যে মতামতটা দিয়েছে সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তারা ভুক্তভোগী হয়েই মতামত দিয়েছে। এই কারণে তাদের মতামতের ওপর আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা আশা করছি, জানুয়ারির ৫ তারিখে মধ্যে একটা প্রতিবেদন তৈরি করতে পারবো।

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নের কাজ অন্তর্বর্তী সরকারকেই শুরু করতে হবে মনে করেন সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক।

তিনি বলেন, কাঠামোগত যে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে সেটার বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে। এর ফলাফল যখন মানুষ দেখতে শুরু করবে, তখন রাজনৈতিক দলের সরকার এলে তাদের জন্যও ধারাবাহিকতা বজায় রাখার একটা চাপ তৈরি হবে।

পাকিস্তান তালেবানের হামলায় ১৬ সেনা নিহত

আফগানিস্তান সীমান্তের কাছে পাকিস্তান তালেবানের হামলায় অন্তত ১৬ সেনা নিহত হয়েছেন। পাকিস্তানের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিহতের পাশাপাশি আরও পাঁচজন আহত হয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাকিস্তানের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যম এএফপিকে জানিয়েছেন, তিন দিক থেকে সেনাদের তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালানো হয়। যা প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলে।

তিনি বলেছেন, হামলায় ১৬ জন নিহত হয়েছেন ও পাঁচজন মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। এ সময় জঙ্গীরা সেনাবাহিনীর বিভিন্ন সরঞ্জাম জ্বালিয়ে দেয়।

অন্য এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের মাকিন এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে, যা আফগানিস্তান সীমান্ত থেকে ৪০ কিলোমিটার ভেতরে।

পাকিস্তান তালেবান এক বিবৃতি দিয়ে এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। জানিয়েছে, তাদের শীর্ষ কমান্ডারদের হত্যার বদলা নিতেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইয়েমেন।

ইসরায়েলের তেল আবিব শহরে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইয়েমেন। তেল আবিবের একটি পার্কে ক্ষেপণাস্ত্রটি আঘাত করেছে। আজ শনিবার আল–জাজিরার খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ইসরায়েলের মাগেন ডেভিড অ্যাডম অ্যাম্বুলেন্স সংস্থা বলেছে, হামলায় কমপক্ষে ১৪ জন আহত হয়েছেন। স্বাস্থ্যকর্মীরা বলেছেন, কেউই গুরুতর আহত হননি। ভাঙা কাচের আঘাতে অনেকে আহত হয়েছেন।

এর আগে ফিলিস্তিনের শেহাব ও কুদস সংবাদ সংস্থা বলেছে, এই হামলায় কমপক্ষে ১১ জন আহত হয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ইসরায়েলি পুলিশ বলেছে, হামলাস্থলে পুলিশ ও বোমাবিশেষজ্ঞ দল কাজ করছে। এলাকাবাসীকে নিরাপদে থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে ইয়েমেনের ‘সামরিক স্থাপনায়’ হামলা চালানোর কথা জানায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। হুতি বিদ্রোহীদের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পাল্টা হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল।

ইয়েমেনের সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, হামলায় কমপক্ষে নয়জন নিহত হয়েছেন। এই হামলার জবাবে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হবে বলে হুমকি দেয় হুতিরা।

পুরুষ যখন বাবা হন, তখন তাদের কী ধরনের পরিবর্তন ঘটে

নারীরা যখন মা হন তখন তাদের মধ্যে স্পষ্টতই অনেক ধরনের শারীরিক পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু পুরুষরা যখন বাবা হন তখন তাদের দেহেও যে কিছু পরিবর্তন ঘটে। সেটা কি বাবারা উপলদ্ধি করতে পারেন?

‘একমাত্র যে শারীরিক পরিবর্তন আমি লক্ষ্য করেছি, সেটা হচ্ছে আমার ওজন বেড়ে গিয়েছিল। আমার শরীর হয়ে উঠছিল একজন পিতার শরীর,’ বলেন ছয় মাস বয়সী এক শিশু সন্তানের বাবা টম।

কিন্তু না, বাবা হলে যে শুধু পুরুষের ওজন কয়েক কেজি বেড়ে যায় তা নয়। এর বাইরেও আরো কিছু পরিবর্তন ঘটে।

“মা ও বাবা- দু’জনেই শারীরিকভাবে শিশুর পিতামাতা,” বলেন ড. আন্না মাশিন, যিনি পিতৃত্বের ওপর একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। বইটির নাম: ‘পিতার জীবন: একজন আধুনিক পিতা হয়ে ওঠা।’

‘পিতৃত্বের বিষয়ে এই উপলব্ধি নতুন এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়- অতীতে আমরা মনে করতাম যে শুধু নারীরাই শারীরিক পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যায়। কিন্তু আসলে সন্তানধারণ ও শিশুর জন্মদানের মতো বিষয়ে পুরুষের মধ্যেও একই ধরনের পরিবর্তন ঘটে থাকে,’ বলেন তিনি।

এটা ঠিক যে একজন পুরুষ নারীদের মতো নয় মাস ধরে তার পেটে সন্তানকে বড় করে না, তিনি সন্তান প্রসবও করেন না এবং সন্তানের জন্য তার দেহে দুধও উৎপন্ন হয় না।

কিন্তু তারাও একই ধরনের পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হয়, যা বাইরে থেকে খালি চোখে দেখা যায় না।

‘বড় ধরনের দুটো পরিবর্তন ঘটে। আপনি যখন প্রথমবারের মতো বাবা হবেন তখন আপনার দেহের হরমোন ও মস্তিষ্কে কিছু পরিবর্তন ঘটবে,’ ড. আন্না ব্যাখ্যা করেন।

হরমোনজনিত প্রভাব
হরমোনজনিত সবচেয়ে বড় যে পরিবর্তন ঘটে, সেটি হচ্ছে টেস্টোস্টেরন হরমোনের নিঃসরণ কমে যাওয়া। এটি পুরুষের সেক্স হরমোন।

‘সন্তান উৎপাদনের জন্য যৌনমিলনের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে। কারণ এই হরমোন আপনাকে সঙ্গীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার ব্যাপারে আপনাকে সক্রিয় ও উৎসাহিত করে তোলে,’ বলেন আন্না।

কিন্তু আপনি যখন বাবা হয়ে যান, তখন এই টেস্টোস্টেরন নিঃসরণের মাত্রা কমে গিয়ে বাবা হিসেবে নতুন ভূমিকা পালনের জন্য আপনার দেহকে প্রস্তুত করে তোলে।

‘যেসব পুরুষের দেহে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কম থাকে, তারা তাদের সন্তানের প্রতি অনেক বেশি স্পর্শকাতর ও সহানুভূতিশীল হয়। এর ফলে তারা তাদের সন্তানদের যত্ন নেয়ার ব্যাপারে অনুপ্রাণিত হয়।’

‘একজন শিশু যখন কাঁদতে শুরু করে, যেসব পুরুষের শরীরে উচ্চমাত্রা টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসৃত হয় তারা এতে বিরক্ত হয়। কিন্তু যাদের দেহে টেস্টোস্টেরণ কম থাকে তারা সন্তানের কান্নায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।’

সম্প্রতি প্রথমবারের মতো বাবা হয়েছেন মার্ক।, তিনি বলেন, ‘বাবা হওয়ার আগে আমার এক ছোট্ট ভাতিজা কাঁদতে শুরু করলে আমি ভাবতাম কেউ এসে ওকে সামলাতে পারবে কি না। কিন্তু যেই মুহূর্তে আমি নিজে বাবা হয়ে গেলাম, আমার সন্তান কাঁদতে থাকলে তাকে সামলানোর জন্য আমি নিজে কিছু করতে উদ্যোগী হয়ে উঠলাম।’

টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যাওয়ার কারণে বাবারা অনেক বেশি ধৈর্যশীল হয়ে ওঠে, যা একটি শিশুর জন্য বেশ সহায়ক।

“আমি এখন আর হতাশ হই না। সেদিন আমি গাড়িতে ছিলাম। আরেকজন একটা কাজ করছিল। কিন্তু সেই কাজটা করতে তার অনেক সময় লাগছিল। কিন্তু আমি বেশ শান্ত ছিলাম, ভেবেছিলাম ‘যাই হোক’। এধরনের বিষয় আমরা কাছে এখন আর খুব বড় কোনো বিষয় নয়,” বলেন মার্ক।

টেস্টোস্টেরনের নিঃসরণ কমে যাওয়ার ফলে বাবার সাথে সন্তানের সম্পর্কের ওপরেও এর একটা বড় ধরনের প্রভাব পড়ে।

‘টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বেশি হলে সেটা অক্সিটোসিন এবং ডোপামিনের ইতিবাচক প্রভাবকে আটকে দেয়,’ বলেন আন্না।

শিশু সন্তানের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে এই দু’টি রাসায়নিক পদার্থ পালন করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

আপনি যখন শিশু সন্তানকে জড়িয়ে ধরেন এবং তাদের সাথে মেলামেশা করেন অথবা কথাবার্তা বলেন তখন এই অক্সিটোসিন এবং ডোপামিন উৎপন্ন হয় যা আপনাকে চাঙ্গা করে তোলে।

‘আপনি যখন সবেমাত্র বাবা হন, তখন আপনার দেহে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কম থাকে। ফলে অক্সিটোসিন এবং ডোপামিনের প্রভাব খুব বেশি হয়। ফলে শিশু সন্তানের সাথে কথা বলা এবং তাদের সাথে খেলা করা আপনার জন্য অনেক বেশি আনন্দদায়ক হয়ে ওঠে।’

টমের নিয়মিতই এই অভিজ্ঞতা হচ্ছে, যখন সে (শিশু সন্তান) হাসে তখন আসলেই এর চেয়ে ভালো অনুভূতি আর কিছু হয় না, বলেন তিনি।

পরিবর্তনের এই সবটাই এরকম সুখকর নয়, সতর্ক করে দিয়েছেন আন্না। তিনি বলেন, ‘টেস্টোস্টেরন হরমোন পুরুষকে চাঙ্গা রাখে। এটি তাদের মানসিক অবস্থাকে খারাপ হতে দেয় না।’

‘কিন্তু যখন এই হরমোন কমে যায় এবং তার সঙ্গে ব্যক্তিগত ও কর্মজীবনের আরো কিছু ঝামেলা এসে যুক্ত হয় এবং স্ত্রী বা সঙ্গী প্রসব-পরবর্তী বিষণ্ণতায় ভোগেন, তখন পুরুষের মধ্যেও এই একই ধরনের বিষণ্ণতা দেখা দিতে পারে,’ বলেন তিনি।

আন্না বলছেন, শরীরের হরমোন এবং তাদের প্রভাব সম্পর্কে জানা থাকলে সেটা আমাকে মানসিকভাবে সুস্থ থাকার ব্যাপারে আরো বেশি সচেতন হতে সাহায্য করতে পারে।

‘একজন নারী হিসেবে আপনি ভাবতে পারেন যে আমি জানি যে আমার হরমোনের কারণেই এমনটা হচ্ছে, আমি যে এরকম খারাপ অনুভব করছি তার একটা কারণ আমার হরমোন, তখন এসব আপনাকে সাহায্য করতে পারে। আবার পুরুষরা যদি এটা জানেন যে হরমোনজনিত পরিবর্তন তাকে কখনো কখনো কিভাবে নাজুক ও অসহায় করে তুলতে পারে, তাহলে তারাও তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে পারবেন,’ বলেন তিনি।

বাবা ও সন্তান দু’জনের জন্যেই উপকারী
শিশু সন্তানের সাথে খেলা করা ও তাকে জড়িয়ে ধরার কারণে বাবার দেহে যে ডোপামিন ও অক্সিটোসিনের নিঃসৃত হয় তার ফলে তাদের দেহে যে ধরনের পরিবর্তন ঘটে তাতে শিশু ও বাবা দু’জনেই লাভবান হয়।

বাবার মতো এই একই রাসায়নিকের নিঃসরণ ঘটে শিশুদের শরীরেও।

ফলে তারা দু’জনেই একেবারে শুরু থেকে স্পর্শ, জড়িয়ে ধরা এবং মাসাজ ইত্যাদির মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে তোলার কাজটা শুরু করতে পারেন।

সন্তান বড় হওয়ার সময় তাদের দেহে সবচেয়ে বেশি অক্সিটোসিন নিঃসৃত হয়। ফলে পিতার সাথে তাদের সম্পর্ক তখন আরো বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে।

‘কোনো বাবা যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন যে আমার সন্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে হলে আমাকে কী করতে হবে?, আমি তাকে বলব তাদের সঙ্গে খেলা করুন,’ বলেন আন্না।

‘দারুণ ব্যাপার হচ্ছে শিশু ও বাবার মধ্যে এই পরিবর্তন ঘটছে যা দু’জনের সঙ্গেই জড়িত এবং দু’জনের ওপরেই তার প্রভাব পড়ছে। যখন তারা একসঙ্গে খেলা করে তখনই তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অক্সিটোসিন নিঃসৃত হয়।’

আন্না বলছেন, শিশুর বিকাশের জন্য তার সঙ্গে বাবার শারীরিকভাবে খেলাধুলা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে যে আপনার সন্তানের দেহে প্রচুর পরিমাণে অক্সিটোসিনের নিঃসরণ ঘটবে শুধু তাই নয়, এর ফলে তারা বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার করার উপায়ও শিখতে পারবে। তারা শিখতে পারবে পড়ে গেলে কিভাবে উঠে দাঁড়াতে হয় এবং একবার ব্যর্থ হলে সেটা কাটিয়ে ওঠে কিভাবে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হয়। এবং যেসব শিশু এধরনের খেলায় অংশ নেয়, তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেক বেশি অদম্য ও অপরাজেয় হয়ে ওঠে, যেকোনো খারাপ অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকে।

“অতীতে বাবাদের ‘ফান প্যারেন্ট’ হিসেবে দেখা হতো যারা শিশুদের চকলেটসহ নানা জিনিস উপহার দিতেন। কিন্তু শিশুদের বিকাশের জন্য তাদের সঙ্গে খেলাধুলা করা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ।”

মস্তিষ্কে ইতিবাচক পরিবর্তন
আপনি যখন একজন বাবা হবেন তখন হরমোনের মাত্রায় পরিবর্তনের পাশাপাশি আপনার মস্তিষ্কেও কিছু শারীরিক পরিবর্তন ঘটে।

‘শিশু সন্তানকে ভালো মতো দেখাশোনা করার জন্য আমাদের মস্তিষ্কের যে অংশের প্রয়োজন হয় সেসব জায়গায় পরিবর্তন ঘটে,’ বলেন আন্না।

‘একটা উদাহরণ দেয়া যাক- আউটার ব্রেইন বা বহির্মস্তিষ্কের কিছু অংশ বেড়ে যায়। পরিকল্পনা, মনোযোগ দেয়া এবং সমস্যা সমাধানের মতো দক্ষতার জন্য মস্তিষ্কের এই অংশের প্রয়োজন হয়। আর মস্তিষ্কের অবচেতন অংশে (আনকনশাস ব্রেইন) আমরা সেসব জায়গায় তৎপরতা দেখতে পাই যেগুলো শিশু প্রতিপালন এবং ঝুঁকি চিহ্নিত করার জন্য প্রয়োজন হয়। আপনার শিশু নিরাপদে আছে কি না সেটা জানার জন্য এগুলোর প্রয়োজন নয়।’

টম নিজেও এই পরিবর্তনটা স্পষ্ট বুঝতে পারছেন। ‘আপনি সবসময় উদ্বিগ্ন বোধ করছেন। আর কিছু না হলেও এই উদ্বেগ আগের চাইতে বেশি। আমি যখন সন্তানকে নিয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাই, তখন পেছনে তাকিয়ে দেখি কোনো গাড়ি আমার দিকে চলে আসছে কি না!’

একই সাথে আপনি ঝুঁকির ব্যাপারেও অনেক বেশি সচেতন হয়ে উঠছেন। বাবারা প্রায়ই স্পর্শকাতর হয়ে ওঠেন, বিশেষ করে তার সন্তানের বিষয়ে।

‘অন্যের দুঃখ কষ্টের ব্যাপারে আপনি আরো বেশি সংবেদনশীল এবং তাদের প্রতি আরো বেশি সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠেন,’ বলেন আন্না।

‘আমি অনেক বাবার সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলবে - শিশুদের ব্যাপারে যেসব খবর দেখানো হয় আমি আর সেগুলো দেখতে পারি না।’

টমের বেলাতেও তাই হয়েছে। ‘আমার খুব কান্না পায়। এটা আমাকে আগে প্রভাবিত করত না, কিন্তু এটা সত্যিই আমার ওপর প্রভাব ফেলছে,’ বলেন তিনি।

জ্ঞানই শক্তি
আন্না আশা করছেন যে শারীরিক এই পরিবর্তনের ব্যাপারে জানতে পারলে, বাবা হিসেবে পুরুষের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে।

“পুরুষদের কাছ থেকে আগে আমি এই কথাটা প্রচুর শুনতে পেতাম যে তারা মনে করে শিশু লালন-পালনের ক্ষেত্রে মা-ই হচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড। যেহেতু তিনি গর্ভধারণ করেছেন, শিশুর জন্ম দিয়েছেন, দুগ্ধ-পান করিয়েছেন, তাই তিনিই ভালো জানেন যে শিশুর জন্য কী করতে হবে, এটা তার সহজাত প্রবৃত্তি। কিন্তু পুরুষদের এসব শিখতে হয়। এসব সত্য নয়। নারী ও পুরুষ দু’জনেই পিতামাতা হিসেবে একই ধরনের সহজাত প্রবৃত্তির অধিকারী। কারণ সন্তান জন্মদানের সময়ে তাদের দু’জনকেই শারীরিক পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যেতে হয়।”

বাবাদের জন্য তার কিছু পরামর্শ আছে, ‘আপনার মধ্যেও সহজাত প্রবৃত্তি আছে, এ বিষয়ে আপনাকে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। আপনিও নিজেকে সন্তানের মায়ের সহকারী হিসেবে না দেখে নিজেকেও তার মায়ের মতো একই ধরনের ব্যক্তি হিসেবে দেখার চেষ্টা করুন। তার কাছে থাকে এবিষয়ে আপনি অনেক কিছু শিখতে পারবেন।’